,

জঙ্গি দমনে কঠোর অবস্থানে হবিগঞ্জ আইনশৃংখলা বাহিনী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জ শহরসহ জেলার ৮টি উপজেলা ও ৬টি পৌরসভার আবাসিক এলাকায় বসবাসকারী প্রায় ২ লক্ষাধিক ভাড়াটিয়ার তথ্য নেই অধিকাংশ বাড়ির মালিকদের কাছে। আর বাড়ির মালিকদেরও তথ্য নেই প্রশাসনের হাতে। কোন বাড়িতে কে অবস্থান করছে বা কোন বাড়ির মালিক কে অনেকগুলোর সম্পর্কে তথ্য নেই প্রশাসনের নিকট। জঙ্গি হামলা ঠেকাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে তথ্য দিতে বাড়ির মালিকদের পরামর্শ দিয়েছেন আইনশৃংখলা বাহিনী। সিলেটের পর জেলার পার্শ্ববর্তী মৌলভী বাজারে দুটি স্থানে জঙ্গি আস্তান সন্ধান পেয়েছে আইনশৃংখলা বাহিনী। চলছে অভিযানের প্রক্রিয়া। যে কোন সময় চালানো হতে পারে অভিযান। এভাবে একের পর এক জঙ্গি হামলার ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। তবে জঙ্গি দমনে কঠোর অবস্থানে রয়েছে আইনশৃংখলা বাহিনী। সার্বক্ষণিক নজরধারি রাখছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সদস্যরা। বিভিন্ন মাধ্যমে নজরধারি করা হচ্ছে সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও প্রতিষ্টানের উপর। গত বছরের ১ জুলাই রাজধানী ঢাকার সবচেয়ে সুরক্ষিত এলাকা গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় যে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর নড়ে-চড়ে বসে দেমের আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী। গত এক বছরেরও অধিক সময় ধরে দেশব্যাপী চলছে জঙ্গি বিরোধী অভিযান। অভিযানের পর পর সরকার ও আইনশৃংখলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বার বার নির্দেশনার পরেও অধিকাংশ মালিকরা তাদের ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহ করে এখনো সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দেননি। নিজেদের অজ্ঞতা ও বাসা ভাড়া বেশি পাওয়ার আশায় কতিপয় বাড়ির মালিকরা দায়-দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ প্রশাসনের। অবশ্য শুধু বাড়ির মালিকই এর জন্য একা দায়ী নয় ভাড়াটিয়াদেরও রয়েছে অবহেলা। ভাড়াটিয়াদের কাছে অনেক বাড়ির মালিক তথ্য প্রদানের জন্য ফরম দিলেও বেশির ভাগ ভাড়াটিয়া ফরম পূরন করে মালিকের হাতে জমা দেননি। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি হামলাসহ পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা বিস্ফোরণের একাধিক ঘটনায় দেশবাসীকে আতংখিত করে তুলে। দেশের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিল ঢাকার শুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরার জঙ্গি হামলা। ওই হামলার পুর্বে হামলাকারী সন্ত্রাসীরা তাদের বিভিন্ন পরিচয় দিয়ে বাসা ভাড়া নিয়ে অবস্থান করে। বিষয়টি তদন্তে প্রশাসনের কাছে বেড়িয়ে আসলে। তখনই প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাড়ির মালিকদের নির্দেশনা দেয়া হয় ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দেয়ার। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় কয়েক বার। কিছু কিছু মালিক ও ভাড়াটিয়া তারা তাদের নিজ দায়িত্বে জমা দিলেও অধিকাংশ বাড়ির মালিক তা সংগ্রহ করে এখনো থানায় জমা দেননি বলে পুলিশ সুত্র জানায়। দেখা যায়, শুধু হবিগঞ্জ পৌর এলাকার উমেদনগর, চৌধুরী বাজার, নোয়াবাদ, বগলা বাজার, যশেরআব্দা, নোয়াহাটি, গার্নিং পার্ক, রামকৃষ্ণ মিশন রোড, ঘাটিয়া বাজার, বাণিজ্যিক এলাকা, বদিউজ্জামান সড়ক, পুরান মূন্সেফি, শ্যামলী, উত্তর শ্যামলী, দক্ষিণ শ্যামলী, মাস্টার কোয়াটার, মুসলিম কোয়াটার, নিউ মুসলিম কোয়াটার, সিনেমা হল ঝিলপাড়, গোসাইপুর, জঙ্গল বহুলা, ইনাতাবাদ, স্টাফ কোয়াটার সড়ক, পুরাতান হাসপাতাল আবাসিক এলাকা, কোরেশ নগর, অনন্তপুর, দক্ষিণ অনন্তপুর, রাজনগর, কলেজ কোয়ার্টার, বেবি স্টেশন, ঘোষ পাড়া, কোর্ট স্টেশন, ফায়ার সার্ভিস রোড, মোহনপুর, শায়েস্তানগর, মাহমুদাবাদ, তেঘরিয়া, ঈদগাহ সড়ক, পোদ্দার বাড়ি আবাসিক এলাকাসহ ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৫০ হাজার ভাড়া বাড়ি রয়েছে। এসব এলাকায় বসবাস করেন প্রায় লক্ষাধিক ভাড়াটিয়া। এছাড়াও জেলার নবীগঞ্জ, বাহুবল, বানিয়াচং, আজমীরীগঞ্জ, লাখাই, শায়েস্তাগঞ্জ, মাধবপুর ও চুনারুঘাট উপজেলায় রয়েছে আরো প্রায় লক্ষাধিক ভাড়াটিয়া। তাদের অধিকাংশ লোকেরও তথ্য নেই মালিকদের হাতে। যার ফলে অনেকটা অনিরাপদ অস্থায় বসবাস করছেন জেলার প্রায় ১২/১৩ লক্ষাধিক মানুষ। উপজেলা গুলোর মধ্যে হবিগঞ্জ সদর, মাধবপুর, নবীগঞ্জ ও বাহুবলের বেশ কিছু এলাকা অতিগুরুত্বপূর্ণ। ওই সব এলাকায় সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন শিল্পকারখানা স্থাপন হয়েছে। ওইসব শিল্পকারখানায় কর্মরত দেশি-বিদেশি অনেক নাগরিক ওইসব এলাকায় বসবাস করছেন। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়ি থেকে কয়েক দফায় বেশ কয়েকজন জঙ্গি সদস্য গ্রেফতার, বিস্ফোরক দ্রব্যসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। সীতাকুণ্ড, ঢাকার আশকোনায় র‌্যাবের অস্থায়ী ব্যারাকে আত্মঘাতী জঙ্গি হামলা, সিলেটের আতিয়া মহলে জঙ্গির আস্তানার সন্ধান অতঃপর বোমা বিস্ফোরণ ও হতাহতের ঘটনা ঘটে। গত ২দিন পূর্বে মৌলভীবাজারের দুটি স্থানে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পেয়েছে আইনশৃংখলা বাহিনী। এসব ঘটনায় বসবাসকারী সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া জঙ্গি হামলার ঘটনায় জঙ্গিরা ভুয়া পরিচয় দিয়ে বাসা ভাড়া নিয়ে ওই এলাকায় তাদের কর্মকাণ্ড চালায়। প্রশাসনের নির্দেশনার পর পরই জেলা সদর ও বিভিন্ন উপজেলার আবাসিক এলাকার অনেক বাড়ির মালিক এবং তত্তাবধায়করা ভাড়াটিয়াদের গতি-বিধির উপরও নজর রাখছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাড়ির মালিক জানান, বর্তমান প্রেক্ষাপটে ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহ করা বাড়ির মালিকের দায়িত্ব। বিগত সময়ে ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহে বাড়ির মালিকদের উপর প্রশাসনের চাপ ছিল। ওই সময় ভাড়াটিয়াকে সন্দেহ হলে পুলিশকে অবহিত করারও আহ্বান জানিয়েছিল আইনশৃংখলা বাহিনী। কিন্তু হঠাৎ করেই তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম আবার বন্ধ হয়ে যায়। এখনো পর্যন্ত উপজেলা ও পৌরসভার আবাসিক এলাকার অধিকাংশ ভাড়াটিয়াদের তথ্য নেই বাড়ির কর্তাদের কাছে। এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আ স ম সামছুর রহমান ভূইয়া বলেন, আমরা খুব দ্রুত তথ্য সংগ্রহের কাজ করে যাচ্ছি। তাড়াতাড়ি সব তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষ হবে। এ ক্ষেত্রে তিনি বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়াদের সহযোগীতা কামনা করেন। তিনি বলেন ইতি মধ্যে আমরা ৯টি থানা এলাকায় কয়েক হাজার ভাড়াটিয়া ও মালিকদের কাছে তথ্য ফরম বিতরণ করেছি। অনেক এলাকা থেকে তথ্য ফরম পূরণ করে থানায় জমাও দিয়েছে। বাকিগুলো জমা হয়ে যাবে। তিনি বলেন কেহ ভুল তথ্য দিল কিনা তা প্রথমে বাড়ির মালিক যাছাই-বাছাই করবেন। পরে আইনশৃংখলা বাহিনী সেটি আবার যাছাই-বাছাই করবে। যদি কোন ভাড়াটিয়া বা বাড়ির মালিক ভুল তথ্য উপস্থাপন করেন তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জঙ্গি দমনে আমারা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থান নিয়েছি। যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে। জঙ্গি দমনে কঠোর অবস্থানে আইনশৃংখলা বাহিনী উল্লেখ্য করে তিনি শহরবাসীসহ সকলের সহযোগীতা কামনা করেন। তিনি বলেন জনগণের সহযোগীতা ছাড়া পুলিশ বা অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পক্ষে এসব নাশকতা ঠেকানো অনেক কঠিন। কোন এলাকায় সন্দেহভাজন এমন কোন ব্যক্তি দেখতে পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক পুলিশকে অবহিত করার জন্য অনুরোধ জানান তিনি।


     এই বিভাগের আরো খবর