,

রাজনীতিতে ফের বাড়ছে উত্তাপ ॥ চলছে নির্বাচনী প্রস্তুতি

সময় ডেস্ক ॥ রাজনীতিতে ফের উত্তাপ ছড়াচ্ছে। জাতীয় নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে রাজনৈতিক দলগুলোর পাল্টাপাল্টি অভিযোগ। লক্ষ্য একটাই পরস্পরকে ঘায়েল করে নিজেদের পক্ষে জনমত গঠন করা। প্রধান দুই দলের এই দৌড়ে পিছিয়ে নেই ছোট ছোট দলগুলোও। সবমিলেই দেশের রাজনীতি ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। মঙ্গলবার রাতে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, আওয়ামী লীগ এতই অপকর্ম করছে যে তারা এখন পালানোর রাস্তা খুঁজছে। কিন্তু এমন সময় সামনে আসছে যে তারা পালাতেও পারবে না। ওবায়দুল কাদেরের একটি বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে খালেদা জিয়া আরো বলেন, ‘একটি দলের সাধারণ সম্পাদক যা বলেন, তা থেকে বুঝে নেওয়া যায় তিনি এমনি এমনি ওই কথা বলছেন না। তাদের পালানোর সময় হয়ে গেছে। এ জন্য তারা সম্পদ লুটানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তারা পালানোর জন্য তৈরি হোক, বিএনপি জনগণের অধিকার রক্ষার জন্য তৈরি হচ্ছে।’ খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপি নির্বাচনে যেতে চায়। তবে সে নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে, শেখ হাসিনার অধীনে নয়। তিনি অভিযোগ করেন, শেখ হাসিনার অধীনে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে, তার কোনোটাই সুষ্ঠু হয়নি। ফলে সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্র প্রস্তুত হলেই নির্বাচনে যাবে বিএনপি। তিনি বলেন, আন্দোলনের মাধ্যমেই এই বিদেশি তাবেদার জুলুমবাজ সরকারকে হটিয়ে গণতন্ত্রের মাধ্যমে মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনা হবে। সে জন্য প্রয়োজন সংগঠন। বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনগুলো ইতিমধ্যেই পুনর্গঠিত হয়েছে। খালেদা জিয়া বলেন, লুটেরাদের জনগণ কখনো ভোট দেবে না। ৫ জানুয়ারি তারা ১৫৪টি আসন চুরি করে নিয়েছিল। এবার সেটা সম্ভব হবে না। গণতন্ত্রে যারা বিশ্বাস করে, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসে তাদের এটা মাথায় রাখা উচিত যে, জনগণ আবার ভোট দেবে। অন্যদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে বুধবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আমি আমার দলের নেতাদের সতর্ক করেছিলাম, বলেছিলাম- খাই খাই ভালো না। কিন্তু তারা (বিএনপি) এখন আমার বক্তব্য নিয়ে পলিটিক্স শুরু করে দিয়েছে। ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, আমি তিক্ততা বাড়াতে চাই না। কিন্তু আওয়ামী লীগের হাওয়া ভবন আর খাওয়া ভবন তৈরির রেকর্ড নেই। ভবিষ্যতেও থাকবে না। এর আগে আমরাও ক্ষমতার বাইরে গেছি। কিন্তু আমাদের কোনো নেতা পালিয়ে যাননি। তার (খালেদা জিয়া) ছেলে রাজনীতি করবে না মুচলেকা দিয়ে পালিয়েছে। তিনি কি সে কথা ভুলে গেছেন? বিএনপির সহায়ক সরকারের দাবির বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, পৃথিবীর কোনো গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচনে সহায়ক সরকারের নিয়ম নেই। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম হবে না। যে বা যারা নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা সেটা তাদের ব্যাপার। কাদের বলেন, আমরা তো কোনো সুবিধা বা করুণা বিতরণ করছি না। নির্বাচনে অংশ নেওয়া তো তাদের অধিকার। আমরা চাই স্বচ্ছ নির্বাচন হবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে। আর এখন তারা হেরে যাওয়ার ভয়ে সমালোচনা করছে। এর জবাবে বুধবার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, একতরফা কোনো নির্বাচনে যাবে না তার দল। নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার নিয়ে সংলাপে বসতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। তিনি এও বলেন, বিএনপিকে বাইরে রেখে এদেশে আর কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। এদিকে সম্প্রতি গণভবনে হেফাজতে ইসলামের নেতা আল্লামা শফীসহ কওমী মাদ্রাসার আলেম-ওলামাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই বৈঠকই এখন দেশের রাজনীতিতে আলোচনার কেন্দ্র-বিন্দুতে পরিণত হয়েছে। দেশের গ-ি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও আলোড়ন তুলেছে বৈঠকটি। এই বৈঠক এবং আগামী নির্বাচনের হিসেব-নিকেশ কষতেও শুরু করেছে রাজনৈতিকদলগুলো। এসব কারণেই ইসলামপন্থীদের গুরুত্ব ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। বৈঠকটি সরকার ও বিরোধী শিবিরকে ব্যাপকভাবে নাড়া দিয়েছে। হঠাৎ এ ধরনের বৈঠক সর্বমহলকে নাড়া দিয়েছে। এ নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। পাশাপাশি দুই শিবিরেও সৃষ্টি হয়েছে চরম অস্বস্তি। খোদ সরকারি শিবিরে এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। বিশেষ করে এতদিন যারা হেফাজত তথা ইসলামপন্থীদের কঠোর সমালোচনায় সরব ছিলেন তাদেরকে দারুণভাবে আঘাত করেছে। আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেকের কাছেই পুরো বিষয়টি পরিষ্কার নয়। তারা বলেছেন, এমন কোনো সখ্যতা হলে সেটা তাদের দল এবং অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর হবে। অন্যদিকে হেফাজত কোনো রাজনৈতিক না হলেও সারাদেশে তাদের একটা বিরাট জনসমর্থন রয়েছে। ফলে বিএনপিতেও এ নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রায় দেড় বছর বাকি থাকলেও এরই মধ্যে নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধী শক্তি বিএনপি। আগামী নির্বাচন যে ২০১৪ সালের মতো করা যাবে না সেটা অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে গেছে ক্ষমতাসীনরা। ফলে বিএনপিসহ সকল দলের অংশগ্রহণে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনকে মাথায় রেখেই এগুচ্ছে ক্ষমতাসীন দল। যে কারণে সাংগঠনিকভাবে শাক্তিশালী দল নিয়েই নির্বাচনী মাঠের লড়াইয়ে নামতে চায় আওয়ামী লীগ। বিএনপিও এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। দীর্ঘদিনের দলের দৈন্য গুছিয়ে এখন অনেকটাই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। নেতাকর্মিরাও মনোবল ফিরে পাচ্ছে। জানা যাচ্ছে, দশম জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২০১৯ সালে। সংবিধান অনুয়ায়ী বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই আরেকটি নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেই হিসেবে নির্বাচন ২০১৮ সালের শেষের দিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে- ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও এমনটা বলা হচ্ছে।


     এই বিভাগের আরো খবর