,

নবীগঞ্জে ইউপি সদস্য রহিমা’র মাথা গোঁজার ঠাই নেই

মোঃ জসিম তালুকদার ॥ যার কেউ নেই তার আল্লাহ আছেন, এটাকে বিশ্বাস করেই নবীগঞ্জ উপজেলার এক নারীর পথচলা শুরু। নেই তার বাড়ি, গাড়ী, দামী কাপড় ছোপড়, এমনকি নেই কোন বাসস্থান। স্বামী সন্তান জীবনের ঝুকি নিয়ে ঢাকা-সিলেট মহা সড়কের ব্রীজের নিচে ঝড়, বৃষ্টিকে অতিক্রম করে জীবন যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন জনগণের বিপুল ভোটে নির্বাচিত রহিমা বেগম। ঢাকা-সিলেট মহা সড়কের ব্রীজের নিচে বসবাস, তাও আবার দীর্ঘ ১ যুগ ধরে! চোখ কপালে উঠবে যখন জানবেন ভোটে নির্বাচিত একজন জনপ্রতিনিধি তিনি। নাগরিক সুবিধার দেখবাল করলেও নিজের মাথা গোজাঁর ঠাই নেই। দীর্ঘদিন ঘটক হিসাবে কাজ করেছেন তিনি। আর মাসে ২/১টি বিয়ে পড়াতে পারলেও নুন আস্তে পাস্থা ফুরাতো। ঘটকালির সুবাধে এলাকার সকল শ্রেনী পেশার লোকজনের সাথে রহিমার ছিল সু-সর্ম্পক। কিন্তু অভাব কখনোই থামাতে পারেনি রহিমা বেগমকে। সবার আগে ছুটে যান এলাকাবাসীর সূখে, দুঃখে তাদের পাশে। মানব সেবার প্রত্যয়ে তিনি ৩ বার নির্বাচন করেছেন। কিন্তু খুবই পরিতাপের বিষয় গত ২বারের নির্বাচনে তিনি পরাজয় মেনে নিলেও গেল বছরের ২৮মে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর থেকে কোমর বেঁধে নেমে পড়েন নির্বাচনী প্রচার-প্রচারনায়। অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে ৪ জন প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মাইক মার্কা প্রতীক নিয়ে। তবে, সচেতন ভোটারা সবার চেয়ে যোগ্য ব্যক্তি দেখে বিচার-বিবেচনা করে অপর তিন প্রাথীর চেয়েও প্রায় ১৮’শ ভোট বেশি পেয়ে জনপ্রতিনিধি হিসাবে রহিমা বেগমকে নির্বাচিত করেন। এ খবর প্রচার হওয়ায় গতকাল দুপুরে নবীগঞ্জ উপজেলার ব্যস্ততম জনবহুল ঢাকা-সিলেট মহা সড়কের আউশকান্দি ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন মনু খালের ব্রীজের নিচে দেখতে যান নবীগঞ্জ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা নারী উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি নাজমা বেগম। সাথে ছিলেন, নবীগঞ্জ উপজেলা নারী উন্নয়ন ফোরামের সাধারন সম্পাদ রাবিয়া বেগম, সদস্য মরিয়ম বেগম, রুজিনা বেগম, শিবু রানী দেব ও চ্যানেল এস/ দৈনিক হবিগঞ্জ সমাচার নবীগঞ্জ প্রতিনিধি বুলবুল আহমদ প্রমূখ। জনদরদি নবীগঞ্জ উপজেলা ভাইস নাজমা বেগম ইউপি সদস্য রহিমা বেগমের বসবাসের ঘর ব্রীজের নিচে আগমনে ইউপি সদস্য রহিমা বেগম সহ তার পরিবারের লোকজনের মনে যেন আনন্দের বন্যা বইছিল। কথা বলেন একজন আরেক জনের সাথে। শুরু হয়ে যায় রহিমার জীবন সংগ্রামের সুখ, দুঃখের কাহিনী। ইউপি সদস্য রহিমা বলেন, বয়স প্রায় ৫০শের কাছাকাছি হঠাৎ পরপারে চলে যাব। কিন্তু মরার আগ মূর্হুতে কি সন্তানদের মাথাগোঁজার ঠাই হবে? দিন রাত ওই ব্রীজের উপর দিয়ে সারাদেশের ছোট বড় কয়েক হাজার যান বাহন চলাচল করে। আর বর্ষার সময় খালে পানি হলে বেড়ে যায় দূর্ভোগ। আমার ২ পুত্র ও ১ কন্যা সন্তান রয়েছে। অসুস্থ্য স্বামী ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে মেয়েকে নিয়ে বেচেঁ থাকার তাগিদে দিশেহারা হয়ে পড়েছি। আমি আউশকান্দি ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামের মকদ্দুছ মিয়ার স্ত্রী বলে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের গলায় ধরিয়ে হাউমাউ করে কান্না শুরু করেন রহিমা বেগম। এমন এক হৃদয় বিদারক ঘটনা দেখে চোখের পানি কেউ ধরে রাখার মতো নয়!


     এই বিভাগের আরো খবর