,

শিক্ষা অফিসার পারভীন বহাল তবিয়তে ॥ জনমনে প্রশ্ন ? আর কত রক্ত ঝরলে তিনি বাহুবলের মায়া ছাড়বেন!

বাহুবল প্রতিনিধি ॥ বাহুবল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সামছুন্নাহার পারভীন বহাল তবিয়তে আছেন। গতকাল রোববারও তিনি উপজেলার মিরপুরে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। গত ১৯ অক্টোরব তার ঘুষ-দুর্নীতির প্রতিকার চেয়ে ইউএনওকে স্মারকলিপি দিতে গিয়ে পুলিশের সাথে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েডিএনআই মডেল হাইস্কুলের শিক্ষার্থীরা। এতে ৫ জন গুলিবিদ্ধসহ ৩০ ছাত্র-জনতা আহত হয়। দু’শিক্ষক সহ কয়েক ছাত্রকে ধরে নিয়ে পুলিশ বেদড়ক মারধোর করে। প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা থানা ঘেরাও করে ভাংচুর করে। এত কিছুর পরও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সামছুন্নাহার পারভীন স্বপদে বহাল থাকায় জনমনে নানা প্রশ্ন জন্ম এবং বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে আবারও মাঠ উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, তাহলে আর কত রক্ত ঝরিয়ে বিদায় নেবেন সামছুন্নাহার পারভীন! সূত্র জানায়, বিগত ২০১২ সনের ২১ অক্টোবর সামছুন্নাহার পারভীন মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে বাহুবল উপজেলায় যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকেই তিনি অত্র উপজেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির সাথে সখ্যতা গড়ে তোলেন। ওইসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে তিনি অবৈধ ও বেআইনী সুবিধা গ্রহণ করে তাদের নানা সুবিধা দিয়ে আসছেন। সম্প্রতি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় বিহীন উপজেলায় একটি করে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। উপজেলা সদরে অবস্থিত অপেক্ষাকৃত সেরা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজের তালিকা প্রেরণের জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে দায়িত্ব দেয় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। কিন্তু তিনি সে সময় উপজেল সদরের কলেজের সাথে ৬ কিলোমিটার দূরবর্তী স্থানে অবস্থিত অপর একটি কলেজের নামও প্রেরণ করেন। এ বিষয়টি জানা জানি হওয়ার পর বাহুবল কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তার বিরুদ্ধে মহাসড়কে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে। এদিকে, সম্প্রতি সরকার পাঁচটি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত ছক মোতাবেক তথ্য চেয়ে পত্র দিলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার উপজেলা সদরের ডিএনআই মডেল হাই স্কুলকে পেছনে পেলে ৭ কিলোমিটার দূরবর্তী স্থানে অবস্থিত একটি বিদ্যালয়কে সেরা উল্লেখ করে প্রতিবেদন দেন। এ খবর প্রচার হলে উপজেলা সদরের ছাত্র, শিক্ষক ও অভিভাবকদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় গত ১৯ অক্টোবর দুপুরে উপজেলা সদরে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী ডিএনআই মডেল হাইস্কুলের ছাত্রছাত্রী ও ম্যানেজিং কমিটি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সামছুন্নাহার পারভীন-এর বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ তোলে কার্যালয় ঘেরাও ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে স্মারকলিপি প্রদান করে। ঘেরাও কর্মসূচি চলাকালে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কার্যালয় লক্ষ্য করে জুতা নিক্ষেপ করে। এক পর্যায়ে বাহুবল মডেল থানার এক এসআই ক্ষিপ্ত হয়ে কয়েক ছাত্রকে চড়-থাপ্পর মারেন। এতে ছাত্ররা আরো বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল হাই ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফুল ইসলামের তাদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। এ সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার উপর মহলের সাথে যোগাযোগ করে বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা তোমাদের সকল দাবি মেনে নিচ্ছি। ডিএনআই মডেল হাইস্কুল জাতীয়করণ করা হবে, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সামছুন্নাহার পারভীনকেও অপসারণ করা হবে। তোমরা তোমাদের কাশরুমে ফিরে যাও। এ আশ্বাস পাওয়ার পর শিক্ষার্থীরা শ্লোগান দিতে দিতে বিদ্যালয়ে ফিরে আসছিল। এ সময় মডেল থানার সামনে পুলিশের সাথে শিক্ষার্থীদের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ মিছিলকারীদের উপর বেদড়ক লাঠিচার্জ করে এবং দুই শিক্ষকসহ কয়েক শিক্ষার্থী ধরে নিয়ে মারধোর করে। এতে অবস্থায় শিক্ষার্থীরা থানা ঘেরাও করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে জবাবে পুলিশ গুলি ও টিআর গ্যাস নিপে করে পাল্টা জবাব দেয়। এতে উল্লেখিত সংখ্যক ছাত্র-জনতা আহত হয়। বিকেলে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে এসে আটককৃতদের ছেড়ে দেন এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের খুশি করেন। পরে তিনি গত ২৬ অক্টোবর ডিএনআই হাইস্কুলে এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হন। এদিকে, উল্লেখিত ঘটনায় আহতদের তস্থান শুকানোর আগেই গতকাল রোববার দুপুরে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সামছুন্নাহার পারভীন মিরপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজে জেএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। এ খবর জানাজানি হলে অনেকেই তার শেষ অবস্থা সম্পর্কে খোজখবর নিতে শুরু করেন। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, রোববার পর্যন্ত মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সামছুন্নাহার পারভীন স্বপদে বহাল আছেন। এ অবস্থায়, এ নিয়ে জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। আহতদের সাথে আলোচনা করে জানা গেছে, যার কারণে স্থানীয় শিক্ষার্থী ও পথচারীদের তাজা রক্ত ঝরেছে তাকে কেউ এ উপজেলায় দেখতে চায় না। তাদের কেউ কেউ প্রশ্ন তোলেছেন, আর কত রক্ত ঝরলে সামছুন্নাহার পারভীন বাহুবলের মজা ত্যাগ করবেন?


     এই বিভাগের আরো খবর