,

বাহুবলে চাঞ্চল্যকর ৪ শিশু হত্যাকান্ডের ১ বছর পাড় : বিচারের অপেক্ষায় নিহতের স্বজনরা

বাহুবল প্রতিনিধি ॥ বাহুবলের সুন্দ্রাটিকি গ্রামে চাঞ্চল্যকর ৪ শিশু হত্যাকান্ডের এক বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ শুক্রবার (১৭ ফেব্র“য়ারী)। হত্যাকান্ডের পর দ্রুত বিচারের মাধ্যমে ৩ মাসের মধ্যে বিচার শেষ করার আশ্বাস দেয়া হলেও ১ বছরে শেষ হয়নি বিচারকার্য। বিচারের অপেক্ষা করছে নিহত শিশুদের স্বজনরা। তাদের দাবি আসামীদের আত্মীয়-স্বজনরা এখনো তাদেরকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে আসছে। এ কারণে তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। আর আইনজীবীরা জানিয়েছেন বিচারক সংকট ও তিন আসামী পলাতক থাকার কারণে বিচারকার্য বিলম্ব হয়েছে। এদিকে নিহত চার শিশুর মা আমেনা খাতুন, ছুলেমা খাতুন, পারুল বেগম ও মিনারা খাতুনের চোখের জল একবছরেও শুকায়নি। গত বছর এই দিনে তাদের প্রাণপ্রিয় শিশুপুত্র তাজেল, মনির, শুভ ও ইসমাঈলের অর্ধগলিত লাশ বালিচাপা অবস্থায় মাটির নিচ থেকে এক এক করে তোলা হয়েছিল। এ করুন দৃশ্য যেমন তাদের মা-বাবা আজও ভুলতে পারেননি, তেমনি ভুলেননি স্বজন-পরিজন ও গ্রামবাসী। এ করুন কাহিনী বর্ণনা করতে গিয়ে আজও তারা চোখের জল ফেলেন। সরকারের দেওয়া প্রতিশ্র“তিতে চার শিশুর পরিবারের জন্য চারখানা ঘর আজও পায়নি তারা। ঘরের মাল পত্র উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফুল ইসলাম গুটিয়ে নিয়েছে। তাদের নামে দেওয়া পাঠাঘারটি হয়েছে সুন্দ্রাটিকি শহীদ স্মৃতি নামে। এতে আজ পুত্র হারা মায়েদের মনের ক্ষত যেন এখন গভীর ক্ষতে পরিণত হয়েছে। ইসমাইলের মা মিনারা খাতুন গতকাল বৃহস্পতিবার এ প্রতিনিধিকে কান্নাজড়িত কন্ঠে আক্ষেপ করে বলেন, আমাদের সন্তান হারিয়ে যখন মানসিকভাবে বির্যপস্ত তখন বিভিন্ন গণমাধ্যমে জানতে পারি প্রধানমন্ত্রী চারখানা বাড়ি ও শিশুদের নামে একটি পাঠাঘার তৈরির নির্দেশনা দিয়েছেন উপজেলা প্রশাসনকে। কিন্তু সরকারের দেওয়া সেই বাড়ি আমরা আজও পাইনি, একটি ঘরের জন্য কিছু মালামাল আমাদের বাড়িতে পৌছলেও কিছুদিন পর ইউএনও’র লোক সেলিমকে দিয়ে তিনি মালামালগুলি বাড়ি থেকে তুলে নিয়েছেন। আমরা পেয়েছি ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি পাঠাঘার। বাস্তবায়নকারীরা পাঠাঘারটি তাজেল, মনির, শুভ ও ইসমাইলের নামে না দিয়ে সুন্দ্রাটিকি শহীদ স্মৃতি নামে দিয়েছে। এখানেতো একাত্তরের অনেক শহীদ আছেন, এছাড়া এরপরেও এই গ্রামে অনেকেই বিভিন্নভাবে মৃত্যুবরণ করে শহীদ হয়েছেন। এটা কোন শহীদের নামে হয়েছে তা তো উল্লেখ করা হয়নি। আসামী পক্ষের হুমকি, মামলায় ভোগান্তি আর প্রশাসনের হেয়ালীপনায় চার শিশুর মায়ের চোখের জল যেন আরও শুকাতে দেয়নি। গত বছরের ১২ ফেব্র“য়ারি বিকেলে খেলার মাঠ থেকে ফেরার পথে অপহরণ হওয়া ওই শিশুদের লাশ ১৭ ফেব্র“য়ারি গ্রামের পার্শ্ববর্তী ইছাবিলের বালু গর্ত থেকে মাটিচাপা লাশ উদ্ধার করা হয়। বিষয়টি দেশ-বিদেশে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। উপজেলার সুন্দ্রাটিকি গ্রামের মোঃ ওয়াহিদ মিয়া তালুকদারের পুত্র স্থানীয় সুন্দ্রাটিকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণীর ছাত্র জাকারিয়া আহমেদ শুভ (৮), তার চাচাত ভাই আব্দুল আজিজ তালুকদার-এর পুত্র একই বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্র তাজেল মিয়া (১০) ও আবদাল মিয়া তালুকদারের পুত্র একই বিদ্যালয়ের ১ম শ্রেণীর ছাত্র মনির মিয়া (৭) এবং তাদের প্রতিবেশী আব্দুল কাদির-এর পুত্র সুন্দ্রাটিকি মাদ্রাসার ছাত্র ইসমাঈল হোসেন (১০) পার্শ্ববর্তী গ্রামের খেলার মাঠ থেকেই ফেরার পথে নিখোঁজ হয়। পরদিন নিখোঁজ জাকারিয়ার পিতা ওয়াহিদ মিয়া তালুকদার বাদী হয়ে বাহুবল থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন। পরে নিখোঁজ শিশু মনির মিয়ার পিতা আবদাল মিয়া তালুকদার বাদী হয়ে বাহুবল মডেল থানায় অজ্ঞাত আসামীদের বিরুদ্ধে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। সুন্দ্রাটিকি গ্রামের নিখোঁজ শিশুদের বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরবর্তী ইছাবিলে একটি পাহাড়ি ছড়ার পার্শ্বেবর্তী পতিত ভূমির বালুর গর্তে মাটিচাপা অবস্থায় একশিশুর হাতের দেখা মেলে। খবর পেয়ে বাহুবল মডেল থানা পুলিশ ওই স্থান থেকে শিশুদের অর্ধগলিত মৃত দেহ উদ্ধার করা হয়। ৪ শিশু অপহরণ ও হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ সুন্দ্রাটিকি গ্রামের আব্দুল আলী বাগাল (৫৫), তার পুত্র জুয়েল মিয়া (২৫), রুবেল মিয়া (২০) ও একই গ্রামের ছায়েদ মিয়া ও হাবিবুর রহমান আরজুকে আটক করে। শিশুদের অপহরণের দায়ে অভিযুক্ত সিএনজি অটোরিকশা চালক বাচ্ছু মিয়া ভারতে পালিয়ে যাবার সময় র‌্যাবের সাথে বন্ধুক যুদ্ধে নিহত হয়। দীর্ঘ তদন্ত শেষে হবিগঞ্জ ডিবি পুলিশের তৎকালীন ওসি মুক্তাদির হোসেন গ্রেফতারকৃতরা সহ আব্দুল আলী বাগালের জৈষ্ঠ্যপুত্র বিল্লাল, বন্ধুক যুদ্ধে নিহত বাচ্চুর ভাই উস্তার ও বাবুলকে আসামী করে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। এ মামলায় সরকার নিযুক্ত বিশেষ পিপি অ্যাডভোকেট ত্রিলোক কান্তি চৌধুরী বিজন বলেন, বিচারক সংকট ও তিন আসামী পলাতক থাকার কারণে বিচারকার্য বিলম্ব হয়েছে। মামলাটি বর্তমানে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে সাক্ষীগ্রহণ পর্যায়ে আছে। এ পর্যন্ত এ মামলায় ৫৭জনের মাঝে ৩০জনের সাক্ষীগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ২২ ও ২৩ ফেব্র“য়ারি মামলায় সাক্ষী গ্রহণের পরবর্তী তারিখ নির্ধারিত আছে।


     এই বিভাগের আরো খবর