,

হবিগঞ্জ পৌরসভার নিত্যদিনের বর্জ্যরে গন্তব্য কোথায় ! ডাম্পিং স্পট না থাকায় চরম সংকটের মুখোমুখি হবিগঞ্জ পৌরসভা ॥ পরিবেশ বিপর্যয়ের আশংকা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জ শহরের বর্জ্য অপসারনের ডাম্পিং স্পট না থাকায় চরম সংকটের মুখোমুখি হয়েছে হবিগঞ্জ পৌরসভা। ডাম্পিং স্পট না থাকায় একদিকে যেমন ইউজিপ-৩ প্রকল্পের চাহিদা পুরনে হবিগঞ্জ পৌরসভা পড়বে অনিশ্চিয়তার আশংকায় অন্যদিকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় প্রতিবন্ধকতার কারনে পরিবেশ পড়বে বিপর্যয়ের মুখে। তেমনটি হলে হবিগঞ্জ পৌরসভা বঞ্চিত হবে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ হতেও। হবিগঞ্জ পৌর এলাকায় প্রতিদিন গৃহস্থালী, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, হাসপাতাল-ক্লিনিক, শিল্প-করখানা ইত্যাদির ব্যাপক পরিমান বর্জ্য উৎপন্ন হয়। বর্জ্য অপসারণ ছাড়া একদিনও চলতে পারে না নাগরিক জীবন। এ বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে হবিগঞ্জ পৌরসভার বর্জ্য অনেকটা বাধ্য হয়েই কিবরিয়া মিলনায়তনের পিছনে বাইপাস সংলগ্ন স্থানসহ পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে ডাম্পিং করা হচ্ছে বলে পৌরসভার দাবী। তবে এসকল এলাকায় বর্জ্য অপসারন ঠিক নয় এবং অবিলম্বে বিকল্প স্থান বের করা প্রয়োজন বলে মনে করছে পৌর প্রশাসন। হবিগঞ্জ পৌরসভার বড় সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে বর্জ্য অপসারনের ডাম্পিং স্পটের অভাব। মূলত আবর্জনা অপসারনের নির্ধারিত কোন ডাম্পিং সাইট নেই হবিগঞ্জ পৌরসভার। হবিগঞ্জ পৌরসভায় এ সমস্যা বিরাজ করছে দীর্ঘদিন ধরে। অথচ ৯ দশমিক ০৫ বর্গকিলোমিটার আয়াতনের এ পৌরসভায় বর্জ্য উৎপন্ন হচ্ছে আবাসিক বাসা-বাড়ী, দোকান-পাট, অফিস-আদালত, হাট-বাজার, ক্লিনিক হাসপাতাল, মার্কেটসহ অন্যান্য স্থাপনা ও জনসমাগম অঞ্চল হতে। হবিগঞ্জ পৌরসভার সিডিসি ফেডারেশনের ২১ টি ভ্যানগাড়ী প্রতিদিন বাসা-বাড়ী ও দোকান-পাট হতে বর্জ্য সংগ্রহ করে। এছাড়া পৌরসভার নিয়মিত পরিচ্ছন্নতাকর্মীগন পৌর এলাকার ৯ টি ওয়ার্ডে ভাগ হয়ে প্রতিদিন পরিচ্ছন্নতা কাজ করছে। পৌরসভার রাতের বেলার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরাও প্রতিদিন ড্রেন পরিস্কারসহ অন্যান্য পরিচ্ছন্নতা কাজে নিয়জিত। প্রতিদিন পৌরসভার দুটি ট্রাক শহরের ডাস্টবিন, রাস্তার পাশের আবর্জনার স্তুপ ইত্যাদি অপসারন করে। কিন্তু দীর্ঘদিন যাবত একটি ডাম্পিং স্পটের অভাবে পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংকটের মুখে পড়েছে। প্রকৃতপক্ষে ডাম্পিং সাইটের অভাবে এই সকল বর্জ্য দীর্ঘদিন যাবত এমন কিছু ডোবা ও নিম্নাঞ্চলে অপসারন করা হয়েছে যা মোটেও উপযুক্ত স্থান নয়। যেমন শ্মশানঘাট রোডের পাশে, কালীগাছতলা বাইপাস রোডের পাশে, কিবরিয়া মিলনায়তনের পাশে, নতুন ষ্টেডিয়ামের সামনে বাইপাসের পাশে, কিবরিয়া ব্রীজের পাশে ইত্যাদি। কিন্তু বর্তমানে এসব স্থানে আবর্জনা ফেলার কোন স্থান অবশিষ্ট নেই। তাছাড়াও বসতি ও স্থাপনা গড়ে উঠায় এ সকল এলাকাতে বর্তমানে পৌরসভার বর্জ্য অপসারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। ২০১৩ সালে হবিগঞ্জ পৌরসভার প্রস্তাব অনুযায়ী জেলা প্রশাসন শহরের অদুরে কালারডুবার পাশে আতুকুড়া মৌজার অধীন ও বানিয়াচং উপজেলাধীন ২.