,

সিলেট কারাগারে মৃত্যুর মুখোমুখি নবীগঞ্জ ও মাধবপুরের দুই ব্যক্তি

নবীগঞ্জ উপজেলার পাঞ্জারাই গ্রামের আফজাল মিয়া (৫০) ১৫ বছর ৩ মাস ধরে কারাগারের চার দেয়ালে বন্দি। তিনি ওই গ্রামের খোরশেদ উল্যার পুত্র। রেয়াতসহ ৬৭০০/এ নং কয়েদী আফজালের কারাদন্ডে পরিমাণ দাঁড়ায় ২০ বছরেরও বেশি সময়। প্যারালাইসিসে আক্রান্ত এ বৃদ্ধ ধুঁকছেন আরো নানা উপসর্গে। মাধবপুর থানার নোয়াগাঁওয়ের উমেশ পালের পুত্র পরশ পাল ওরফে পরান পাল (৬০)। দীর্ঘ ১২ বছর ধরে কারাজীবন পারছেন তিনি। রেয়াতসহ যারা কারাজীবনের মেয়াদ দাঁড়ায় সাড়ে ১৫ বছর। সিলেট কারাগারের ৭২৬/এ নং কয়েদী স্ট্রোক ও অনিয়ন্ত্রিক উচ্চ রক্তচাপে ভূগছেন। বয়সের ভারে ন্যুজ সবাই। ফুরিয়েছে জীবনী শক্তি। শরীরে ধরেছে কাঁপুনি। আর বাসা বেঁধেছে অসংখ্য রোগব্যাধি। কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্ঠে তাদের বাস। বছরের পর বছর ধরে সেই প্রকোষ্ঠে থেকে ক্রমেই ধাবিত হচ্ছেন মৃত্যুর দিকে। ইতোমধ্যে কারাগারে রোগে-শোকে ধুঁকতে ধুঁকতে দুইজন বন্দী মারা গেছেন। তারা হচ্ছেন মৌলভীবাজার জেলার সদর উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামের আলফু মিয়ার ছেলে লোকমান এবং মাধবপুর উপজেলার সুরমা চা বাগান এলাকার মৃত রনিয়া মাংকী মুন্ডার ছেলে রাসু মাংকী মুন্ডা। গত বছরের ২৭ নভেম্বর মারা গেছেন লোকমান; ঠিক পরদিন মারা যান লোকমান। মর্মস্পর্শী এই দৃশ্যপট সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে। যেখানে মৃত্যুর প্রহর গুণছেন ৫ বন্দী। তাদের সাথে থাকা আরো দুই বন্দী ধুঁকতে ধুঁকতে হারিয়ে গেছেন রহস্যময় অতলান্তে। হত্যা মামলায় অভিযুক্ত হয়ে বাকি পাঁচজনও আছেন সেই পথে। তবে তাদের জন্য আশার আলো ক্ষীণ হয়ে জ্বলছে। ‘বন্দী মুক্তি কমিটি’ তাদের মুক্তির জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানিয়েছে। হবিগঞ্জে দুইজনসহ ৫ বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা রয়েছেন সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে। তাদের দিন এখন মৃত্যুর প্রহর গুণে কাটছে। ধুঁকে ধুঁকে চলছে তাদের দিনযাপন। নিজেরা চলাফেরায় অক্ষম এ বন্দীরা অন্য বন্দীদের সাহায্যে কোনোরকমে চলছেন। কারা কর্তৃপক্ষ তাদের চলাফেরার সহায়তা করতে অন্য বন্দীদের নির্দেশনা দিয়েছে। জীবনের শেষক্ষণে এসে এ পাঁচ বৃদ্ধ-বৃদ্ধা একটু নিশ্চিন্তে, নিজের আপনালয়ে ফিরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে চান। মুক্তি চান বন্দীজীবন থেকে। চোখে মুখে কান্নার স্পষ্ট চাপ নিয়ে পরান পালের কণ্ঠে ঝরে এক পৃথিবী বিষাদ। শেষ বয়সে একটাই চাওয়া, পরিবারের সামনে যেন তিনি মরতে পারেন। জীবনের শেষ মুহুর্তে চলে আসা এই বৃদ্ধ-বৃদ্ধার জন্য যেন একটু আশার আলো উঁকি দেই দেই করছে। তাদের মুক্তির জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানিয়েছে ‘বন্দী মুক্তি কমিটি’। বন্দী মুক্তি কমিটিতে আছেন-সিলেটের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জয়নাল আবেদীন (কমিটির আহবায়ক), সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ছগির মিয়া (সদস্য সচিব), সমাজসেবা কার্যালয় সিলেটের উপপরিচালক নিবাস রঞ্জন দাশ (সদস্য), সিলেটের পাবলিক প্রসিকিউটর মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ (সদস্য), সিলেটের সিভিল সার্জনের পক্ষে ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাঃ আবুল কালাম আজাদ (সদস্য), সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনারের পক্ষে সহকারি কমিশনার মো. ইসমাইল (সদস্য) ও সিলেট জেলা পুলিশ সুপারের পক্ষে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুজ্ঞান চাকমা (সদস্য)। গত বছরের ৮ নভেম্বর এই কমিটি কারাগার পরিদর্শন করে ওই পাঁচ বন্দীর দুর্দশা প্রত্যক্ষ করে। পরে তাদের মুক্তির বিষয়ে আবেদন জানায় কমিটি। এ ব্যাপারে কমিটির সদস্য সচিব ও সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. ছগির মিয়া বলেন, ‘এসব বন্দী অপরের সাহায্য ছাড়া চলতে পারেন না। স্ট্রোক, প্যারালাইস, উচ্চ রক্তচাপসহ নানা রোগে আক্রান্ত। সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের মেডিকেল অফিসার ডাঃ মিজানুর রহমান বলেন, ‘তাদের সবার বয়স হয়েছে অনেক। চলাফেরাও করতে পারেন না। তারা কারামুক্ত হলে নতুন করে কোনো অপরাধে যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বন্দী মুক্তি কমিটির আহবায়ক ও সিলেট জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘আমরা সাত বন্দীর মুক্তির জন্য আবেদন করেছিলাম। তবে দুইজন ইতিমধ্যেই মারা গেছেন। বাকি পাঁচজনের ব্যাপারে এখনও কোনো নির্দেশনা আমরা পাইনি।


     এই বিভাগের আরো খবর