,

বৃটেনে ইতিহাস গড়ার ভোট আজ : তেরেসা না করবিন কে হাসবেন শেষ হাসি

আনোয়ার হোসেন মিঠু ॥ বর্তমান সময়ে সারা বিশ্বের চোঁখ এখন বৃটেনের দিকে। বৃটেনে ইতিহাস গড়ার ভোট আজ। গুরুত্বপূর্ণ পার্লামেন্ট নির্বাচনে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী বেছে নেবেন বৃটিশ ভোটাররা। শেষ হাসিটা কে হাসবেন ? ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে নাকি বিরোধী লেবার দলের নেতা জেরেমি করবিন। যিনিই জয়ী হোন না কেন, তার ওপর বর্তাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্রেক্সিট সমঝোতার ম্যান্ডেট। ব্রেক্সিট ইস্যুতেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন পদত্যাগ করলে কপাল খুলে যায় তেরেসা মে’র। তিনি ২০১৬ইং সালের জুলাই মাসে বৃটেনের ইতিহাসে দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। এবার জিতলে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা পাবেন তিনি। আর লেবার দল জয়ী হলে ইতিহাসে স্থান করে নেবেন দলটির নেতা জেরেমি করবিন। করবিন এমন একজন রাজনীতিক যিনি দলের নেতা হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সর্বদা ছিলেন পার্লামেন্টের পেছনের সারির এমপি। তিনি ১৯৮৩ইং সাল থেকে এমপি নির্বাচিত হয়ে আসছেন। ২০১৫ইং সালের ১২ সেপ্টেম্বর লেবার দলের প্রধান নির্বাচিত হন। নীতির প্রশ্নে তিনি পার্লামেন্টে নিজ দলের বিরুদ্ধে যেতেও কুণ্ঠা বোধ করেননি। লেবার ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি অসংখ্যবার নানা ইস্যুতে নিজ দলের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন। তিনি যুদ্ধবিরোধী। স্পষ্টবাসীও। নির্বাচনী ইশতেহার দিয়ে বৃটেনের রাজনীতিতে আলোড়ন তুলেছেন। ঘোষণা দিয়েছেন লেবার ক্ষমতায় গেলে শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে একটি পয়সাও আর দিতে হবে না। রাষ্ট্রীয় জিম্মায় নেবেন রেল খাত। কর বাড়বে কেবল শীর্ষ ৫% ধনীদের। সেদিনের সেই ব্যাক বেঞ্চার এমপি’র সামনে আজ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার হাতছানি। অথচ নেতা নির্বাচিত হওয়ার পরও নিজ দলের এমপিদের বিরাগভাজন ছিলেন তিনি। এমনকি এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী মে যখন আকস্মিকভাবে আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেন, তখন প্রেক্ষাপট ছিল একেবারে ভিন্ন। এপ্রিলের জনমত জরিপে ক্ষমতাসীন দল কনজারভেটিভরা লেবার দল থেকে ২৮ পয়েন্টে এগিয়ে ছিল। আর সর্বশেষ জরিপগুলোতে ব্যবধান দাঁড়িয়েছে মাত্র ১ পয়েন্টে। যেখানে কনজারভেটিভরা হেসেখেলে জয়ের আশায় ছিল, সেখানে আজ তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাষ। খুব কম সময়েই ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন করবিন। বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী অধ্যাপক স্টিফেন হকিংয়ের মতো খ্যাতনামা ব্যক্তিরাও সমর্থন দিয়েছেন করবিনকে। তিনি বলেন, ‘আমি লেবারকে ভোট দিতে যাচ্ছি, কেননা আরো ৫ বছর কনজারভেটিভ দল ক্ষমতায় থাকলে তা হবে বিপর্যয়কর। বিশেষ করে স্বাস্থ্যখাত, নিরাপত্তা এবং অন্যান্য সরকারি খাতের জন্য।’ অপরদিকে নিরাপত্তা ইস্যুতে বিপাকে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে। তিন মাসের ব্যবধানে বৃটেনে তিন তিনটি সন্ত্রাসী হামলায় তীব্র সমালোচনার মুখে তিনি। লন্ডন ব্রিজ হামলার পর নিজ দলীয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের সাবেক শীর্ষ উপদেষ্টা স্টিভ হিলটন বলেন, ‘তেরেসা মে’র প্রধানমন্ত্রীর পথ থেকে অবশ্যই পদত্যাগ করা উচিত। কেননা, তিনি নিরাপত্তা বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন। তার ব্যর্থতার কারণে তিন মাসেরও কম সময়ের মধ্যে তিনটি সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে।’ প্রশ্ন উঠেছে তেরেসা মে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে ২০ হাজার পুলিশ অফিসারকে ছাঁটাইয়ের কারণেই সন্ত্রাসী হামলার ঝুঁকি বেড়েছে কিনা। লেবার দল ইতিমধ্যেই এই ইস্যুতে সোচ্চার হয়ে উঠেছে। করবিন প্রধানমন্ত্রীর কঠোর সমালোচনা করে বলেন, ‘সস্তায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় না।’ ফলে যেই নিরাপত্তা ইস্যু ছিল রক্ষণশীলদের স্বস্তির জায়গা, সেটিই এখন হয়ে উঠেছে গলার কাঁটা। অভিবাসন ইস্যুতেও সমালোচনা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। বিশেষ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে আইন আদালতের তোয়াক্কা না করে প্রায় ৫০ হাজার বিদেশি শিক্ষার্থীকে জোর করে দেশে ফেরত পাঠিয়েছিলেন। খোদ ইমিগ্র্যান্ট ট্রাইব্যুনালের এক রুলিংয়ে বলা হয়েছে সেই সিদ্ধান্ত ছিল ভুল। ওই শিক্ষার্থীরা আইনগতভাবে এখন ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারে। এছাড়া দু’ শিবিরের নির্বাচনী ইশতেহারও পার্থক্য গড়ে দিয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। জনপ্রিয় কিছু প্রস্তাব সংবলিত লেবার ইশতেহার দারুণ সাড়া পেয়েছে। অন্যদিকে, বয়স্কদের জন্য বিশেষ কর প্রচলন প্রস্তাব দিয়ে তোপে পড়েন তেরেসা মে। এমনকি নিজ টোরি দলের নেতারাও পছন্দ করেননি এই প্রস্তাব। পরে তার ‘ইউটার্ন’ পরিস্থিতিকে আরো বেগতিক করে তোলে তার জন্য। প্রচারণার শেষদিন ইংল্যান্ডে কমপক্ষে পাঁচটি স্থানে র‌্যালি করেছেন তেরেসা মে। এসব র‌্যালিতে তিনি সন্ত্রাসবাদীদের বিচারের ক্ষেত্রে প্রয়োজনে মানবাধিকার আইন পরিবর্তনের প্রতিশ্র“তি দিয়েছেন। ক্যাম্পেইন শেষে প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে বলেন, সন্ত্রাসবাদের হুমকি মোকাবিলার ক্ষেত্রে পুলিশ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর কাজকে বাধাগ্রস্ত করে মানবাধিকার বিষয়ক এমন যেকোনো ধরনের আইনের পরিবর্তন আনতে প্রস্তুত আছে তার সরকার। তিনি আরো বলেছেন ‘যখন আমরা হুমকির মুখে তখন যেকোনো পরিবর্তনই জটিল হয়ে দাঁড়ায়। আমরা নিশ্চিত করতে চাই, আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী এবং গোয়েন্দাদের হাতে যেন যথেষ্ট ক্ষমতা থাকে। অন্যদিকে জেরেমি করবিন স্কটল্যান্ড, ওয়েলস ও ইংল্যান্ডে ছয়টি জনসভা করেছেন। সেখানে তিনি স্বাস্থ্যখাতকে রক্ষা করার প্রতিশ্র“তি পুনর্ব্যক্ত করেন। স্কাই নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শেষ মুহূর্তে এ প্রচারণা ছিল সিদ্ধান্তহীনতায় থাকা ভোটারদের মনজয়ের চেষ্টা।


     এই বিভাগের আরো খবর