,

নবীগঞ্জের বোয়ালজুর গ্রামে ভূমিখেকোদের তান্ডবে ভিটেমাটি ছাড়া দুদু মিয়ার পরিবার

সংবাদদাতা ॥ নিজের পিতার তৈরীকৃত দালান বাড়ি-ঘর আজও তাদের পিতার স্মৃতি বিজড়িত হয়ে দাড়িয়ে থাকলেও ভোগ করছেন একদল ভূমিখেকো চক্র। বাড়ি উঠানে দাড়াতে পারলেও ঘরে প্রবেশের ক্ষমতা নেই! আজ থেকে ৫ বছর পূর্বে তাদের নিজের ঘর-বাড়ি থেকে মারপিট করে বের করে দিয়েছে। নিজের সম্পত্তি হারিয়ে পাগলের ন্যায় বিচারের দাবীতে সমাজপতিদের ধারে ধারে ধর্না দিচ্ছেন। বছরের পর বছর ধরে ঘটনাটি ঘটছে নবীগঞ্জ উপজেলার দীঘলবাক ইউনিয়নের ক্রামইজোন হিসাবে খ্যাত বোয়ালজুর গ্রামে। এ ঘটনায় গত কয়েকদিন ধরে বোয়ালজোর গ্রামে আবারো টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। বোয়ালজোর গ্রামের মৃত হাজী আনফর উল্লার পুত্র কাঠমিস্ত্রী দুদু মিয়া জানান, তার বাবার জীবদ্দশায় বাবার নিজের তৈরী দালান- কোটা, ঘর-বাড়ি সহ প্রায় ১ কেদার ২৬ শতাংশ বাড়ি রমক ভূমি ও ফসলী জমি প্রায় ১০ একর সহ দেড় কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ, ১পুত্র সন্তান, ৭ কন্যা সন্তান ও ১ স্ত্রী রেখে তিনি মারা যান। তিনি মারা যাওয়ার পরে দুদু মিয়া ও তার মা- বোন ও সংসার নিয়ে মোটামোটি সুখে শান্তিতে বসবাস করে আসছিলেন। পেশায় দুধু মিয়া একজন কাঠমিস্ত্রী। কর্মস্থল নবীগঞ্জ শহরে। এরই সুবাদে বেশীর ভাগ সময়ই দুধু মিয়া নবীগঞ্জ শহরেই থাকতো। তার পরিবার পরিজন থাকতো বাড়িতেই। তার বৃদ্ধ মা সুনু বিবি (৭০), বোন রেবেকা বেগম (৩০), দুধু মিয়ার স্ত্রী সুফিয়া বেগম (৩৫), ছেলে তুহিন (১১), মেয়ে শিরিন (৯), লিপি (৭)কে নিয়ে বাড়িতে থাকতেন তিনি। সুখের সংসারে হঠাৎ নেমে আসলো ভূমি খেকোদের আক্রমন। তার পিতৃ সম্পদ গ্রাস করিতে মরিয়া হয়ে ওঠে প্রতিবেশী কয়েক ব্যক্তি ও লাঠিয়াল বাহিনী। মৃত আনফর উল্লার পুত্র দুদু মিয়া ও তার বোনদের সম্পদ গ্রাস করিতে নানা কৌশল অবলম্বন করে প্রভাবশালীরা। মৃত হাজী আনফর উল্লাহর মালিকাধীন ঘর- বাড়ি তৈরীকৃত বাড়ি রকম ভূমি বোয়ালজোর মৌজার জে.এল. নং ৪২, এর আওতাধীন সাবেক খতিয়ান ১৫৫, সাবেক দাগ ৭০৯, সাবেক খতিয়ান ১২৭, সাবেক দাগ ৭১১, সাবেক খতিয়ান ১৫৬ ও ১৫৯, সাবেক দাগ ৭০৫। উক্ত দাগগুলোতে মোট ৫৬ শতক জায়গা সহ বিভিন্ন দাগ খতিয়ানের প্রায় ১০ একর ফসলী জমি সহ আরো অনেক জায়গা রয়েছে। এ সব জায়গা এখন ভূমিখেকোদের দখলে! এরই জের ধরে বিগত ২০১২ সালে নবীগঞ্জ থানায় একটি সাজানো মামলা এফ.