,

উত্তেজনায় কাঁপছে যুক্তরাষ্ট : শেষ মুহূর্তের জরিপে এগিয়ে হিলারি

সময় ডেস্ক ॥ দিন গণনা শুরু হয়েছিল আগেই। এবার শুরু হল ক্ষণগণনা। নির্বাচনী উত্তেজনায় এখন গোটা যুক্তরাষ্ট্র কাঁপছে। শ্বাসরুদ্ধকর প্রচারণায় ব্যস্ত ডেমোক্রেটিকদলীয় প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন ও রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইতিহাস সৃষ্টির এ নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে গোটা বিশ্ব। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ভোট গ্রহণ করা হবে। নির্বাচনে কে জয়ী হবেন, তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ আর শ্বাসরুদ্ধকর অপেক্ষা। এ অপেক্ষার শেষ হবে বাংলাদেশ সময় বুধবার সকাল ৯টার দিকে। হিলারি ক্লিনটন নির্বাচিত হলে সৃষ্টি হবে নতুন এক ইতিহাস। কেননা তিনিই হবেন দেশটির প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট। শেষ মুহূর্তের নির্বাচনী জরিপগুলোতেও হিলারি এগিয়ে আছেন। তবে জরিপে ব্যবধান কিছুটা কমেছে। ট্রাম্পের পক্ষে জনমত বাড়লেও তা জয়ের জন্য যথেষ্ট নয়। যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনের জটিল প্রক্রিয়ায় ভোটের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ ইলেক্টোরাল কলেজের জরিপে সুস্পষ্টভাবে এগিয়ে আছেন হিলারি। কোনো প্রার্থী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে হলে ৫৩৮টি ইলেক্টোরাল কলেজের মধ্যে ২৭০টিতে জয়ী হতে হবে। সিএনএনের জরিপে এখন পর্যন্ত ২৬৮টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটে এগিয়ে আছেন হিলারি। আর ট্রাম্প এগিয়ে আছেন ২০৪টিতে। এবার আগাম ভোট পড়েছে অনেক বেশি। এখন পর্যন্ত ৩ কোটি ৭০ লাখ ভোটার আগাম ভোট দিয়েছেন। এদিকে হিলারি ও ট্রাম্প ভোট চাইতে ছুটছেন স্টেট থেকে স্টেটে। উভয় প্রার্থী তাদের সমর্থকদের ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। হিলারি বলেছেন, আমি প্রস্তুত। ট্রাম্প বলেছেন, আমরা জিতব। যুক্তরাষ্ট্রে ভোটের দিন ছুটি নেই, কাজের ফাঁকে বা আগে-পরে সবাইকে ভোট দিতে হয়। প্রায় সব স্টেটে ভোর ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলে। বিভিন্ন স্টেটে সময়ের ব্যবধানের কারণে চূড়ান্ত ফলাফল পেতে সময় লাগে। যেমন নিউইয়র্কে রাত ৯টায় যখন ভোট শেষ হবে, ক্যালিফোর্নিয়ায় তখন মাত্র সন্ধ্যা ৬টা। তবে সুবিধা হলো, নিউইয়র্ক বা ক্যালিফোর্নিয়ার রেজাল্ট সবার জানা, এরা কট্টর ডেমোক্রেট, এ জন্য ভোট চলাকালীন অবস্থায়ও বেসরকারি রেজাল্ট জানতে অসুবিধা হয় না। তাই আমেরিকান ইস্টার্ন জোনের সময় মঙ্গলবার মধ্য রাতের মধ্যে মানুষ বেসরকারিভাবে জেনে যাবেন, কে জয়ী হলেন। বাংলাদেশে তখন সকাল গড়িয়ে প্রায় মধ্যাহ্ন। এদিকে প্র্রচারণায় আক্রমণ-পাল্টাআক্রমণ অব্যাহত আছে। বার্নি স্যান্ডার্স রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে রাজনৈতিক কাপুরুষ বলে মন্তব্য করেছেন। ২০১২ সালে ওবামার সঙ্গে পরাজিত রিপাবলিকান প্রার্থী মিট রমনি শনিবার বলেছেন, ন্যান্সি পেলোসিকে স্পিকার বানানোর ডেমোক্রেটদের স্বপ্ন ফ্যান্টাসি বা অলিক। ট্রাম্প-পেন্স একইসঙ্গে বলছেন, হিলারিকে বিশ্বাস করা যায় না। হিলারি এ সময়ে ডিফেন্সিভ; ট্রাম্প অনেকটা অফেন্সিভ, তবে আগের চেয়ে অনেক সুশীল। