,

নবীগঞ্জের কলেজ ছাত্রী তন্নী হত্যা মামলা : প্রেমিক রানুর গ্রামের বাড়ি পুকড়ায় পুলিশের অভিযান

মতিউর রহমান মুন্না ॥ নবীগঞ্জে কলেজ ছাত্রী তন্নী রায়ের লাশ উদ্ধারের ৫ দিন অতিবাহিত হলেও হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনে কোন কুল কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে রানু রায় স্বপরিবারে লাপাত্তা থাকায় গ্রেফতার করতে পারছে না পুলিশ। এনিয়ে চরম হতাশা দেখা দিয়েছে জনমনে। গতকাল শনিবার রানু রায়ের গ্রামের বাড়ি বানিয়াচং উপজেলার পুকড়া গ্রামে অভিযান চালায় পুলিশ। অপরদিকে গতকাল শনিবার বিকালে হবিগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার সাজিদুর রহমান জয়নগর এলাকায় বিভিন্নস্থানে অভিযান পরিচালনা করেন। পরে সন্ধ্যায় নিহত তন্নীর বাসায় গিয়ে তার মা-বাবাসহ স্বজনদের সাথে কথা বলেন। এদিকে মেধাবী কলেজ ছাত্রী তন্নী রায় হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের আগামী ৭২ ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতারের জন্য আল্টিমেটাম দিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ। নিহত তন্নী ও সন্দেহভাজনদের মোবাইল ফোনের কল লিষ্টের সূত্র ধরে ইতিমধ্যেই অনেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কিন্তু লাগছেনা কোন কিনারা। ঘরের তালা ভেঙ্গে পুলিশ প্রেমিক রানু রায়ের বাড়ি থেকে হত্যায় ব্যবহৃত সরঞ্জামও উদ্ধার করেছে। এখন রানু রায়কে আটক করতে পারলেই মূল রহস্য বেড়িয়ে আসবে বলে দাবী সচেতন মহলের। তন্নীর সাথে রানুর ৩দিনে ৪শত বার কলের হিসাব মিলেছে। এছাড়াও অন্যান্য নাম্বারগুলোও যাচাই করা হচ্ছে। বিভিন্নজনের মতে নিহত তন্নী রায়ের পিতা বিমল রায়ের আচরনেও নানা প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। সূত্রে প্রকাশ, তন্নী রায় ও রানু রায়ের প্রেমের সম্পর্কের ব্যাপারে অবগত ছিলেন উভয় পরিবার। নিখোঁজের দিন ১৭ সেপ্টেম্বর শনিবার দুপুর ১:১৩ মিনিটে তন্নীর এয়ারটেল মোবাইল নাম্বারে প্রেমিক রানু রায় ফোন দিয়ে কথা বলে কয়েক মিনিট। এর পর ১:৫০ মিনিটে তন্নী বাসা থেকে বেড়িয়ে যায়। ধারনা করা হচ্ছে প্রেমিকের ডাকে সাড়া দিতেই তন্নী বাসা থেকে বেড় হয়ে যায়। যদিও বাসায় বলে যায় ইউকে আইসিটিতে কম্পিউটার ক্লাস করতে যাচ্ছে। সময় কয়েক ঘন্টা চলে যায়। ৫ টার পর তন্নীর পিতা বিমল রায় ইউকে আইসিটি কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে তারা জানায় তন্নী ক্লাসে উপস্থিত ছিল না, যা একাধিক সূত্রে নিশ্চিত। মেয়ের কোন সন্ধান নেই তখনও খোঁজ নেওয়া হয় প্রেমিক রানু রায়ের বাড়িতে। কিন্তু পাওয়া যায়নি। অতঃপর রাত ৯ টায় নবীগঞ্জ থানায় মেয়ে নিখোঁজের ব্যাপারে একটি সাধারণ ডায়েরী করেন তিনি। তদন্ত মোতাবেক পুলিশ ওই দিনই বিভিন্ন সুত্রধরে রানু রায়’কে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের উদ্যোগ নেয়। এসময় বাধা প্রদান করে