আই.আর ভুক্ত করিয়ে মামলা নং ৩৬৪/১২ নবী দায়ের করিয়ে আলী হোসেন এর বড় ভাইকে উক্ত মামলার বাদী বানানো হয়। দুধু মিয়া গংদের সাথে প্রকৃতপক্ষে কোন ঘটনা না ঘটলেও মারামারি, রাহাজানি সহ নানা কাল্পনিক নাটক সাজানো হয় উক্ত মামলায় দাবী করেন দুদুু মিয়া। ঐ মামলায় আসামী করা হয় দুদু মিয়া ও তার মা- বোন সহ মোট ১৫জনকে। থানায় মামলা রেকর্ড করেই দুদু মিয়াকে তার কর্মস্থল নবীগঞ্জ শহর থেকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। উক্ত মামলায় দুদু মিয়ার মা, বোন সহ অন্যান্যরা আদালতে গত ২৫.১০.২০১২ ইংরেজী তারিখে হাজিরা দিতে গেলে তাদের বাড়িতে দুদু মিয়ার বড় বোন হালেমা বেগম ও তার পুত্র বধু রাহেনা বেগমকে বাড়িতে রেখে যান। এর সুযোগে ভূমি খেকো বাহিনীর লোকজন একজোট হয়ে দুদু মিয়ার ঘর-বাড়ি দালান কোটা দখলের মিশনে নামে। এই ভূমি খেকো বাহিনী হালেমা বেগম ও তার পুত্র বধুকে অশালিন ভাষায় গালিগালাজ করে অস্ত্র- সস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ঘরে থাকা ২জনকেই এলোপাতারি মারপিট করে ঘর থেকে বের করে দেয় এবং দুদু মিয়ার বাড়ীঘর জবর দখল করে রাখে। দুদু মিয়ার মা-বোনেরা হবিগঞ্জ আদালত থেকে মামলার হাজিরা শেষে বাড়ি ফিরে তার ঘরে ডুকতে চাইলে ভূমি খেকো বাহিনী তাদেরকে বাড়ি থেকে মারপিট করে তাড়িয়ে দেয়। এর পর থেকে বিজ্ঞ আদালতে পিতৃ সম্পত্তি উদ্বারের জন্য মামলা দায়ের করেন মামলা নং ১০১৮/১২ নবী সহ তাদের নানা অপকর্মে আরো ৪টি মামলা সহ মোট ৫টি মামলা দায়ের করেন। তৎকালীন সময়ে বিজ্ঞ আদালতের ১৪৪ ধারা অমান্য করেও জবর দখলে বহাল তবিয়তে থাকে। ভূমিখেকো বাহিনীর তান্ডবে ঐ এলাকাবাসী অতিষ্ট হয়ে পড়েছে। স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার সহ গণমান্য মুরুব্বিদেরকে তারা পাত্তা দেয় না। ভূমিখেকো বাহিনীর বিরুদ্ধে আরো নানা অপ-কর্মসহ মোট ১১টি মামলা রয়েছে। এলাকার সচেতন মহলের প্রশ্ন ভূমিখেকো বাহিনীর খুটির জোর কোথায়? গত শনিবার দুপুরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কান্না জড়িত কণ্ঠে অসহায় দুধু ও তার বোন হালেমা বেগম, আয়বুল বেগম, রাহেমা বেগম, আছমা বেগম, রশিদা বেগম, রেবেকা বেগম। উপরোক্ত তথ্যগুলো দিয়ে তাদের পিতৃ সম্পদ ঘর, বাড়ি ফেরত পেতে স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারের প্রতি জোর দাবী জানান।


     এই বিভাগের আরো খবর