,

অপহরণের ফাঁদ লিবিয়া

সময় ডেস্ক ॥ মোটা অঙ্কের বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশিদের লিবিয়া নিচ্ছে একটি চক্র। সেখানে তাদের আটকে রেখে চক্রটি লাখ লাখ টাকার মুক্তিপণ আদায় করছে। যুদ্ধকবলিত দেশ লিবিয়াকে মানুষ অপহরণের ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ধরনের অন্তত ছয়টি ঘটনার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে চারজনকে উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এখনো অপহরণকারীদের জিম্মায় রয়েছে আরও দুজন। তবে অনেক বাংলাদেশির তথ্য অজানা রয়ে গেছে। এদের বেশিরভাগই মুক্তিপণ দিতে না পারায় হত্যার শিকার হয়েছেন। নির্মমভাবে হত্যা করে তাদের পেট কেটে সাগরে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও লিবিয়া থেকে ফিরে আসা ভুক্তভোগীদের সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। ঘটনা-১ : গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর লিবিয়াতে যান জামালপুরের আলু ব্যবসায়ী ফজলুল হক। সেখানে গিয়েই তিনি অপহরণের শিকার হন। তার ওপর অমানবিক নির্যাতন চালাতে থাকে অপহরণকারী চক্রের সদস্য নোয়াখালীর আবদুর রাজ্জাক। পরে মোবাইলফোনে ফজলুর পরিবারের কাছে চার লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। অপহরণকারী চক্রের সদস্য মোয়াজ্জেম ও তালেবকে রাজধানীর বাসাবো থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। পরে ফজলু অপহরণকারীদের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে লিবিয়া থেকে গতকাল সকালে ঢাকায় ফেরেন। ঘটনা-২ : নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার খাজুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা জহিরও একইভাবে অপহরণের শিকার হন। গত বছরের অক্টোবরে স্পেনের কথা বলে কামাল তাকে লিবিয়াতে পাঠায়। সেখানে পৌঁছালে শামসু নামে একজন জহিরকে আটকে রেখে নির্যাতন চালাতে থাকে। মুক্তিপণ হিসেবে জহিরের পরিবারের কাছে ছয় লাখ টাকা দাবি করা হয়। শামসুকে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা দেওয়া হয়। আইনশৃঙ্খা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযোগ পাওয়ার পর জহিরকে লিবিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাসের মাধ্যমে উদ্ধার করা হয়। গত ২০ মে তিনি ঢাকায় ফেরেন। ঘটনা-৩ : একই কৌশলে লিবিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয় সিলেটের জুবায়েরকে। তবে এখনো তাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ইস্তাম্বুল হয়ে লিবিয়া পৌঁছানোর পরই জিম্মি করা হয় জুবায়েরকে। পরে জুবায়েরের মার কাছে মোবাইল ফোনে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়। জুবায়েরের মা প্রথমে দুই লাখ টাকা দিলে তার কাছে আবার সাড়ে তিন লাখ টাকা দাবি করা হয়। এভাবে জুবায়েরের পরিবারের কাছ থেকে সাড়ে ছয় লাখ টাকা নিলেও এখনো তিনি মুক্তি পাননি। র‌্যাব-৩ এর কর্মকর্তারা জানান, প্রতিবেশী রাসেলের প্রলোভনে পড়ে লিবিয়া যেতে রাজি হন ফজলু। সেখানে যেতে তিনি রাসেলকে ৫৫ হাজার টাকা এবং তালেবকে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা দেন। ফজলুর কাছ থেকে টাকা নিয়ে আগেই লিবিয়ায় পাড়ি জমান রাসেল। দীর্ঘ সময় পর আরও ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়ে ফজলুকে লিবিয়ায় পাঠানোর ব্যবস্থা করে তালেব, মোয়াজ্জেম, কাউয়ুম ও কল্লোল। জাল ভিসা দিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে ফজলুকে প্রথমে দুবাই, এরপর টার্কিশ এয়ারলাইনসের আরেকটি ফ্লাইটে মিসর, তুরস্ক হয়ে লিবিয়া পৌঁছে ফজলু। এসব কাজে ইমিগ্রেশনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা সরাসরি জড়িত। প্রত্যেককে একই কৌশলে লিবিয়ায় নিয়ে মুক্তিপণ হিসেবে আদায় করা হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মতে, বাংলাদেশের ওয়াহিদ, সুব্রত, হানিফ, মিলন, কামাল ও লিবিয়ায় থাকা শামসু ও রাসেলসহ অন্তত ২০-২৫ জনের একটি চক্র এই অপহরণ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত।


     এই বিভাগের আরো খবর