,

হবিগঞ্জে বিদ্যুত বিভ্রাটে অতিষ্ট নগরবাসীর মানববন্ধন

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ অসহনীয় বিদ্যুত বিভ্রাট থেকে মুক্তি ও জেলা সদরে গ্রীড সাবস্টেশন নির্মাণের দাবিতে হবিগঞ্জে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার বেলা ১১টায় স্থানীয় টাউন হলের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। দেড়ঘন্টা ব্যাপী এ মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, হবিগঞ্জ থেকে প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত জাতীয় গ্রীডে সরবরাহ হলেও জেলায় বিদ্যুতের ভোগান্তি প্রতিদিনই বাড়ছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গাফিলতি ও উদাসিনতায় লাইনের সামান্য ক্রটি সারাতেই লেগে যায় ঘন্টার পর ঘন্টা। ফলে অন্ধকারে থাকতে হয় শহরবাসীকে। এছাড়া অভিযোগ ও তথ্য কেন্দ্রের মোবাইল ফোনটি সারাক্ষণই ব্যস্ত রাখা হয় ইচ্ছে করে। ফলে কোন তথ্য জানারও উপায় থাকে না। আর মিটার রিডারদের বদৌলতে ভূতুড়ে বিলের উৎপাততো আছেই। এরকম নানা অব্যবস্থাপনার কারণে রমজান মাসেও চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে গ্রাহকদের। হবিগঞ্জের বিদ্যুতে দেশের একটি বড় অংশ আলোকিত হলেও এখানকার মানুষ বিদ্যুতের ভেলকিবাজীতে অতিষ্ট। বিদ্যুত উন্নয়নের নামে ২৫ কোটি টাকার প্রকল্প শেষ হলেও এর কোন সুফলই পায়নি এ জেলার মানুষ। অথচ প্রায় দু’বছর জেলার বিদ্যুত উন্নয়নের নামে প্রতি শনিবার সারাদিন বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছিল। বক্তারা অবিলম্বে জেলায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ নিশ্চিত করার দাবি জানান। অন্যথায় দুর্বার আন্দোলনের হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন তারা। মানববন্ধনে বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের কাছে স্মারক লিপি প্রদানের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়। হবিগঞ্জের ভূক্তভোগী নাগরিকবৃন্দ আয়োজিত মানববন্ধনে অন্যানের মধ্যে বক্তব্য রাখেন হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মোঃ ফজলুর রহমান, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সাধারণ সম্পাদক অনিরুদ্ধ কুমার ধর শান্তনু, ব্যকস সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলমগীর, অ্যাডভোকেট তাজ উদ্দিন সুফি, দেওয়ান মোস্তাক গাজী চৌধুরী, পল্লব তালুকদার, শোয়েব চৌধুরী, আবু হেনা মোস্তফা কামাল, মোহাম্মদ নূর উদ্দিন, মাওলানা আব্দুল্লাহ হিল কাফি, রফিকুল হাসান চৌধুরী তুহিন, শিবলী খান, হুমায়ুন খান, নাসির উদ্দিন খান, বাপা সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল, সিদ্দিকী হারুন, ব্যাংকার সাব্বির আহমেদ মিঠু, তারেক খান, ডাঃ এস এস আল আমিন সুমন, প্রদীপ দাশ সাগর, শাকিল চৌধুরী, ফুজায়েল আল কাফি, অ্যাডভোকেট সৈয়দ জাদিল উদ্দিন আহমদ, প্রকৌশলী সৈয়দ ফাইয়াজ উদ্দিন আহমদ, আফসার সোহাগ প্রমূখ। পরিচালনায় ছিলেন শাহ জালাল উদ্দিন জুয়েল। বক্তারা বলেন, শাহজীবাজার থেকে প্রায় ২৮ কিলোমিটার লম্বা সোর্স লাইনের মাধ্যমে জেলা শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়ে থাকে। সামান্য কারণেই দীর্ঘদিনের জরাজীর্ণ এ লাইনে ক্রটি দেখা দেয়। ফলে বন্ধ হয়ে যায় সরবরাহ। ভোগান্তিতে পড়েন শহরবাসী। ২০১৪ সালে সেন্ট্রাল জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন প্রজেক্ট এর আওতায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বিকল্প আরেকটি সোর্স লাইনসহ শহরের সকল জরাজীর্ণ তার ও খুটি পরিবর্তনের কথা ছিল। কিন্তু কাজ অসমাপ্ত রেখে প্রকল্পটি শেষ হওয়ায় কোন সুবিধাই পায়নি শহরবাসী। কেন প্রকল্পটি অসম্পূর্ণ ছিল, কারা এ ব্যর্থতার জন্য দায়ী তা চিহ্নিত করে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি। শহরের ২২ হাজার গ্রাহকের বিপরীতে যেখানে ফিডার সংখ্যা হওয়ার কথা ১৫ থেকে ২০টি, সেখানে ফিডার আছে মাত্র ৫টি। ফলে একেকটি ফিডারের আওতাধীন এলাকার যে কোন স্থানে ক্রটি দেখা দিলেই ওই ফিডারের সকল গ্রাহকই বিদ্যুত থেকে বঞ্চিত হন। এছাড়া শহরে সুষ্ঠুভাবে বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনার জন্য অন্তত আরো ৩০টি ট্রান্সফরমার প্রয়োজন। সেই সাথে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য সেন্ট্রাল জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন প্রজেক্ট এর আওতায় অটোমেটিক সার্কিট রিক্লোজার (এসিআর) স্থাপনের কথা ছিল। এটি স্থাপিত হলে ক্রটিপূর্ণ অংশ ছাড়া বাকি জায়গার বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত থাকতো। ২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সোর্স লাইনের ভোগান্তি থেকে মুক্তির জন্য অনতিবিলম্বে জেলা সদরে গ্রীড সাবস্টেশন স্থাপনের দাবি জানান বক্তারা। সেই সাথে ফিডার সংখ্যা বৃদ্ধি, জরাজীর্ণ খুটি ও তার পরিবর্তন, প্রতিটি খুটিতে এসিআর স্থাপন, পর্যাপ্ত ট্রান্সফরারের ব্যবস্থাসহ সংশ্লিষ্ট সকল কাজ দ্রুত সম্পন্ন করে হবিগঞ্জ শহরে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।


     এই বিভাগের আরো খবর