,

চুনারুঘাটে রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্যে চলছে গাছ পাচারের মহোৎসব

চুনারুঘাট প্রতিনিধি ॥ চুনারুঘাট উপজেলার রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্যে গাছ পাচারের মহোৎসব চলছে। বর্তমানে বন বিভাগের রক্ষকরাই এখন ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ায় বনবিভাগ অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। প্রতিনিয়তই ঘটছে গাছ চুরি ও লুটের ঘটনা। অভিযোগ রয়েছে রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্যের গাছ পাচারের সাথে জড়িত হয়ে পড়েছেন খোদ কালেঙ্গা রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ নূরুজ্জামান। প্রতিদিন রাতের আধারে ওই রেঞ্জ কর্মকর্তার যোগসাজশে গাছ পাচারকারীরা রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্যের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গাছ কেটে পাচার করছে। বন বিভাগে সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে গাছপালা পাচারের ফলে বনভূমি উজার হয়ে যাচ্ছে। ভারত সীমান্তবর্তী ও বনভূমি এলাকার নিকটবর্তী স্থানে বনভূমির অনুমোদন ছাড়া অসংখ্য করাত কল গড়ে উঠায় বনের গাছপালা বনদস্যুরা সহজেই করাত কলে মজুদ করে রেখে দেশের বিভিন্ন স্থানে ট্রাক ও ট্রাক্টর যোগে পাচার করছে। সংরক্ষিত বনভূমি থেকে মূল্যবান বনজসম্পদ অবৈধ পথে পাচারের ফলে পরিবেশের ভারসাম্যের পাশাপাশি বনভূমি বৃক্ষহীন হয়ে পড়েছে। চুনারুঘাট উপজেলার কালেঙ্গা রেঞ্জের আওতায় রেমা, কালেঙ্গা, ছনবাড়ী ও রশিদপুর বিট রয়েছে। ওই ৪টি বিটের বনভূমির বিশাল অঞ্চল জুড়ে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাকৃতিক ও সৃজিত বনায়ন রয়েছে। কিন্তু এসব বনভূমি থেকে এক শ্রেণীর অসাধু বনরক্ষীর পরোক্ষ মদদে বনভূমি থেকে মূল্যবান গাছপালা বনদস্যুরা কেটে উজার করে ফেলেছে। বনভূমি এলাকায় পাহাড়ের গাছ কেটে গাছের গোড়া উপড়ে ফেলতে রয়েছে বনরক্ষীদের নিজস্ব লোকবল। বনরক্ষীদের প্রচলিত প্রবাদ রয়েছে “মোথা থাকলে ব্যথা আছে”। এ কারণে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ফাঁকি দিতে স্থানীয় বনরক্ষীরা বনের ভেতর গাছ কাটা হলে তা গোড়াসহ উপড়ে ফেলে। কালেঙ্গা রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ নূরুজ্জামানের যোগসাজশে ভিলেজাররা বনের গাছপালা কেটে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে হরহামেশা বিক্রি করছে। গাছ বিক্রির একটি অংশ বনরক্ষীদের দেয় বলে তারা প্রচার করে বেড়ায়। এছাড়া কালেঙ্গা, রেমা, রশিদপুর ও ছনবাড়ী বনভূমি থেকে মূল্যবান পুরনো গাছপালা কেটে নিয়ে যাচ্ছে বনদস্যুরা। বনজসম্পদ রক্ষার জন্য বনরক্ষীরা থাকলেও তারা বনদস্যুদের সাথে হাত মিলিয়ে গাছপালা পাচার করছে। ছনবাড়ী বনভূমিতে অনেক বছরের পুরনো সেগুনসহ বিভিন্ন মূল্যবান বৃক্ষরাজি দিনে দিনে হৃাস পেয়ে বনভূমি বৃক্ষহীন হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন অর্থবছরে এসব বনভূমিতে প্রাকৃতিক ও সামাজিকভাবে বনায়ন করা হলেও প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষন ও পরিচর্যার অভাবে বাগানগুলো ব্যর্থ হতে চলছে। বন বিভাগের অর্থায়নে নতুন বাগান বনায়নের জন্য প্রতি বছর নার্সারী থেকে বিভিন্ন প্রজাতির ঔষধি, ফলদ ও ভেষজ চারা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও বনরক্ষীদের উদাসীনতার কারণে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছে না। বন বিভাগে সৃজিত বনায়নের আগাছা দমনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ থাকলেও বনায়নের আগাছা দমনের কোন পদক্ষেপ নেই। রেমা, কালেঙ্গা, ছনবাড়ী ও বিভিন্ন বনবিটে বিভিন্ন সময়ে মূল্যবান আগড় গাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রোপন করা হলেও আগাছা দমন না করায় জঙ্গলে ভরে গেছে। মাঝে মধ্যে বনবিভাগরে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের খুশি করতে বেছে বেছে কিছু এলাকায় ভালো বনায়ন করা হয়। কিন্তু বনের ভেতর বহু অঞ্চল রয়েছে যেখানে বনভূমি বৃক্ষহীন হয়ে পড়েছে বা নতুন বাগান বনায়নের কথা থাকলেও এগুলো রয়েছে মাত্র কাগজে-কলমে। সংরক্ষিত বনাঞ্চলে সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত থাকলেও প্রতিদিন বনের ভেতর দল বেঁধে শত শত মানুষ বনে প্রবেশ করে অবাধে বনের ছোট ছোট গাছপালা কেটে বনভূমি বিনষ্ট করছে। তাদের অত্যাচারে বনভূমি এখন ক্ষতবিক্ষত। যারা অবাধে বনে প্রবেশ করছে তারা বনরক্ষীদের নির্দিষ্ট হারে টাকা দিয়ে থাকে এ কারণে সাধারণ মানুষ বনে ঢুকে নির্ভয়ে বনজসম্পদ পাচার করে নিয়ে যাচ্ছে। কালেঙ্গা বনভূমিকে রক্ষার জন্য ইউএসএআইডির অর্থায়নে আইপ্যাকের সহযোগিতায় এলাকার বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিদের নিয়ে সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হলেও এর কার্যক্রম এখন ঝিমিয়ে পড়েছে। সহ-ব্যবস্থাপনার সদস্যরা বনভূমি থেকে অবৈধ সুবিধা নিতে নিজেরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এ কারণে সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ও বনরক্ষীদের মধ্যে দূরত্বের সৃষ্টি হয়েছে। রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্য ও প্রকৃতি সংরক্ষণ পাহাড়ি বনভূমিতে জীববৈচিত্র্যের সমৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কর্মসূচী নেওয়া হলেও এগুলো রক্ষণাবেক্ষণ ও দেখাশোনার অভাবে বনের জীববৈচিত্র্য এখন হুমকির সম্মুখীন। কালেঙ্গা রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ নূরুজ্জামান গাছ পাচারের সত্যতা স্বীকার করে বলেন গাছ পাচার হচ্ছে। তবে গাছ পাচার যেন না হয় এব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


     এই বিভাগের আরো খবর