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী চাপের মধ্যে কংগ্রেস বা সিনেট নির্বাচন নিয়ে তেমন হইচই শোনা যাচ্ছেন না, যদিও কংগ্রেস বা সিনেট দখলের লড়াইটা বেশ তুঙ্গে রয়েছে। ডেমোক্রেট বা রিপাবলিকান উভয় দল আশা করছে, তারাই জয়ী হচ্ছেন। আমেরিকার ৫০টি স্টেটের মধ্যে ৩৫টি মোটামুটি লাল-নীল দুই ভাগে অর্থাৎ রিপাবলিকান বা ডেমোক্রেট হিসাবে বিভক্ত। নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারিত হয় বাকি ১৫টি স্টেটের রেজাল্টের ওপর। এবারো এর ব্যতিক্রম নয়। এবার ১১টি স্টেটে অর্থাৎ ফ্লোরিডা, কলোরাডো, আইওয়া, মিশিগান, নেভাদা, নিউহ্যাম্পশায়ার, নর্থ ক্যারোলিনা, ওহাইও; পেনসিলভানিয়া, ভার্জিনিয়া ও উইস্কিনসিনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে। ন্যাট সিলভার ৫৩৮ শনিবার বলেছে, হিলারির ব্যুহ ভেঙে পড়েছে; ট্রাম্প এমনকি নীল স্টেটে জিতে যেতে পারেন। আর হিলারি হারলে শুধু তিনি একা হারবেন না, ডেমোক্রেটরা হেরে যাবেন। অর্থাৎ হাউস বা সিনেট কোনোটাই তারা দখল করতে পারবেন না। শনিবার হিলারি ও ট্রাম্প চড়কির মতো আমেরিকার এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্ত চষে বেড়িয়েছেন। হিলারি সাউথ ফ্লোরিডা ও ফিলাডেলফিয়ার কয়েকটি সমাবেশে বক্তব্য রাখেন। ট্রাম্প ৪টি স্টেটে বক্তব্য রাখেন। নির্বাচনের দিন পর্যন্ত এভাবেই চলবে। ওয়াশিংটন টাইমস বলছে, ট্রাম্প নিজেকে পরিবর্তনের পক্ষের প্রার্থী হিসাবে তুলে ধরছেন। ট্রাম্প পতœী ম্যালাইনি ট্রাম্প মহিলাদের কাছে স্বামীর ভাবমুক্তি তুলে ধরতে কাজ করছেন। গত শুক্রবার পর্যন্ত প্রায় ৩ কোটি ৩০ লাখ মানুষ আগাম ভোট দিয়েছেন। এতে দেখা যাচ্ছে, এবার হিস্পানিকরা ভোটে আগ্রহ দেখাচ্ছেন, যেটা ট্রাম্পের জন্য দুঃসংবাদ। তবে ২০১২ সালের তুুলনায় কৃষ্ণাঙ্গ ভোট কম পড়ছে, যা হিলারির জন্য সুসংবাদ নয়। গত শনিবার সন্ধ্যায় নেভাদার রিনোতে এক সমাবেশে বক্তৃতাকালে ট্রাম্পকে নিরাপত্তাকর্মীরা দ্রুত স্টেজ থেকে সরিয়ে নেয়। গুঞ্জন শোনা যায়, ভিড়ের মাঝে বন্দুকধারীর উপস্থিতির। কিছুক্ষণ পর ট্রাম্প আবার মঞ্চে ফিরে আসেন এবং সভার কাজ শেষ করেন। নিরাপত্তা সূত্র জানায়, বন্ধুকধারী নন, একজন বিক্ষোভকারী। বিস্তারিত জানা যায়নি। মজার ব্যাপার হলো, ক্যালিফোর্নিয়া বিএনপি হিলারির সঙ্গে খালেদা জিয়ার করমর্দনের একটি ছবি সর্বত্র প্রচার করছে। সঙ্গে একটি লিংক, যাতে দেখা যাচ্ছে যে ফার্স্ট লেডি হিলারি ক্লিনটন তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে করমর্দন করছেন। ৩ নভেম্বর বৃহস্পতিবার মিশেল ওবামার এ ভিডিওটি হিলারির ফেসবুক পেইজে শেয়ার করা হয়েছে। স্বভাবতই বিএনপি নেতারা এতে খুশি। গত শনিবার এ প্রতিবেদকের দেখার সময় পর্যন্ত ওই ভিডিওটি ৯১২০৪৩ জন দেখেছেন।


     এই বিভাগের আরো খবর