২০ একর খাস জমি ডাম্পিং স্পটের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করে। ওই বছরের ১৭ নভেম্বর হবিগঞ্জ পৌরসভা আবেদনকৃত জমি ১৭ লাখ ৪৭ হাজার ৯৪৪ টাকা সেলামীর মাধ্যমে ডাম্পিং স্পটের জন্য অধিগ্রহণ করে। হবিগঞ্জ পৌরসভা ওই ডাম্পিং সাইটে অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য একাধিকবার চেষ্টা করেও স্থানীয় জনগনের বাধার মুখে পিছু হঠে। এব্যাপারে হবিগঞ্জ পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র দীলিপ দাসের সাথে আলাপ করলে তিনি জানান ‘ডাম্পিং সাইট না থাকায় বর্জ্য অপসারনে সৃষ্ট সংকটের কথা একাধিকবার জেলা আইন-শৃংখলা কমিটির সভায় উত্থাপন করেছি। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে আলোচনাও হয়েছে। কিন্তু স্থানীয়দের বিরোধীতার কারনে প্রস্তাবিত স্থানে ডাম্পিং সাইট বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না।’ তিনি বলেন ‘প্রস্তাবিত স্থানে ডাম্পিং স্পট বাস্তবায়নে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনের জন্য একদিকে যেমন হবিগঞ্জ পৌরসভার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে তেমনি বিকল্প কোন ডাম্পিং স্পট বের করারও চেষ্টা চলছে।’ দীলিপ দাস বলেন ‘প্রতিদিন আমাদেরকে শহরের বর্জ্য অপসারন করতে হয়। কিন্তু সে বর্জ্য অপসারনের কোন ডাম্পিং স্পট না থাকায় সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। বাইপাস বা অন্য কোন স্থানে আবর্জনা অপসারন করতে গেলে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের লাঞ্চিতও করা হয়।’ হবিগঞ্জ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মধুসুদন দাস বলেন ‘প্রস্তাবিত স্থানের দখল না পাওয়ায় ডাম্পিং সাইট বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, সৃষ্ট জটিলতার কথা ইউজিপ-৩ প্রকল্প কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’ ইউজিপ-৩ এর কমিউনিটি মোবিলাইজার লালন শেখ বলেন ‘প্রকল্পের চাহিদা পুরনে ডাম্পিং স্পট প্রয়োজন। তাই ডাম্পিং স্পট না থাকার কারনে প্রকল্পের চাহিদা পুরনে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।’ এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা হবিগঞ্জের সাধারন সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, ‘হবিগঞ্জ পৌরসভার বর্জ্য অপসারনের জন্য জায়গা দরকার। তবে পরিবেশ, প্রতিবেশের উপর নজর রেখে আধুনিক পদ্ধতিতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহনের জন্য প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের অবিলম্বে এগিয়ে আসা প্রয়োজন।


     এই বিভাগের আরো খবর