,

আলোর বাতিঘর আব্দুল হক চৌধুরী এম.বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতাল

“মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য” এই গানের বদলে এখন গাইছে “আমাকে আমার মতো থাকতে দাও। সময়ের অস্থিরতায় সবাই যখন ছুটছে নিজেকে নিয়ে এমনিই এক সময়ে সম্পূর্ণ মানবিক সেবার ব্রত নিয়ে ২০১৬ সালের ২৭ ফেব্র“য়ারী মৌলভীবাজার বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের সহযোগিতায় নবীগঞ্জে যাত্রা শুরু করেছে আব্দুল হক চৌধুরী এম.বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতাল। আজ প্রতিষ্ঠানটির প্রথম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। তাই হাসপাতালটির জন্ম ও কর্মের কিছু প্রারম্ভিক কথন তুলে ধরার প্রয়াস মাত্র। ২০০৭ সালে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা আইডিয়ার অধীনে সুনামগঞ্জ সদরে যোগদান করি। নিত্য যাতায়াত করি এই পথে। হাওড় বিজড়িত সুনামগঞ্জ শহরের ৪/৫ কিলোমিটার পূর্বে হাওড় পাড়ে ভার্ড চক্ষু হাসপাতালটি দেখতাম। আর ভাবতাম প্রিয় নবীগঞ্জেও যদি এরকম প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যেত! আক্ষেপটি মনের গহীন কোনে সুপ্ত রয়ে গেল অনেক বছর। তারপর পেশাগত জীবনের চরম চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আবারও নবীগঞ্জে। এ্যাডঃ রাজীব কুমার দে তাপস বলল বাল্য বন্ধু আমেরিকা প্রবাসী আব্দুল হক চৌধুরীর তনয় জাকিরুল চৌধুরী পিতার স্মৃতির জন্য কিছু করতে চায়। পরামর্শের জন্য আমার সাথে যোগাযোগ করবে। সেই সুবাধে দুরালপনে ভাববিনিময় চলছে থেমে থেমে। কেটে গেল বছর খানেক। নবীগঞ্জ জে.কে উচ্চ বিদ্যালয়ের ”৯৫ ব্যাচের বন্ধুরা মিলে ডাঃ জাবেদের উৎসাহে ২০১৫ সালে আগষ্ট মাসে ফ্রি চক্ষু শিবির এর আয়োজন করি। সভাপতির সমাপনী বক্তব্যে মনের গহীনের সুপ্ত সেই বাসনার কথা তুলে ধরি। সভাশেষে মৌলভী বাজার বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের কিংবদন্তী খ্যাত অবৈতনিক সাধারণ সম্পাদক এ এম ইয়াহিয়া মুজাহিদ চাচা আমার বক্তব্যের রেশ ধরে বলেন পারবানি বা। মুজাহিদ চাচা কে বলি যদি আপনি সহযোগিতা করেন অবশ্যই পারব। তিনি সাহস ও অভয় দিলেন। মনের স্বপ্ন ক্রমশঃ রঙ্গীন হচ্ছে। যেই বন্ধু জাকিরুল হক সুমনের কথা মাথায় এলো, সাথে সাথেই বিষয়টির আদ্যপান্ত নিয়ে পরামর্শ নিলাম বন্ধু মাসুদের কাছে। চুড়ান্ত আলোচনার জন্য আমরা অপেক্ষার প্রহর গুণছি বন্ধু সুমনের দেশে আসার। নবীগঞ্জের মানুষ হিসাবে কিছুটা জন্ম নাড়ীর ঋণ শোধের কারণে মাত্র দুদফা বৈঠকেই মুজাহিদ চাচার মাধ্যমে এগিয়ে এলো মৌলভীবাজার বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতাল। শেরপুর রোডে আপাতত একটি ভাড়া বাড়ীতে চলছে সেবা কার্যক্রম। গঠিত হলো নয় সদস্য বিশিষ্ট পরিচালনা কমিটি। যার সভাপতি হলেন হক চাচার বড় ছেলে ফজলুল হক চৌধুরী সেলিম, কোষাধ্যক্ষ মাসুদ মিয়া, নির্বাহী সদস্যরা হলেন হাফেজ নিয়ামুল হক, এ্যাডঃ রাজীব কুমার দে তাপস, ডাঃ জাবেদ আহমদ, জাহাঙ্গীর আলম বাবুল, জাহাঙ্গীর বখত চৌধুরী তুহিন ও জাকিরুল হক চৌধুরী সুমন। যৌথ প্রয়াসে পরিচালিত এই হাসপাতালের চিকিৎসা ও কারিগরি সহায়হতা দিচ্ছে মৌলভীবাজার বিএনএসবি চক্ষু হাসপতাল এবং স্থানীয় ব্যাবস্থাপনা ব্যায় নির্বাহ করছে সুমন। ভবিষ্যতে হাসাতালটি স্বংয়ক্রিয় ভাবে যাতে পরিচালিত হতে পারে সেজন্য মাত্র পঞ্চাশ টাকা ফি (দরিদ্র ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য শিথিল যোগ্য) দিয়ে চক্ষু রোগের সকল ধরণের চিকিৎসা সেবা ও পরামর্শ গ্রহণ করতে পারছে এলাকাবাসী। হাসপাতালটি স্থাপনের কারণে এখন আর এখানকার রোগীদের সিলেট, গোয়ালাবাজার, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ যেতে হয়না। এই এক বছরে প্রায় তিনহাজার রোগী এখান থেকে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেছেন। এবং নাম মাত্র মূল্যে চোখের ছানী অপারেশন করা হয়। চোখের প্রাথমিক পরিচর্যা বিষয়ক কর্মশালার মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, সাংবাদিক, ধর্মীয় নেতা, সমাজসেবী, স্বাস্থ্যকর্মী, পল্লীচিকিৎসক সহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার প্রায় একশত জনকে চোখের যতেœর বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হয়। হোমল্যান্ড আইডিয়াল স্কুল ও হযরত শাহ তাজ উদ্দিন কোরেশী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রায় পনেরোশত ছাত্র-ছাত্রীদের বিনামূল্যে চক্ষু পরীক্ষা ও প্রয়োজনীয় চশমা প্রদান করা হয়। এছাড়াও একুশটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের বিনামূল্যে চক্ষু পরীক্ষা করা হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় চশমা তৈরীর কাজ চলছে, যা কিছুদিনের মধ্যেই বিতরণ করা হবে। আপনারা জেনে আরো আনন্দিত হবেন যে, আব্দুল হক চৌধুরীর পরিবারের পক্ষ থেকে নবীগঞ্জ-হবিগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে তিমিরপুরে (অধুনালুপ্ত পশুর হাটের বিপরীতে) প্রায় পঞ্চাশ শতক ভূমির উপর হাসপাতাল ভবন তৈরীর প্রস্তুতি চলছে। সবার ভালোবাসা ও সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে এই হাসপাতালটি অবশ্যই সেবার একটি বাতিঘর হিসাবে অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করবে।

লেখক ঃ তনুজ রায়
সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হক চৌধুরী এম.বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতাল
ও অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) দিনারপুর কলেজ, নবীগঞ্জ।


     এই বিভাগের আরো খবর