,

আজ হবিগঞ্জ পৌরসভার দায়িত্ব গ্রহন করছেন মেয়র জি কে গউছ

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ অবশেষে দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর হবিগঞ্জ পৌরসভার দায়িত্ব গ্রহন করছেন টানা ৩ বারের নির্বাচিত মেয়র আলহাজ্ব জি কে গউছ। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় তিনি দায়িত্ব গ্রহন করবেন। পৌরসভার সচিব নুরে আলম সিদ্দিকী এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পৌরসভার সচিব নুরে আলম সিদ্দিকী বলেন, মেয়র জি কে গউছের সাময়িক বরখাস্তের আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট ডিভিশনে দায়েরকৃত রীট পিটিশনের আদেশ প্রতিপালনে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-সচিব আব্দুর রউফ মিয়া হবিগঞ্জ পৌরসভাকে চিঠি দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় আনুষ্ঠানিকভাবে মেয়র জি কে গউছকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হবে। ইতিমধ্যেই পৌরসভার পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে। এদিকে মেয়র জি কে গউছ পৌরসভার দায়িত্ব গ্রহন করছেন এমন সংবাদে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে পৌরবাসী। ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর পৌরবাসী রায় দিয়েছিল ব্যালটে। প্রতিক্ষায় ছিলেন কখন দায়িত্ব নিবেন তাদের ভোটে নির্বাচিত মেয়র জি কে গউছ। কিন্তু আইনী জটিলতায় আটকে ছিল দায়িত্ব গ্রহনের আনুষ্ঠানিকতা। যদিও ২০১৬ সালের ২৭ জানুয়ারী প্যারোলে মুক্তি দিয়ে শপথ গ্রহন করানো হয়েছিল। সেই থেকে অপোর পালা। অবশেষে ৪৪৮ দিন পর পৌরবাসীর মধ্যে ফিরে এসেছে সেই মান্দ্রেণ। দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হবে মেয়র জি কে গউছকে। এই সংবাদে স্বস্তি ফিরে এসেছে হবিগঞ্জ পৌরবাসীর মধ্যে। অপরদিকে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরাও আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠেছেন। সব মিলিয়ে স্বরণীয় করে রাখতে চায় কারাগার থেকে নির্বাচিত মেয়র জি কে গউছের দায়িত্ব গ্রহনের দিনটিকে। ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর কারাগার থেকে ৩য় বারের মত মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর দায়িত্ব বুঝিয়ে না দিয়েই ২০১৬ সালের ২০ মার্চ স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ এক আদেশে মেয়র জি কে গউছকে সাময়িক বরখাস্থ করে। ২০১৭ সালের ৪ জানুয়ারী ৭শ ৩৯ দিন কারাভোগের পর জামিনে মুক্তি পান মেয়র জি কে গউছ। ২২ জানুয়ারী স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের সাময়িক আদেশের বিরুদ্ধে তিনি হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। ২৩ জানুয়ারী মেয়র জি কে গউছকে সাময়িক বরখাস্থ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দেওয়া আদেশ স্থগিত করেন হাইকোর্ট। বিচারপতি নাইমা হায়দার ও খান মোঃ সাইফুর রহমানের বেঞ্চ এই স্থগিতের আদেশ দেন। এই আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্টপক্ষ হাইকোর্ট বিভাগের চেম্বার আদালতে আপিল করেন। ৩০ জানুয়ারী আদালত শোনানী শেষে হাইকোর্টের দেয়া আদেশ বহাল রাখেন। এই আদেশের ফলে মেয়র জি কে গউছকে হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে আইনগত আর কোন বাধাঁ ছিল না। কিন্তু রহস্যজনক কারণে মেয়র জি কে গউছকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের চিঠি আসতে প্রায় পৌনে ২ মাস সময় অতিবাহিত হয়। উল্লেখ্য, ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারী হবিগঞ্জের বৈদ্যের বাজারে স্থানীয় আওয়ামীলীগ আয়োজিত জনসভায় দুর্বৃত্তদের গ্রেনেড হামলায় নিহত হন সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া। এই হত্যাকান্ডের প্রায় ১০ বছর পর ৩য় সম্পূরক চার্জশীটে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ও হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মেয়র জি কে গউছকে আসামী করা হয়। ২০১৪ সালের ২১ ডিসেম্বর কিবরিয়া হত্যা মামলার চার্জশীট আদালতে গৃহীত হলে ২৮ ডিসেম্বর স্বেচ্ছায় আদালতে আত্মসমর্পন করেন তিনি। আদালত মেয়র জি কে গউছের জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। কারাগারে থাকা অবস্থায় ২০০৪ সালের ২১ জুন সুনামগঞ্জে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের জনসভায় বোমা হামলার ঘটনায় দীর্ঘ প্রায় ১২ বছর পর মেয়র জি কে গউছকে শ্যোন এরেস্ট দেখানো হয়। ২০১৫ সালের ১৮ জুলাই হবিগঞ্জ কারাগারের ভিতরে পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ পড়েন জি কে গউছ। নামাজ শেষে নিজ করে যাওয়ার পথে ইলিয়াছ নামের একাধিক হত্যা মামলার কয়েদি প্রাণে হত্যার উদ্দেশ্যে জি কে গউছকে আঘাত করে। এতে তিনি গুরুতর আহত হলে ওই দিনই নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসা শেষে পাঠিয়ে দেয়া হয় সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে। ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর কারাগার থেকেই হবিগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মেয়র জি কে গউছ। এই নির্বাচনে অনেকটা অভিভাবকহীন অবস্থায় প্রতিদ্বন্ধিতা করেছেন তিনি। কিন্তু জনগনের ভালবাসার কাছে সকল রক্তচক্ষু ধুলিস্যাৎ হয়ে যায়। টানা ৩য় বারের মত মেয়র নির্বাচিত হন জি কে গউছ। ২০১৭ সালের ৪ জানুয়ারী ৭শ ৩৯ দিন কারাভোগের পর সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ও হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মেয়র জি কে গউছ। এরপূর্বে ২০০৪ সালে জি কে গউছ হবিগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। জীবনের প্রথম এই নির্বাচনে অংশ নিয়েই তিনি বিপুল ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। নির্বাচিত হওয়ার পর মাত্র ২ বছর ক্ষমতায় ছিল তার রাজনৈতিক দল বিএনপি। দুই বছরে হবিগঞ্জ পৌর এলাকায় যে উন্নয়ন হয়েছে তা যে বিগত ২৫ বছরেও হয়নি সে কথা স্বীকার করেন তার প্রতিপক্ষের লোকেরাও। কারণ বিএনপি’র বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ মরহুম অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের সাথে ছিল জি কে গউছের অত্যান্ত ঘনিষ্ট সম্পর্ক। ফলে রাজনীতির পাশাপাশি হবিগঞ্জের উন্নয়নে জি কে গউছ মনোনিবেশ করেন। তিনি হবিগঞ্জ পৌর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পূর্বেই হবিগঞ্জে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করেন। ২০১১ সালের ১৮ জানুয়ারী ২য় বারের মত মেয়র নির্বাচিত হন জি কে গউছ। আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থীকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচন হন তিনি। এই নির্বাচনে ছিল উন্নয়নের স্বপক্ষে জনতার রায়। শত প্রতিকুলতার মধ্যেও বিপুল ভোটে জি কে গউছ মেয়র নির্বাচিত হয়ে জনগনের সেবায় নিজেকে উৎসর্গিত করেন। দীর্ঘ দিনের অবহেলিত এবং পায়জামা শহর হিসেবে খ্যাত হবিগঞ্জ পৌরসভাকে একটি মডেল পৌরসভায় রুপান্তর করতে তিনি দিন রাত কাজ করেছেন। ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ডের মাধ্যমে তিনি হবিগঞ্জ শহরের চেহারা পাল্টিয়ে দেন। জি কে গউছের প্রচেষ্টায় শহরের রোড ডিভাইডার স্থাপন, খোয়াই নদীর মাছুলিয়ায় এম সাইফুর রহমান ব্রীজ, শহরের কামড়াপুর থেকে নছরতপুর পর্যন্ত বাইপাস সড়ক নির্মাণ, নতুন বাস টার্মিনাল নির্মাণ, খোয়াই নদীর উপর জেনারেল এম এ রব ব্রীজ, শাহ এএমএস কিবরিয়া ব্রীজ, এম সাইফুর রহমান টাইন হল, বেবীস্ট্যান্ড এলাকায় পানির ২য় ট্রিটম্যান্ট প্লান স্থাপন, শহরে অসংখ্য ড্রেইন ও রাস্তা নির্মাণ ছিল উল্লেখযোগ্য। ফলে হবিগঞ্জ পৌরবাসী এখন উন্নত নাগরিক সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন। পৌরসভায় এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে জি কে গউছ কোন ধর্মীয় গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেননি। তিনি সকল ধর্মের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। মেয়রের দায়িত্ব পালনকালে তিনি সরকারিভাবে ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, বাহরাইন, ওমান, সিঙ্গাপুর ও ফিলিপাইন সফর করেন। এসব দেশ সফরকারে তিনি ¯’ানীয় সরকারের সাথে কেন্দ”ীয় সরকারের সম্পর্ক, তাদের উন্নয়মূলক কর্মকান্ড, শিােেত্র অগ্রগতি, যোগাযোগ, স্বা¯’্য, চিকিৎসা, বাস¯’ানসহ নানাবিদ বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। তিনি পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই নিজের সম্মানী ভাতার টাকা কন্যাদায়গ্রস্থ পরিবারের সাহায্যার্থে দান করছেন। এ পর্যন্ত তিনি পৌরসভার তহবিল থেকে ব্যক্তিগত খরচের জন্য কোন অর্থ নেননি। তিনিই একমাত্র পৌরসভার মেয়র, দায়িত্ব নেয়ার পর প্রতি বছর পৌরসভার পক্ষ থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধণা প্রদান, পবিত্র হজ্ব ও ওমরা বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান, কৃতি ছাত্র ছাত্রী ও তাদের অভিভাবকদের সংবর্ধণা প্রদান, বৈশাখী মেলা, বই মেলা, কর মেলা, পিঠা উৎসব, সুন্নতে খৎনা ও গণবিয়ের অনুষ্ঠানের প্রবর্তন করেন। মেয়র জি কে গউছ অত্যান্ত সাহসিকতার সাথে প্রতি বছর চ্যাটেলাইট টেলিভিশনে সরাসরি প্রশ্নোত্তর বিষয়ক পৌরবাসীর মুখোমুখি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। এসব ব্যতিক্রম ধর্মী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি স্থানীয় সরকার বিভাগে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। ফলশ্র“তিতে তিনি ২ বার বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গোল্ড মেডেল অর্জন করেন।


     এই বিভাগের আরো খবর