,

বদলে যাচ্ছে শিক্ষাব্যবস্থা

সময় ডেস্ক ॥ শিক্ষাব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আনা হচ্ছে। সরকার এ সেক্টরকে একেবারে ঢেলে সাজানোর নানা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। পাঠক্রম থেকে শুরু করে উত্তরপত্র মূল্যায়ন পর্যন্ত সব কিছুতেই পরিবর্তন আনা হবে। উন্নত দেশের আদলে দেশীয় পরিপ্রেক্ষিতে কার্যকর মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই শুরু হয়েছে এই সংস্কার কার্যক্রম। বর্তমান সরকার প্রথম জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন করে যতটা বাহবা কুড়িয়েছে, তার চেয়ে বেশি সমালোচিত হয়েছে পঞ্চম শ্রেণি, অষ্টম শ্রেণিতে সমাপনী পরীক্ষার নামে পাবলিক পরীক্ষা প্রবর্তন করে। এ ছাড়া সৃজনশীল পদ্ধতি চালু করেও এর সুফল খুব একটা পায়নি। পরীক্ষাগুলোয় জিপিএ-৫ প্রাপ্তির রেকর্ডের সূচক যতটা ঊর্ধ্বমুখী, বিপরীতে শিক্ষার মান ততটাই নি¤œগতি বলে সমালোচিত। এর ফলে গতানুগতিক শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের চিন্তা শুরু হয়। এর বাস্তবায়নে পাঠক্রম, পাঠ্যসূচি, পাঠ্যপুস্তক, পাঠদান, পরীক্ষা গ্রহণ, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, উত্তরপত্র মূল্যায়ন পদ্ধতিতে সংস্কার নিয়ে ভাবছে সরকার। শিক্ষার উন্নয়নের লক্ষ্যে এবং সংস্কারের জন্য পরামর্শ ও মতামত নেওয়া হচ্ছে দেশের খ্যাতিমান শিক্ষাবিদ, প্রকৌশলী, শিক্ষক এবং শিক্ষাসংশ্লিষ্টদের। পর্যায়ক্রমে সভা, সেমিনার, কর্মশালার আয়োজন করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্র এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব চৌধুরী মুফাদ আহমদ এ বিষয়ে বলেন, গতানুগতি শিক্ষার মান উন্নয়নে সরকার নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের খ্যাতিমান শিক্ষাবিদসহ যারা শিক্ষার সঙ্গে আছেন তাদের পরামর্শ-মতামত নেওয়া হবে। শিক্ষায় অংশগ্রহণ সন্তোষজনক আছে। আমাদের এখন শিক্ষার মানোন্নয়নে কাজ করতে হবে। এজন্য এই আয়োজন। তিনি বলেন, শিক্ষার মান উন্নয়নে যে কোনো সংস্কারে মন্ত্রণালয় একক সিদ্ধান্ত নেবে না। সংস্কারে যা কিছু পরিবর্তন-পরিমার্জন হবে সবার মতামত ও পরামর্শের ভিত্তিতে হবে। পাঠক্রম : শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল সক্ষমতা বিকাশের সুযোগ বৃদ্ধি করতে সরকার পুরনো পাঠক্রম পরিমার্জন করে ২০১৩ সালে। বিদ্যমান পাঠক্রমে বড় ধরনের পরিবর্তন হবে না। এই পাঠক্রম মূল্যবোধ, দৃষ্টিভঙ্গি, নৈতিকতা ও মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন শিক্ষিত জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য করা হয়েছে। পরিমার্জনে প্রাধান্য দেওয়া হবে দক্ষ জনসম্পদ গড়ে তোলার উদ্দেশ্য। এর আগে ১৯৭৬ সালে এবং ১৯৯৬ সালে দুবার শিক্ষাক্রম পরিমার্জন করা হয়। পাঠ্যসূচি : বিদ্যমান পাঠ্যপুস্তকগুলোয় কোন কোন বিষয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক দীর্ঘ পাঠ্যসূচি রয়েছে। বিভিন্ন সভা-সেমিনারে শিক্ষাবিদসহ বিভিন্ন মহল এ নিয়ে সমালোচনা করছে। অনেকে পাঠ্যসূচি কমিয়ে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিভেদে স্বল্পপরিসরে সহজ পাঠ্যসূচি তৈরির পরামর্শ দিয়েছে সরকারকে। এসব বিষয় বিবেচনা করে সরকার পাঠ্যসূচিতে পরিবর্তনের চিন্তা করছে। পরিমার্জন করে যুগোপযোগী বিষয় পাঠ্যসূচিতে অর্ন্তর্ভুক্ত করা হবে। পাঠ্যপুস্তক : শিক্ষার্থীদের বইয়ের বোঝা কমিয়ে আনতে পাঠ্যবইয়ে অসামঞ্জস্যপূর্ণ আধিক্য লেখা বাদ দেওয়া হবে। সহজ ও প্রাঞ্জল ভাষায় রচিত হবে পাঠ্যপুস্তক। বিজ্ঞান, গণিত এবং ইংরেজি বিষয়ে সহজ ভাষায় কীভাবে পাঠ্যপুস্তক রচনা করা যায় সে বিষয়ে বিষয়ভিত্তিক লেখকদের পরামর্শ নেওয়া হবে। বানানরীতি, র্নির্ভুল পাঠ্যবই তৈরির জন্য এনসিটিবির সংশ্লিষ্টদের আরও দক্ষ করার বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত নেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কারণ বিগত কয়েক বছর পাঠ্যপুস্তকে ভুল তথ্য, বানান, কঠিন ভাষায় লেখা বিজ্ঞান, গণিত এবং ইংরেজির বিষয়ে নানা মহলের অভিযোগ ছিল। বইয়ে অনুশীলন মুখস্থ বলতে পারা কোনো শিক্ষার্থীদের দক্ষতা নয়; দক্ষতা হচ্ছে শিক্ষার্থী যদি নিউটনের সূত্র বুঝতে পারে। এ কারণে উদাহরণ দিয়ে বোঝানো হবে রচয়িতাদের কাজ। পরীক্ষাগ্রহণ : দেড়-দুই মাস সময় নিয়ে পাবলিক পরীক্ষা গ্রহণ করা হচ্ছে। এভাবে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ সময় ব্যয় করতে হচ্ছে। পরীক্ষা নিয়ে আবার শিক্ষা প্রশাসনেরও বছরের অধিকাংশ সময় ব্যস্ত থাকতে হয়। উন্নত দেশে দশ-বারোটি বিষয়ে পাবলিক পরীক্ষা গ্রহণ করা হয় না। সেখানে শুধু গণিত, মাতৃভাষা, ইংরেজি, বিজ্ঞানে পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। বাকি বিষয়গুলো ক্লাসে মূল্যায়ন করা হয়। এভাবে ক্লাসে পাঠ নেওয়ার সময় বেড়ে যায় শিক্ষার্থীদের। আমাদের বিদ্যমান পরীক্ষা পদ্ধতি সংস্কার করে ক্লাসে নানাবিধ সূচকে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করে পাবলিক পরীক্ষার বিষয় কমানোর চিন্তা করা হচ্ছে।


     এই বিভাগের আরো খবর