,

নবীগঞ্জের কিশোরীকে সৌদি পাচারের অভিযোগে ৩ মানব পাচারকারী আটক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নবীগঞ্জ থেকে এক কিশোরীকে সৌদি পাচারের অভিযোগে আন্তর্জাতিক মানব পাচার চক্রের তিন সদস্যকে আটক করেছে সিআইডি পুলিশ। আটকরা হল, শায়েস্তাগঞ্জ থানার ফরিদপুর গ্রামের রমিজ আলীর পুত্র আবু তাহের (৪৫), কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কাওলিয়া গ্রামের আলহাজ্ব আব্দুল হাশিমের পুত্র এরশাদ উল্লা (৫০) ও ফেনীর সোনাগাজি উপজেলার বাগদানা গ্রামের মাষ্টার সিরাজুল ইসলামের পুত্র শাহজানুর (৪০)। গত বুধবার দুপুর ২টার দিকে সিলেট সিআইডি ব্র্যাঞ্চের এসআই সুমন মালাকারের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঢাকার পল্টন এলাকার গ্রীণ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল হোটেল থেকে তাদের আটক করে। এ সময় নবীগঞ্জ উপজেলার কায়স্থ গ্রামের বাসিন্দা আয়েশা আক্তার (১৭) নামের এক কিশোরীকে উদ্ধার করা হয়। সে ওই গ্রামের এবাদ মিয়ার কন্যা। আয়েশা আক্তারসহ আটক ৩ আসামীকে বৃহস্পতিবার বিকালে হবিগঞ্জ কোর্টে প্রেরণ করা হয়। ভিকটিম আয়েশা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিশাত সুলতানার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। দালাল বলেছিল, সৌদি আরবে গৃহপরিচারিকার কাজ করলে মাসে পাবে ২০ হাজার টাকা বেতন। বছরে একবার দেশে আসতে পারবে। পাবে দুই ঈদের বোনাস। কিন্তু সে সব কিছুই হয়নি। সৌদি আরবে ‘গৃহপরিচারিকা’র কাজে যাওয়া তরুণী দুই মাসের মাথায় ফোন করেন নবীগঞ্জ উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের কায়স্থগ্রামে বাবা-মায়ের কাছে। ফোন করেই বলেন, ‘আম্মা, আম্মা গো, আমারে বাঁচাও তাড়াতাড়ি। আমারে বেইজ্জতি থাইকা বাঁচাও। বাবা আমারে বাঁচাও।’ তরুণীর আধা ঘণ্টাব্যাপী মুঠোফোনের কথাবার্তা ও আত্মীয়স্বজন সূত্রে জানা গেছে, দরিদ্র বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে ওই তরুণী ঢাকার গ্রিন বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে গত ৬ ডিসেম্বর গৃহপরিচারিকার চাকরি নিয়ে সৌদি আরবের দাম্মামে যান। কিন্তু তাঁকে গৃহপরিচারিকার কোনো কাজ দেওয়া হয়নি। হবিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানের ১৯ নারীর সঙ্গে তাঁকেও বন্দি করে রাখা হয়। সেখানকার দালাল তাদের তিন-চারদিনের জন্য একেকজন সৌদি নাগরিকের কাছে ভাড়া দেয়। এরপর শুরু হয় তাঁদের ওপর শারীরিক ও পাশবিক নির্যাতন। সেখানে তাদের উপার্জিত অর্থও দালালরা নিয়ে যায়। কেউ কোনো প্রতিবাদ জানালে তাঁকে কিল-ঘুষি-লাথি মেরে আঘাত করা হয়। তরুণী বিষয়টি মুঠোফোনে তাঁর বাবা-মাকে জানিয়ে তাঁর উদ্ধার করার আকুতি জানান। পাশাপাশি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ রাজনৈতিক নেতাদের কাছে যাওয়ারও পরামর্শ দেন তিনি। এরপর তরুণীর দরিদ্র বাবা-মা নেতাদের কাছে মুঠোফোনের কর্তাবার্তার আধা ঘণ্টার রেকর্ড শুনালে তাঁরা তাঁদের মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা করতে বলেন। দেশীয় দালালদের কাছ থেকে খবর পেয়ে সৌদি আরবের দালালরা ওই তরুণীর কাছ থেকে মুঠোফোন নিয়ে যায়। আদালতকে সে জানায়, গত বছরের শেষের দিকে তাকে সৌদি আরবে নেয়ার জন্য কায়স্থ গ্রামের ইয়াকুব নামের এক ব্যক্তি প্রস্তাব দেয়। প্রথম অবস্থায় সে যেতে রাজি না হলে বিভিন্নভাবে প্রলুব্দ করে ইয়াকুব। এক পর্যায়ে ইয়াকুবের কথায় রাজি হয়ে যায় আয়েশা। কথা থাকে সৌদি আরব যাওয়ার পর সেখানে বেতন পেয়ে টাকা পরিশোধ করবে আয়েশা। কথা মতো চলতি বছরের ১৩ ফেব্র“য়ারি ইয়াকুব সৌদি আরবের প্রেরণের জন্য আয়েশাকে ঢাকায় নিয়ে যায়। এদিকে আয়েশা আক্তার দালালের খপ্পরে পড়েছে এমন খবর জানাজানি হলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশকে অবগত করা হয় বিষয়টি। পুলিশ বিষয়টি সিআইডি সিলেট ব্র্যাঞ্চকে বিষয়টি অবগত করে। এক পর্যায়ে গত বুধবার সিআইডি ঢাকার ওই হোটেলে অভিযান চালিয়ে তাকে উদ্ধার করে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আটক তিন পাচারকারী চক্রের সদস্যকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। একই সাথে উদ্ধার হওয়া কিশোরীকে তার পিতার জিম্মায় দিয়েছেন আদালত। এ ব্যাপারে সিলেট সিআইডি ব্র্যাঞ্চের এসআই সুমন মালাকার জানান, আয়েশা আক্তারকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়াও সিলেট বিভাগের অন্য কোন জেলার কেউ যদি পাচারকারীর কবলে পড়ে থাকে তাদেরও উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। দালাল ইয়াকুবকে ধরতে সিআইডি নজরদারি বাড়িয়েছে।


     এই বিভাগের আরো খবর