,

বিএনপি কি নির্বাচনে অংশ নেবে?

সময় ডেস্ক ॥ বিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন, পরিস্থিতি যা-ই হোক বিএনপি কি নির্বাচনে অংশ নেবে? অনেকের মতে, এ ব্যাপারে বিএনপির কাছে খুব বেশি বিকল্প নেই। দেখার বিষয়, বিএনপির জন্য পরিস্থিতি বদলায় কি-না। অথবা বিএনপি পরিস্থিতি বদলাতে পারে কি-না? ২০০৯ সালের শুরুর দিকের কথা। নির্বাচনে ভরাডুবির পর বিএনপি তখন গভীর হতাশায়। সেসময় বিএনপির প্রভাবশালী এক নেতা বলেছিলেন, প্রেস রিলিজ ও প্রেস ব্রিফিং নির্ভর রাজনীতি দিয়ে জাসদ, কমিউনিস্ট পার্টিকে মোকাবিলা করা সম্ভব। কিন্তু আওয়ামী লীগকে মোকাবিলা করা যাবে না। আট বছর পর গত সপ্তাহে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গুলশানে যখন প্রেস ব্রিফিং করছিলেন তখন রাতের মধ্যভাগ। প্রায় সব সংবাদপত্রের প্রথম সংস্করণ ছাপা হয় প্রেসে। গ্রামগুলো এখন অনেক বদলে গেছে। তবুও বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ তখন ঘুমিয়ে। গত কয়েক বছর ধরে এটাই আসলে বিএনপির রাজনীতি। কেউ কেউ বলে থাকেন, পার্টটাইম পলিটিক্স। ফল যা হওয়ার তা-ই হয়েছে বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মী নানা ধরনের নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, এটা সত্য। হত্যা, গুমের শিকার হয়েছেন অনেকে। গ্রেপ্তার তো একপর্যায়ে পরিণত হয় মামুলি ঘটনাতেই। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এত কিছুর পরও বিএনপির নেতৃত্ব নিজেদের ব্যর্থতা অস্বীকার করতে পারেন না। বিশেষ করে কেন্দ্রীয় এবং ঢাকা মহানগরীর নেতারা প্রায় শতভাগ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। মজার কথা- এই ব্যর্থতার জন্য কাউকেই দায়ভার নিতে হয়নি। বরং এ ব্যর্থতা কারও কারও জন্য পুরস্কারও এনে দেয়। রাজনীতিতে কখনও কখনও একটি সিদ্ধান্তের জের টানতে হয় বছরের পর বছর। কোন সিদ্ধান্ত সঠিক না ভুল, তা অনেকদিনেও বোঝা যায় না। বিএনপি চেয়ারপারসন সর্বদলীয় সরকারে যোগ দানের আমন্ত্রণ দলের কোন পর্যায়ে আলোচনা করে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তা আজও অস্পষ্ট। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির রাজনীতি চলছে প্রেস ব্রিফিং আর প্রেস রিলিজের ওপর নির্ভর করে। নয়াপল্টন দলীয় কার্যালয়ে প্রাণ নেই। দলীয় চেয়ারপারসন ওই কার্যালয়ে যান না। প্রেস ব্রিফিং না থাকলে অন্য নেতারাও সেদিকে পা বাড়ান না। সন্ধ্যার পর কিছুটা সরব হয়ে ওঠে দলীয় চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়। বাড়ে নেতাকর্মীদের আনাগোনা। ওই কার্যালয়ে সন্ধ্যার পর প্রায় নিয়মিতই যান বেগম খালেদা জিয়া। দলীয় কার্যক্রম বলতে প্রায় প্রতিদিনই মিডিয়ার সামনে হাজির হন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ। প্রায়শই লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তিনি। এর বাইরে কার্যক্রম বলতে নাম সর্বস্ব কয়েকটি সংগঠন আয়োজন করে আলোচনা সভার। এসব আলোচনাসভায় যোগ দেন কেন্দ্রীয় নেতারা। সাংগঠনিক কার্যক্রম বলতে আর তেমন কিছুই নেই। তৃণমূল পর্যায়ে দল গোছানোর কার্যক্রম চলছে অনেক বছর ধরে। এর কোনো শেষ নেই। ঢাকা মহানগরীতে কমিটি আছে কি নেই, বোঝা দায়। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে সামনের দিনে বিএনপির রাজনীতিতে তিনটি প্রশ্ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ- ১. প্রেস ব্রিফিং নির্ভর রাজনীতি থেকে দলটি বের হতে পারে কি-না? ২. খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ বিএনপি নেতাদের মামলার গতিপথ কোন দিকে যায়, ৩. ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে কি-না? নিলে কোন ফর্মুলায় অংশ নেবে। পর্দার অন্তরালে রাজনীতিতে এক ধরনের সমঝোতার গুঞ্জন রয়েছে। যদিও কোনো সূত্রই বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারছে না। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রেস ব্রিফিং নির্ভর রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসাই হবে বিএনপির জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ। শক্তিশালী সংগঠন ছাড়া বিরোধী রাজনীতির সফলতার কোনো সূত্র নেই। সরকারে থাকলে সবসময় অনেক কিছুই সহজ মনে হয়। বিরোধী দলে গেলেই বোঝা যায়, সত্যিকারের চ্যালেঞ্জ। তবে বিএনপির বর্তমান নেতৃত্ব সংগঠন গোছাতে সফল হবেন, খুব বেশি মানুষ তা বিশ্বাস করে না। কারণ, নেতৃত্বের একটি বড় অংশ নানা ধরনের লিঙ্কে জড়িয়ে গেছেন। যোগাযোগ রক্ষা করেই রাজনীতি করছেন তারা। সামনের নির্বাচনে বিএনপির প্রভাবশালী নেতারা কত জন নির্বাচনে লড়তে সক্ষম হবেন- এ নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। দলটির দ্বিতীয় প্রভাবশালী নেতা তারেক রহমান এরই মধ্যে একটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এক ডজনের বেশি মামলা রয়েছে। এর অন্তত দুটি মামলা চূড়ান্ত পর্যায়ে। এই মামলা দুটির ফলের ওপর বহুলাংশে নির্ভর করছে বিএনপির রাজনীতির ভবিষ্যৎ চিত্র। তবে বিএনপি নেতৃত্ব মামলা না রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান, কোনটিকে বেশি গুরুত্ব দেবেন, সে প্রশ্নও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। অন্য নেতাদের মামলারই বা কি হবে? খালেদা জিয়ার সাজা হলে তিনি নির্বাচনে অংশ নেয়ার যোগ্যতা হারাতে পারেন- তার অনুপস্থিতিতে বিএনপির নেতৃত্ব দেবেন কে অথবা কারা? কয়েকজন নেতার নাম এরই মধ্যে খবরে বেরিয়েছে। যদিও কর্মীদের এ ব্যাপারে আশাবাদী মনে হচ্ছে না। একসময় বিএনপিতে বিকল্প নেতৃত্ব হিসেবে ডা. জোবায়দা রহমানের নাম উচ্চারিত হয়েছিল। কিন্তু একটি সূত্রের দাবি, এ ব্যাপারে জিয়া পরিবারের সদস্যরা একমত হতে পারেননি।


     এই বিভাগের আরো খবর