,

নবীগঞ্জে কয়েন নিয়ে বিপাকে ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষ

মতিউর রহমান মুন্না ॥ কয়েন বা ধাতব মুদ্রা লেনদেন করতে গিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন নবীগঞ্জ উপজেলার মানুষ। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচয় পত্র জারি থাকা সত্ত্বেও উপজেলার ব্যাংকগুলোতে কয়েন বা ধাতব মুদ্রা গ্রহন না করায় হাজর হাজার টাকার ধাতব মুদ্রা নিয়ে বিপাকে পড়েছে এলাকার পণ্য ক্রেতা-বিক্রেতা, ব্যবসায়ী, দোকানদার ও সাধারণ মানুষ। সিগারেট সহ বিভিন্ন পণ্যের কোম্পানি, এজেন্ট ও মহাজনরা এই সব কয়েন টাকা না নেওয়ার ফলে বিপদে পড়েছে ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষরা। কেনাকাটা করে এইসব কয়েন মুদ্রা দিতে চাইলেও দোকানীরা নিতে আগ্রহ নন। তারা বলছেন আমরা কি করে নিব আমাদের কাছ থেকে আবার আমাদের কোম্পানি কিংবা মহজনরা এই কয়েনগুলো নিতে চায় না। হাজার হাজার টাকার কয়েন (১টাকা, ২টাকা ও ৫টাকা) আজ এই সব ব্যবসায়ীদের কাছে বুকের উপড় পাথরের মত জম হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা এই সব কয়েনের মুদ্রাগুলো নিয়ে কী করবে কার কাছে কোথায় দিবে এখন উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষের মাঝে এখন এই একটা বিষয় নিয়েই সর্বত্র আলোচনার ঝড় বয়ছে। ক্রেতারা এসে ছোট-খাটো পণ্য নেওয়ার সময় এই কয়েনগুলো দেয় অথচ অনেক পণ্য নেওয়ার সময় ১ টাকা অথবা ২ টাকা অথবা ৫ টাকার কয়েন দেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। সবচেয়ে বেশী বেকায়দায় পড়েছেন বেকারি ও টং দোকানের ব্যবসায়ীরা। এসব ব্যবাসায়ীর হাতে হাজার হাজার কয়েন পড়ে থাকায় ইতিমধ্যে লোকসানের মুখে পড়তে যাচ্ছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। অপর দিকে ব্যাংকগুলো এই কয়েন টাকা না নেওয়ার জন্য ভোগান্তি আরও অনেক বেশি হচ্ছে বলে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ। সরকার যদি এই টাকাগুলো না নেবে তাহলে তা তৈরি করে বাজারে ছাড়ছে কেন? কেন আজ সাধারণ মানুষসহ ব্যবসায়ীরা ভোগান্তিতে পড়ছে ? হাজার হাজার টাকার কয়েনগুলো তারা কি করবে? রাষ্ট্রীয়ভাবে এসব কয়েন অচল না হলেও সরকারি-বেসরকারি কোনো ব্যাংকই তা নিচ্ছে না বলেও অভিযোগ উঠেছে। অলিখিতভাবে ব্যাংকগুলোতে নিষিদ্ধ হয়ে পড়ায় হাজার হাজার টাকার মুদ্রা অলস পড়ে থাকছে ছোট-বড় ব্যবসায়ীদের কাছে। এতে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন বলেও তারা অভিযোগ করেছেন। এদিকে হাটে-বাজারে দোকানিরাও কেনাবেচায় কয়েন নিতে অনীহা দেখানোয় বিপাকে রয়েছেন সাধারণ মানুষ। দিনারপুরের কায়স্থগ্রামের সামসুল ইসলাম নামের এক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জানান, অনেক চেষ্টা করেও আমরা কাস্টমারকে কয়েন দিতে পারছিনা। তারা কিছুতেই এসব নিতে চায়না। বেশী সমস্যাতে পড়ছেন টমটম চালকরা। এক বাজার থেকে অন্য বাজারে যেতে যাত্রীরা চালকদের কয়েন দিলে তারা নিতে চায়না। এসব কয়েন বাজারে চলে বলে জানিয়ে দেন যাত্রীদের। তারপর চলে যাত্রী ও চালকদের মধ্যে তর্ক বির্তক। এ রকম দৃশ্য হরহামেশাই দেখা যায় নবীগঞ্জের বিভিন্ন সড়কে। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন যাত্রীরাও। নবীগঞ্জের দেবপাড়া এলাকার মায়ের দোয়া বেকারীর মাজিদ মিয়া জানান, ‘গতকাল রবিবার দুপুরে কয়েন নিয়ে পূবালী ব্যাংক গজনাইপুর শাখায় গিয়ে জমা দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু ব্যাংকের লোক কয়েন জমা রাখেনি।’ কয়েক হাজার কয়েন নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন বলেও জানান। গতকাল বিকেলে সোনালী ব্যাংক নবীগঞ্জ শাখায় গিয়েও একই অবস্থা দেখা গেছে, ব্যাংক কতৃপক্ষ কয়েন জমা নিচ্ছেনা। সুহেল নামের এক বেকারী শ্রমিক জানায়, ‘আমাদের মাসের বেতন জমা করে শুধু কয়েন দিয়ে দেয়, কিন্তু কয়েন কেউ নিতে চায় না’ বিভিন্ন দোকানের মালিকরা জানান, আমাদের দোকানে হাজার হাজার কয়েন পড়ে রয়েছে। কেউ নিতে চাচ্ছে না। এ অবস্থায় আমাদের মতো সাধারণ ব্যবসায়ীরা পড়েছেন মহাবিপদে। নবীগঞ্জ শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বিরেশ পাল জানান, আমাদের দোকানে কয়েক হাজার কয়েন জমা পড়েছে কেউ নিতে চায়না। ব্যাংকে গিয়ে একাধীক দিন নিয়ে জমা দিতে চাইলেও তারা রাখতে চায় না। এ ব্যাপারে সোনালী ব্যাংক নবীগঞ্জ শাখার ব্যবস্থাপক গোলাম হাসান বলেন, “আমি ৩ মাস যাবৎ নবীগঞ্জ শাখায় আছি, আমি থাকা সত্ত্বে কেউ কোন দিন কয়েন নিয়ে আসেনি।” এদিকে গত কিছুদিন পূর্বে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় কয়েন নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। একটি পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাতকারে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বলেন, যে কোনো মূল্যমানের ধাতব মুদ্রা বা নোট না নেওয়ার সুযোগ ব্যাংকের নেই। জনসাধারণও এ ধরনের মুদ্রা নিতে বাধ্য। তবে এক, দুই ও পাঁচ টাকা মূল্যমানের ধাতব মুদ্রা ও কিছু ক্ষেত্রে এসব মানের নোট কিছু ব্যাংক না নেওয়ার অভিযোগ তারাও পাচ্ছেন। অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে ডেকে বা টেলিফোনে সতর্ক করা হচ্ছে। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে এ বিষয়ে অবহিত করা হচ্ছে। এরপরও কোনো ব্যাংক না নিলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


     এই বিভাগের আরো খবর