,

নবীগঞ্জে কলেজ ছাত্রী তন্নীর লাশ উদ্ধার নিয়ে তোলপাড় : থানায় মামলা : সন্দেহভাজন আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান : বাড়ীতে তালা ঝুলিয়ে প্রেমিক রানুর পরিবার পলাতক

উত্তর কুমার পাল হিমেল/মতিউর রহমান মুন্না/জসিম তালুকদার ॥ নবীগঞ্জের শাখা বরাক নদী থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধারকৃত কলেজ ছাত্রী তন্নী রায়ের লাশ ময়না তদন্ত শেষে গতকাল বুধবার বিকালে জয়নগর শশ্মানঘাটে মাটি চাপা দেয়া হয়েছে। ঘটনার পর থেকে নিহত তন্নী রায়ের পরিবারসহ শ্যামলী ও শিবপাশা আবাসিক এলাকায় চলছে শোকের মাতম। এঘটনায় গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টায় নিহত তন্নী রায়ের পিতা বিমল রায় বাদী হয়ে নবীগঞ্জ থানায় অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। তন্নী নিখোঁজের পর থেকেই পুলিশ নিহত তন্নীর মোবাইল কল লিস্ট সংগ্রহ সহ জোর তদন্ত শুরু করেছে। সন্তেহজনক আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে কয়েকদিনের মধ্যেই নির্মম এ হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হবে বলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মোবারক হোসেন জানিয়েছেন। এদিকে বুধবার তন্নীর প্রেমিক রানু রায়ের বাড়ির ফটকে তালা ঝুলিয়ে পরিবারের অন্য সদস্যরা লাপাত্তা হয়েছেন। কলেজ ছাত্রী তন্নী রায়ের নির্মম হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের গ্রেফতার পুর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করেছেন হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনের সংসদ সদস্য এম এ মুনিম চৌধুরী বাবু, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট আলমগীর চৌধুরীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ। স্থানীয় ও পুলিশ সুত্রে জানা যায়, গত শনিবার বেলা দেড়টার দিকে তন্নী রায় ইউ.কে আই,সিটি কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বেড় হয়ে আর ফেরেনি। এব্যাপারে নবীগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরী করার ৩ দিনের মাথায় কলেজ ছাত্রী তন্নী রায়ের বস্তাবন্দি লাশ নবীগঞ্জ পৌর এলাকার গরমুলিয়া ব্রীজের নিচ থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। এব্যাপারে নবীগঞ্জ ইউ.কে আইসিটি ইন্সটিটিউটের অধ্যক্ষ ফয়ছল আহমেদ চৌধুরীর সাথে কথা বলে জানা যায়, ৩ মাসের কম্পিউটার র্কোসে তন্নী রায় বিগত ২৭ জুলাই ভর্তি হয় ওই সেন্টারে। সপ্তাহে ২/৩ দিন ক্লাস করতো তন্নী রায়। সর্বশেষ ১০ সেপ্টেম্বর ক্লাশ করে তন্মী। গত ১৭ সেপ্টেম্বর আইসিটি সেন্টারে ক্লাশ করার কথা বলে বাসা থেকে বের হলেও তন্নী রায় ওই দিন ক্লাশে যায়নি বলে জানান অধ্যক্ষ। এব্যাপারে অফিসার ইনর্চাজ মোঃ বাতেন খান বলেন, গতকাল মঙ্গলবার বিকাল ৩টার দিকে মোবাইল ফোনে সংবাদ পেয়ে সঙ্গীয় অফিসার ও ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে যাই। অনুমান ৩ দিন বা অধিক সময়ের শরীরে ফোলা, পচন ও মূখমন্ডল বিকৃত অবস্থায় মৃতদেহ দেখতে পেয়ে তার পরিবার-পরিজন ভাই ও বাবার সনাক্তমতে ছুরতহাল রির্পোট তৈরীসহ আলামত জব্দ করা হয় এবং ময়না তদন্তের ব্যবস্থা করা হয়। এসময় মেযেটির নাম তন্নী রায় পিতা বিমল রায়, পৌরসভার শ্যামলী আবাসিক এলাকার বাসিন্দা ও নবীগঞ্জ ডিগ্রী কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেছে বলে জানা যায়। উক্ত তন্মী রায় গত ১৭ সেপ্টম্বর দুপুরে নবীগঞ্জ ইউ.কে আইসিটি ইন্সটিটিউটে কম্পিউটার প্রশিক্ষনের কথা বলে বাসা থেকে বের হয়ে আর ফিরে না আসায় তার পিতা থানায় নিখোঁজ সংক্রান্ত জিডি করেন। উক্ত জিডির প্রেক্ষিতে পুলিশ আইনানুগ কার্যক্রম গ্রহনকালে মঙ্গলবার উল্লেখিত সময় ও স্থান থেকে তন্নীর লাশ উদ্ধার করা হয়। তিনি বলেন, নিঃসন্দেহে এটা একটি নির্মম হত্যাকান্ড। প্রেম সংক্রান্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা সংঘটিত হতে পারে বলেও ধারনা করেন তিনি। তিনি বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে হত্যাকারী যেই হউক তদন্ত সাপেক্ষে সন্ধিগ্ন ও জড়িতদের গ্রেফতারসহ প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এব্যাপারে সকলের সহযোগিতা কামনাও করেন তিনি। হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনের সংসদ সদস্য এম এ মুনিম চৌধুরী বাবু তন্মী রায়ের নির্মম হত্যাকারীদের খোঁজে বের করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। অপরদিকে গতকাল বুধবার মহিলা এমপি আমাতুল কিবরিয়া চৌধুরী কেয়া, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট আলমগীর চৌধুরী নিহত কলেজ ছাত্রী তন্মী রায়ের বাসায় গিয়ে নিহতের পিতা-মাতা, ভাইসহ স্বজনদের শান্তনা দেন। এসময় তারা তন্নী রায়ের নির্মম হত্যাকারীদের খোঁজে বের করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান। এদিকে মামলার বাদি নিহত তন্নীর পিতা বিমল রায় মামলায় কাউকে নির্দিষ্ট করে আসামী না করলেও মামলার অভ্যন্তরে তন্নীর প্রেমিক রানু রায় এবং ২০১০ইং সালে তার মেয়েকে ইভটিজিংকারী আঞ্জব আলী ও আলকাছ এর নাম উল্লেখ করেছেন।


     এই বিভাগের আরো খবর