,

হবিগঞ্জের রোটারিয়ানদের নতুন স্বপ্ন দেখালেন এমপি আবু জাহির : আব্দুর রহমানের আনন্দ অশ্র“তে সফল অভিষেক রোটারী ক্লাব অব হবিগঞ্জ সেন্ট্রালের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জ শহরতলীর বহুলা গ্রামের ৭০ বছরের বৃদ্ধ আব্দুর রহমান। ঘর বাড়ি নেই তার। অন্যের রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন তিনি। রোটারী ক্লাব অব হবিগঞ্জ সেন্ট্রাল ১৯ হাজার টাকা দিয়ে তাকে একটি রিক্সা উপহার দেয়। রিক্সা পেয়ে আনন্দে কান্নাজড়িত কণ্ঠে যখন আব্দুর রহমান বললেন, বাড়ি নাই, ঘর নাই, আমার কিছুই নাই। রিক্সা চালিয়ে কোনভাবে বেচে আছি। এখন নিজের রিক্সায় কিছুটা আয় বাড়বে। তার এই বক্তব্যে সকলেরই আবেগ ছুয়ে যায়। আবার মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতায় সারাদেশের প্রথম স্থান অধিকারী বিকেজিসি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী নাঈমার হাতে যখন নগদ অর্থ তুলে দেওয়া হয় তখন সকলের বুক ভরে যায় নিজ জেলার গৌরবের আনন্দে। তার সর্বশেষ যখন এমপি আবু জাহির রোটারিয়ানদের জন্য নতুন স্বপ্ন দেখান তখন সত্যিকারের স্বার্থক হয় রোটারি ক্লাব অব হবিগঞ্জের অভিষেক অনুষ্ঠান। গতকাল রাতে আমির চান কপ্লেক্সের মনসুর ভাংকুয়েটিং হলে রোটারি ক্লাব অব হবিগঞ্জ সেন্ট্রালের তৃতীয় অভিষেক অনুষ্ঠানটি এভাবেই স্মরণীয় হয়ে উঠেছিল। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমপি আবু জাহির বলেন, এক সময় হবিগঞ্জে রোটারি ক্লাব একটি গন্ডির মধ্যে আবদ্ধ ছিল। এখন তিনটি ক্লাব হয়েছে। পাশাপাশি রোটার‌্যাক্টসহ এই অঙ্গনে যারাই রয়েছেন, তাদেরকে যদি একটি ছাতার নিচে নিয়ে আসা যায় তাহলে হবিগঞ্জের গরীব মানুষের জন্য অনেক ভাল কাজ করা সম্ভব হবে। সকলে মিলে যদি আইসিটিভিত্তিক লার্নিং এন্ড আর্নিং প্রকল্প গ্রহণ করা যায় তাহলে হবিগঞ্জের যুবসমাজ নিজেদের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবে। মাত্র একটি ল্যাপটপে একটি যুবকের পরিবারকে এনেন দিতে পারে আর্থিক স্বাবলতা। এই প্রকল্প গ্রহণ করা হলে তিনি দুই লাখ টাকা অনুদান ঘোষণা করেন। পাশাপাশি রোটারি সেন্টার করার জন্য একটি ভূমির ব্যবস্থা করা হলে আরও ৫ লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হবে এবং বিল্ডিংয়ের জন্য অর্থ সহায়তা করা হবে। তিনি আরও বলেন, বিগত ৮ বছরে আমার নির্বাচনী এলাকায় ৬টি নতুন কলেজ ও ১০টি হাইস্কুল প্রতিষ্ঠা করেছি। আগামী ১ বছরে আরও ৪টি কলেজ সৃষ্টি করবো। আমাদের কাছে শতশত মানুষ আসে। আমরা সবাইকে খুশি করতে পারি না। সকলে মিলে যদি আমরা কাজ করি তাহলে হবিগঞ্জ একটি মডেল জেলা হিসাবে রূপান্তর হবে। আমরা সকলে মিলে আলোকিত হবিগঞ্জ জেলা গড়তে চাই। বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় এড. আব্দুল মজিদ খান এমপি বলেন, বর্তমানে দেশের আর্থিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে। কিন্তু নীতি নৈতিকতা ও আদর্শের উন্নতি হচ্ছে না। রোটারী ক্লাবের মাধ্যমে এই নেতিকতার উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে। রোটারী ক্লাবের প্রতিটি কার্যক্রম সকলের কাছেই প্রশংসিত। হবিগঞ্জের রোটারীর প্রসারে সাধারণ মানুষ আরও বেশি উপকৃত হবে। বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় সাবেক ডিস্ট্রিক্ট গভর্ণর ডাঃ মঞ্জুরুল হক চৌধুরী বলেন, রেটারীয়ানদের হৃদয় ঘৃণার জন্য নয়, বরং ভালবাসার জন্য। রোটারিয়ানরা অন্যের দোষ খোঁজার চেষ্টা করে না। মানবতার সেবায় সমগ্র বিশ্বে রোটারী একটি অনন্য উদাহরণ। হবিগঞ্জেও বর্তমানে রোটারির প্রসার ঘটছে। হবিগঞ্জে যদি রোটারী সেন্টার হয় তাহলে বড় ধরণের প্রকল্প দেওয়া হবে। এেেত্র সবধরণের সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি। রেটারী ক্লাব হবিগঞ্জ সেন্ট্রালের তৃতীয় অভিষেক অনুষ্ঠানের প্রথম অধিবেশনে সঞ্চালক ছিলেন পাস্ট প্রেসিডেন্ট রোটারিয়ান তবারক এ লস্কর এবং দ্বিতীয় অধিবেশনে সঞ্চালক ছিলেন বর্তমান ক্লাব প্রেসিডেন্ট উপাধ্যক্ষ নাজমূল হক। সাধারণ সম্পাদকের প্রতিবেদন পেশ করেন সাংবাদিক হারুনুর রশিদ চৌধুরী। আলোচনায় অংশ নেন সাবেক পৌর চেয়ার‌্যান শহীদ উদ্দিন চৌধুরী, রোটরিয়ান ডাঃ জমির আলী, অধ্যক্ষ সত্যন্দ্র কুমার শীল, অধ্যাপক ইকরামূল ওয়াদুদ, মেঘনা নরসিংদী কাবের প্রেসিডেন্ট কবির হোসেন, ডাঃ জাকারিয়া হোসেন, প্রেসক্লাব সভাপতি ফজলুর রহমান, কবি তাহমিনা বেগম গিনি, রোটারিয়ান শামীম আহছান, শফিউল আজম, জেরিন তাসনিম, সৈয়দ তোফায়েল ইসলাম কামাল, এড. সৈয়দ জাদিল উদ্দিন, ডাঃ এসএস আল আমিন সুমন, এড. মোকাম্মেল হোসেন রবিন এবং নূর উদ্দিন জাহাঙ্গীর। র‌্যাফেল ড্র এবং শুভেচ্ছা ডিনারের মাধ্য দিয়ে শেষ হয় আনন্দঘন অভিষেক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে একটি আকর্ষণীয় স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন করেন অথিথিবৃন্দ।


     এই বিভাগের আরো খবর