,

নবীগঞ্জে পাহাড় কাটতে গিয়ে মাটি চাপায় ২ শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু

মতিউর রহমান মুন্না ॥ নবীগঞ্জ উপজেলার পাহাড়ী অঞ্চল হিসেবে খ্যাত ঐতিহ্যবাহী দিনারপুর এলাকার শংকরসেনা গ্রামে পাহাড় কাটতে গিয়ে মাটি ধসে চাপা পড়ে ২ শ্রমিক ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছে। গুরুতর আহত হয়েছে আরো ১ জন। গতকাল মঙ্গলবার ভোরে এ ঘটনাটি ঘটে। নিহতরা হলো গজনাইপুর ইউনিয়নের নিশাকুড়ি গ্রামের মৃত হাবিবুর রহমানের পুত্র শামসুল হক (৩৫) ও পাশ্ববর্তী গ্রাম কায়স্থগ্রামের শাওন উল্লাহর পুত্র মাসুক মিয়া (৪০) এবং আহত যুবক একই গ্রামের ময়না মিয়ার ছেলে জাহেদ মিয়া (২৫)। খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনর্চাজ মোঃ আব্দুল বাতেন খানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে হতাহতদেরকে উদ্ধার করেছেন। উদ্ধারকাজে নবীগঞ্জ দমকল বাহিনী সার্বিক সহযোগিতা করেছে। নিহতদেরকে হবিগঞ্জ মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতদের স্বজনদের মধ্যে চলছে শোকের মাতম। তাদের আহাজারিতে এলাকার বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। স্থানীয় সুত্রে জানাযায়, দীর্ঘদিন ধরে পাহাড়ী এলাকা হিসেবে খ্যাত দিনারপুর পরগনার বিভিন্ন টিলা কেটে অবৈধভাবে মাটি নিয়ে ব্যবসা করে আসছিল কয়েক’টি সিন্ডিকেট চক্র। বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসলে তা বন্ধ করে দেয়া হয়। প্রায় ৬ মাস ধরে পাহাড় কাটা বন্ধ ছিল বলে প্রশাসন দাবী করেছেন। আহত ও পুলিশ সুত্রে জানাযায়, জেলার মাধবপুর উপজেলায় সিরামিক কোম্পানীসহ বিভিন্ন কোম্পানী মাটি দেয়ার জন্য চুক্তি করেন দিনারপুর কান্দিগাওঁ গ্রামের শেখ মাসুদ নামের এক ঠিকাদার। সে একই এলাকার শামীম আহমদকে দায়িত্ব দেন। উক্ত শামীম আহমদ টিলার মাটি কাটার জন্য কায়স্থগ্রামের মহসিন মিয়া নামে এক যুবককে দায়িত্ব দেন। উক্ত মহসিন গত সোমবার রাত ১০টা থেকে শংকরসেনা গ্রামের জয়নুর মিয়ার টিলা থেকে নিহত শ্রমিক মাসুক, নিহত শামসুল হক, ও আহত জাহেদ মিয়া, রুবেল মিয়াসহ ১২ জন শ্রমিক নিয়ে মাটি কাটা শুরু করেন। রাত ব্যাপী কাটা মাটি গুলো ট্রাক দিয়ে কান্দিগাঁও পেট্রোল পাম্পের সামনে জমা করে রাখা হয়। মাটি কাটার এক পর্যায়ে মঙ্গলবার ভোর রাত ৪টার দিকে হঠাৎ মাটি ধসে পরে। এতে মাটির নীচে গর্তে চাপা পরে ৩ জন। সকাল ৬টার দিকে নিহত ব্যক্তিদের লাশ দেখতে পান স্থানীয়ারা। জ্ঞানশুন্য অবস্থায় জাহেদ’কে জীবিত উদ্ধার করা হলেও অপর ২ জন শ্রমিক শামসুল ও মাসুক ঘটনাস্থলেই মারা যায়। মুহুর্তের মধ্যে খবরটি ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়। এলাকার শত শত নারী পুরুষ ভীড় করে ঘটনাস্থলের আশপাশে। মর্মান্তিক এ ঘটনা দেখে অনেকেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। নিহত শামসুল হক ৮ সন্তানের জনক। এর মধ্যে বড় মেয়ের বয়স ১২ বছর। বাকীরা ছোট। পরিবারের একমাত্র উর্পাজনকারী ছিলেন শামসুল হক। অপর দিকে নিহত মাসুক মিয়া ৪ সন্তানের জনক। নিহতদের স্ত্রী, অবুঝ সন্তানদের আহাজারিতে এলাকার বাতাস ভারি হয়ে উঠে। স্বজনদের চলছে শোকের মাতম। এ ব্যাপারে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মামলার প্রস্তুতি চলছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ইমদাদুর রহমান মুকুল বলেন, ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক ও দুঃখ জনক। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানান। নিহত পরিবারের অভিযোগ পাহাড় কাটার সাথে যারা জড়িত তারাই এ ঘটনার জন্য দায়ী। ওই সব ঠিকাদার, সাব-ঠিকাদার ও তাদের নিয়োজিত লোকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানান। অফিসার ইনর্চাজ মোঃ আব্দুল বাতেন খানঁ বলেন, রাত ব্যাপী অবৈধভাবে পাহাড় কাটার ফলে এক সময় ভোর বেলা মাটি ধসে পড়ে গিয়ে উল্লেখিত শ্রমিকদের হতাহতের ঘটনা ঘটে। অভিযোগ পেলে এ ঘটনায় যারা সম্পৃক্ত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ঘটনায় নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এড. আলমগীর চৌধুরী দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনাসহ শোকাহত পরিবার ও স্বজনদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন।


     এই বিভাগের আরো খবর