ডায়েরীতে স্বাক্ষরকারী নিখোঁজের পিতা বিমল রায়। এর কারণ হিসেবে তিনি মানসম্মানের দিক বিবেচনা করেন বলে সুত্রে জানা গেছে। মেয়ের নেই কোন খোঁজ কিন্তু মানসম্মান দিক বিবেচনা করার কি দরকার ছিল। তখন সময়ই রানুকে আটক করলে ওই দিনই তন্নীর হসিদ মিলত বলে মনে করেন অনেকেই। তবে কে জানতো ভালবাসার মূল্য দিতে গিয়ে কলেজ ছাত্রী তন্নী রায়কে এমন নির্মম বলির শিকার হতে হবে। স্থানীয় অনেক লোক জানিয়েছেন, শনিবারে তন্নী রায়কে জয়নগর রোডে রানুর বাড়ির দিকে যেতে দেখেছেন। কললিষ্ট সুত্রে জানা যায়, কলেজ ছাত্রী তন্নী নিখোঁজের আগের দিন অর্থাৎ ১৬ই সেপ্টেম্বর রাতে রানু রায় তন্নীর সাথে প্রায় ৪৫ মিনিটেরও বেশী সময় কথা বলেন। সর্বশেষ তন্নীর মোবাইল নম্বারে প্রেমিক রানু রায় ১৭ সেপ্টেম্বর দুপুর ১.১৩ মিনিটে ফোন দিয়ে কথা বলে। যেহেতু কল লিষ্টে এমন তথ্য মিলেছে, তাই ওই সময়ের আলাপকৃত ভয়েস (রেকর্ড) পর্যালোচনা করা প্রয়োজনের দাবী বিজ্ঞ মহলের। এছাড়া তন্নীর ঘনিষ্ট বান্ধবী কান্তা রায়ের ভাষ্য মতে প্রেমিক রানু রায় তন্নীর অন্য কারো সাথে সম্পর্ক রয়েছে এমন সন্দেহ করে আসছিল। তন্নীর ঘনিষ্ট বন্ধবী কান্তার ভাষ্য ও তন্নীর একাধিক প্রেমের বিষয় নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে জনমনে। একটি সূত্র জানায়, রানুর সাথে দীর্ঘদিন ধরে তন্নীর প্রেম চলছে। এ অবস্থায় আরো অনেক ছেলে তন্নীকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছে যদিও তন্নী এসব প্রস্তাব প্রত্যাখান করেনি। পেন্ডিং রেখে দেয় এসব প্রস্তাাব। তন্নী হত্যার এটা একটা বিষয়। অপর একটি সূত্রমতে ইনাতগঞ্জের এক ছেলের সাথে তন্নীর সর্ম্পকের কিছু অভিমত ছিল। যদিও এর সঠিক তথ্য মিলেনি। এছাড়াও শহর জুরে আরো একাধিক ছেলের নাম রয়েছে আলোচনায়। এসব প্রেমিকও হত্যার একটি কারণ হতে পারে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। কান্তার ভাষ্য মতে রানু তন্নীকে মোবাইল দিয়েছে। এতো দিনের প্রেম এবং তার দেয়া মোবাইল দিয়ে অন্য ছেলের সাথে কথা বলবে বিষয়টি হয়তো স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারেনি প্রেমিক রানু। ধারনা করা যাচ্ছে, এসব কারনেই রানু রায় তন্নী রায়কে ফোনে ১৭ সেপ্টেম্বর দুপুরে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যায়। যা কল লিষ্ট অনেকটা প্রমান করে। অন্যদিকে অনেকে মনে করছেন ৩য় কোন পক্ষ তন্নী রায়’কে পাশবিক নির্যাতনের পর শ্বাসরোদ্ধ করে হত্যা করে লাশ গুম করার জন্য বরাক নদীতে ফেলে দেয়। তন্নী হত্যা মামলার তদন্তে অগ্রগতি ও জড়িতদের গ্রেফতারে জোরালো ভূমিকা রাখার আহবান সচেতন মহলের। ইতিমধ্যে হত্যাকারীদের গ্রেফতার পূর্বক শাস্তির দাবীতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে একাধিক সামাজিক সংগঠন। এমনিক খুব শিঘ্রই এ মামলার কোন কিনারা না লাগলে জোরে শোরে আন্দোলনে মাঠে নামার হুশিয়ারী দিয়েছেন নবীগঞ্জের সচেতন সমাজ।


     এই বিভাগের আরো খবর