,

বাহুবলে অনুমোদনহীন বেকারি কারখানার ছড়াছড়ি : অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হচ্ছে খাদ্যসামগ্রী

বাহুবল প্রতিনিধি ॥ বাহুবল উপজেলায় যত্রতত্র অনুমোদনহীন বেকারি কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে। এসব বেকারিতে শিশু শ্রমিক দিয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্যসামগ্রী তৈরি করা হচ্ছে। খাদ্যসামগ্রীতে নিম্নমানের কাপড়ের রং ব্যবহার করা হচ্ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে। এ ছাড়াও এসব কারখানা থেকে সরকার লাখ লাখ টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। উপজেলার নতুন বাজার জুয়েল বেকারী, মিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের পাশে এ রহমান বেকারী, কলেজ রোডে গাউছিয়া বেকারী, ভিতর বাজার শাহজালাল বেকারী, দ্বিগাম্বর বাজারে আল ইসলাম বেকারী, বাহুবল বাজারের ব্রিজের পাশে আশা বেকারী, ভাই ভাই বেকারী সহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বেকারির নামে অবৈধ খাদ্যদ্রব্য তৈরির অসংখ্য কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে। কারখানাগুলোতে পরিদর্শনকালে মালিকরা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) কর্তৃপক্ষের কোনো অনুমোদন দেখাতে পারেনি। এ ছাড়াও শিশুশ্রমিক দিয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্যসামগ্রী তৈরি করা হচ্ছে। খাদ্যসামগ্রীতে নিম্নমানের কাপড়ের রং ব্যবহার করা হচ্ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তবে নতুন বাজারের জুয়েল বেকারীর মালিক আব্দুল জলিল দাবী করে বলেন, আমাদের বিএসটিই’র লাইসেন্স আছে। উপজেলার সবকয়টি খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানে আইন মানা হচ্ছে না। কারিগরদের কারখানায় কাজ করার সময় আলাদা পোশাক পরিধান করার বিধান থাকলেও খালি গায়েই তাদের কাজ করতে দেখা গেছে। হাতে গ্ল্যাবস এবং মুখে মাস্ক ব্যবহার করা হয় না। খালি হাতে ময়দাসহ খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুত করতে গিয়ে কারখানার ভেতরে প্র্রচন্ড গরমে কারিগরদের শরীরের ঘাম খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। এসব কারখানায় কারিগররা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খালি হাতে কেক, চানাচুর, বেলা বিস্কুট ও পাউরুটিসহ নানান ধরনের খাদ্যদ্রব্য তৈরি করছেন। কারখানাগুলোতে কারিগরদের পাশাপাশি শিশুশ্রমিককে কাজ করতে দেখা গেছে। গাউছিয়া বেকারীর কারখানায় ১২ বছর বয়সী শিশু শ্রমিক হৃদয় হেলাল ও শহীদুল জানায়, তারা অন্য দশজনের মতো পাঠশালায় যেতে চায়। অভাব-অনটনের কারণে ইচ্ছা থাকলেও তাদের লেখাপড়া করার সাধ্য নেই। পেটের দায়ে সামান্য বেতনে কারখানাগুলোতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চাকরি করতে বাধ্য হচ্ছে। ভোক্তা আব্দুর রহমান জানান, প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় উপজেলা শহরে যত্রতত্র খাদ্যদ্রব্যের অবৈধ কারখানা গড়ে তোলা হচ্ছে। নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি করা এসব পাউরুটি, কেক, চানাচুর, বেলা বিস্কুটসহ নানা ধরনের খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ করে জেলাবাসী স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। তিনি এসব অবৈধ কারখানার বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। মিরপুর গাউছিয়া কারখানার মালিক আনোয়ার হোসেন জানান, তার কারখানায় বিএসটিআইয়ের কোনো অনুমোদন নেই। তবে অনুমোদন নেয়ার চেষ্টা চলছে। দ্বিগাম্বর বাজারের আল ইসলাম কারখানার মালিক জানান, তারা কোনো সময় আয়কর পরিশোধ করেননি। উপজেলা নির্বাহি অফিসার সাইফুল ইসলাম জানান, ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করতে উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রীতিমতো ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে ও অনুমোদনবিহীন খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুতকারী কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।


     এই বিভাগের আরো খবর