,

সৌদি আরবে নির্যাতিতা নবীগঞ্জের কল্পনা বিবি অবশেষে বাড়ি ফিরেছে

আনোয়ার হোসেন মিঠু ॥ সৌদি আরবে উদ্ধার হওয়া নবীগঞ্জ উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের কায়স্থগ্রামের নির্যাতিতা কল্পনা বিবি(২৮) অবশেষে দেশে ফিরে এসে তার পরিবারের কাছে পৌঁছেছে। গত ২০ ফেরুয়ারী সোমবার মেয়েটিকে সৌদি আরবের একটি আদালতে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে বিজ্ঞ বিচারক তাকে বাংলাদেশে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে সোমবার মেয়েটিকে সৌদি আরবের একটি বিমানে বাংলাদেশে প্রেরণ করা হয়। রাত ১টায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে দেশে ফিরে কল্পনা। সেখানে আগে থেকেই তাকে গ্রহণ করতে উপস্থিত ছিলেন তার পিতা এবাদ মিয়া ও বোন আয়েশা। কল্পনা দেশের মাটিতে পা রেখেই ফোন করেন হবিগঞ্জ-সিলেট সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীকে। এমপি’র কাছে কৃতজ্ঞতা জানান কল্পনা বিবি। এব্যাপারে এমপি কেয়া চৌধুরী বলেন, সরকারের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ও সহযোগিতায় কল্পনাকে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। এখন আমাদের কাজ হলো কল্পনার সঙ্গে আরো যারা সৌদি আরবে পাচারকারীদের কবলে রয়েছে তাদের ফিরিয়ে আনা। এ তথ্য নিশ্চিত করে মেয়েটির বোন জানায়, তারা তাকে ঢাকা থেকে আইনী প্রক্রিয়া শেষে বাড়িতে নিয়ে এসেছে। উল্লেখ্য, তরুণীর মুঠোফোনের কথাবার্তা ও আত্মীয়স্বজন সূত্রে জানা গেছে, দরিদ্র বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে কল্পনা বিবি ঢাকার গ্রিন বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে গত ৬ ডিসেম্বর গৃহপরিচারিকার চাকরি নিয়ে সৌদি আরবের দাম্মামে যান। কিন্তু তাঁকে গৃহপরিচারিকার কোনো কাজ দেয়া হয়নি। হবিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানের ১৯ নারীর সঙ্গে তাঁকেও বন্দি করে রাখা হয়। সেখানকার দালাল তাদের তিন-চারদিনের জন্য একেকজন সৌদি নাগরিকের কাছে ভাড়া দেয়। এরপর শুরু হয় তাঁদের ওপর শারীরিক ও পাশবিক নির্যাতন। সেখানে তাদের উপার্জিত অর্থও দালালরা নিয়ে যায়। কেউ কোনো প্রতিবাদ জানালে তাঁকে কিল-ঘুষি-লাথি মেরে আঘাত করা হয়। তরুণী বিষয়টি মুঠোফোনে তাঁর বাবা-মাকে জানিয়ে তাঁর উদ্ধার করার আকুতি জানান। পাশাপাশি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ রাজনৈতিক নেতাদের কাছে যাওয়ারও পরামর্শ দেন তিনি। এরপর তরুণীর দরিদ্র বাবা-মা স্থানীয় নেতাদের কাছে মুঠোফোনের কর্তাবার্তার রেকর্ড শুনালে তাঁরা তাঁদের মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা করতে বলেন। দেশীয় দালালদের কাছ থেকে খবর পেয়ে সৌদি আরবের দালালরা ওই তরুণীর কাছ থেকে মুঠোফোন নিয়ে যায়। গত বছরের শেষের দিকে তাকে সৌদি আরবে নেয়ার জন্য কায়স্থ গ্রামের ইয়াকুব নামের এক ব্যক্তি প্রস্তাব দেয়। প্রথম অবস্থায় সে যেতে রাজি না হলে বিভিন্নভাবে প্রলুব্দ করে ইয়াকুব। এক পর্যায়ে ইয়াকুবের কথায় রাজি হয়ে যায় এবাদ উল্লাহর কন্যা কল্পনা বিবি। কথা থাকে সৌদি আরব যাওয়ার পর সেখানে বেতন পেয়ে টাকা পরিশোধ করবে সে। পুলিশ বিষয়টি সিআইডি সিলেট ব্র্যাঞ্চকে অবগত করে। সিলেট ও হবিগঞ্জের সংরক্ষিত আসনের এমপি আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীর প্রচেষ্টায় সিআইডি পুলিশ সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে মেয়েটিকে উদ্ধার করে। সেই সাথে ঢাকার নয়াপল্টন এলাকার গ্রীণ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল লিঃ ট্রাভেল এজেন্সী থেকে দালাল চক্রের ৩ সদস্যকে আটক করে। আটককৃতরা হলো গ্রীণ বেঙ্গল ইন্টান্যাশনাল লিঃ-এর জেনারেল ম্যানেজার মোঃ শাহজানুর রহমান, পরিচালক এরশাদ উল্লাহ ও আবু তাহের। তাদের মধ্যে আবু তাহের শায়েস্তাগঞ্জের ফরিদপুর গ্রামের রমিজ আলীর ছেলে, শাহজানুর রহমান ফেনী জেলার সোনাগাজী থানার বাগদানা গ্রামের মৃত মাষ্টার সিরাজুর রহমানের ছেলে ও এরশাদ উল্লাহ কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কাওালিয়া গ্রামের মৃত আব্দুল হাসিমের ছেলে। তারা বর্তমানে কারাগারে রয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিলেট সিআইডি’র উপ-পুলিশ পরিদর্শক (অর্গানাইজড) সুমন মালাকার জানান, সৌদি আরবের সকল প্রক্রিয়া শেষে মেয়েটিকে দেশে পাঠানো হয়েছে। তনি বলেন, মামলার আসামী দালাল শেকুল আহমেদ ও ইয়াকুব মিয়াকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান চলছে। কিন্তু তারা আত্মগোপনে থাকার কারণে আমরা দ্রুত তাদের গ্রেফতার করতে পারছি না। তবে আশা করছি শীঘ্রই তাদের গ্রেফতার করা হবে। পাশাপাশি মেয়েটির কাছ থেকে অনেক তথ্য উদঘাটন করা যাবে। এদিকে মেয়েটির পিতা এবাদ মিয়া গতকাল মঙ্গলবার তার কন্যাসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এমপি কেয়া চৌধুরীরর বাসায় যান। সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে এমপির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এমপি কেয়া চৌধুরী তাদের সর্বাত্বক সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন।


     এই বিভাগের আরো খবর