,

হবিগঞ্জে অসহনীয় বিদ্যুত বিভ্রাট থেকে মুক্তি ও গ্রীড সাবস্টেশন নির্মাণের দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জ শহরে অসহনীয় বিদ্যুত বিভ্রাট থেকে মুক্তি ও হবিগঞ্জ সদর গ্রীড সাবস্টেশন নির্মাণের দাবিতে প্রধান মন্ত্রীর বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন হবিগঞ্জ নাগরিক কমিটি নেতৃবৃন্দ। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে নেতৃবৃন্দ হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক সাবিনা আলমের কাছে এ স্মারকলিপি প্রদান করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন হবিগঞ্জ নাগরিক কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ আফরোজ বখ্ত, সিলেটের প্রাক্তন বিভাগীয় কমিশনার মোঃ ফজলুর রহমান, হবিগঞ্জ সরকারি বৃন্দাবন কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ প্রফেসর ইকরামুল ওয়াদুদ, হবিগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুজ জাহের, দৈনিক খোয়াই সম্পাদক শামীম আহছান, ধর্মঘর ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ আলী আজগর, বিশিষ্ট কবি ও সাহিত্যিক তাহমিনা বেগম গিনি, রোটারিয়ান তবারক আলী লস্কর, মোহাম্মদ আলী মমিন, এনাম আহমেদ, ফজলুল করিম, আমজাদ হোসেন চৌধুরী, আশরাফ আলী খান বাচ্চু, সিরাজুল ইসলাম, আলহাজ্ব ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আউয়াল তালুকদার প্রমূখ। স্মারকলিপিতে নেতৃবৃন্দ বলেন হবিগঞ্জ নাগরিক কমিটি একটি সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক সংগঠন। হবিগঞ্জের সকল স্তরের সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে গঠিত ‘হবিগঞ্জ নাগরিক কমিটি’ সরকারের পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বর্তমান সরকার দেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতে যে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে, তার অন্যতম অংশীদার হবিগঞ্জ জেলা। এ জেলা থেকে প্রতিদিন গড়ে দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে সরবরাহ হচ্ছে। আর হবিগঞ্জ শহরের ১৫ মেগাওয়াটসহ জেলায় বিদ্যুতের মোট চাহিদা মাত্র ৯৫ মেগাওয়াট। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাতে হচ্ছে, যে জেলার উৎপাদিত বিদ্যুতে দেশের একটি বৃহৎ অংশ আলোকিত হয়, সেই জেলাই বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে প্রায়ই অন্ধকারে আছন্ন থাকে। এতে শিশু, বৃদ্ধ, রোগী, শিক্ষার্থীসহ সকল মানুষকেই চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গত রমজান মাসে এ দূরাবস্তা থেকে মুক্তি পাননি মুসল্লীগণও। জেলা সদরে বিদ্যুতের এমন দূরাবস্তা বোধ হয় দেশের আর কোথাও নেই। প্রধানমন্ত্রী আপনি নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে, হবিগঞ্জের শাহজিবাজার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে স্থাপিত গ্রীড সাবস্টেশন থেকে ২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সোর্স লাইনের মাধ্যমে হবিগঞ্জ জেলা সদরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়ে থাকে। বহুদিনের পুরাতন এ লাইনের সঞ্চালন ক্ষমতা অনেক আগেই দুর্বল হয়ে পড়েছে। এছাড়া শহরের বিদ্যুৎ বিতরণ লাইনের অবস্থাও জরাজীর্ণ। অনেক খুটি হেলে আছে বিপজ্জনক অবস্থায়। সেই সাথে চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় হবিগঞ্জ শহরের বিতরণ উপকেন্দ্রের ট্রান্সফরমারের ক্ষমতাও বৃদ্ধি করা প্রয়োজন হয়ে পড়ে। বিষয়গুলো বিবেচনায় ২০১৪ সালে বিকল্প সোর্স লাইন স্থাপন, বিতরণ উপকেন্দ্রের ক্ষমতা বৃদ্ধি, জীর্ণ খুটি ও পুরাতন সঞ্চালন তার পরিবর্তনসহ বিদ্যুৎ ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য সেন্ট্রাল জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন প্রজেক্ট গ্রহণ করা হয়। এ সময় উন্নয়ন কাজের স্বার্থে প্রতি শনিবার সারাদিন জেলা সদরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। ২০১৬ সালের জুন মাসে অসমাপ্ত অবস্থায় প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্প শেষ করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। দু’বছরে যে কাজ হয়েছে তাও অতি নিম্নমানের বলে মনে করেন সংস্লিষ্টরা। সামান্য ঝড় হলেই প্রকল্পের আওতায় স্থাপিত খুটিগুলো হেলে পড়ে যায়। ফলে যে সুফলের আশায় দু’বছর শহরবাসী হাসিমূখে বিদ্যুতের দুর্ভোগ মেনে নিয়েছিল, তা স্থায়ী রূপ নেয়। বিপুল সরকারি অর্থ ব্যয়ের পরও বিদ্যুৎ বিভ্রাট থেকে মুক্তি পায়নি হবিগঞ্জ শহরের মানুষ। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানসহ প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রীর অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, ২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সোর্স লাইনে বিভিন্ন ত্র“টি দেখা দিবে সেটাই স্বাভাবিক। এসব ত্র“টি খুঁজে বের করে মেরামত করতে বেশ কয়েক ঘন্টা সময় প্রয়োজন। অথচ হবিগঞ্জ জেলা সদরে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নিজস্ব জায়গা রয়েছে। সে জায়গায় একটি গ্রীড সাবস্টেশন নির্মাণ করা হলে বিদ্যুৎ সরবরাহ অনেকাংশেই স্বাভাবিক হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। হবিগঞ্জ শহরে প্রায় ২২ হাজার গ্রাহকের বিপরীতে ফিডার আছে মাত্র ৫টি। অথচ সুষ্ঠু বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনার জন্য ১৫ থেকে ২০টি ফিডার থাকা প্রয়োজন। শহরে আরো অন্তত ৩০টি ট্রান্সফরমার প্রয়োজন। সেই সাথে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য প্রতিটি খুটিতে এসিআর (অটোমেটিক সার্কিট রিকোজার) স্থাপন প্রয়োজন। প্রয়োজনীয় ফিডার স্থাপনে তাই যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। সাথে সাথে ট্রান্সফরমারের সংখ্যাও বৃদ্ধি করতে হবে। অতএব, মহোদয় সমীপে প্রার্থনা, হবিগঞ্জ জেলা সদরের বিদ্যুৎ সংকট নিরসনে একটি গ্রীড সাবস্টেশন নির্মাণ, ফিডার ও ট্রান্সফরমারের সংখ্যা বৃদ্ধি, পুরাতন খুটি ও সঞ্চালন লাইন পরিবর্তনসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। এর পূর্বে হবিগঞ্জ জেলা নাগরিক কমিটি নেতৃবৃন্দ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক পরামর্শ সভা করেন। এতে সভাপতিত্ব করেন হবিগঞ্জ নাগরিক কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ আফরোজ বখ্ত। সভা পরিচালনা করেন সাধারন সম্পাদক আব্দুল তালুকদার। স্মারকলিপির অনুলিপি এমপি অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহির, এমপি অ্যাডভোকেট মোঃ আব্দুল মজিদ খান, বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানের বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে।


     এই বিভাগের আরো খবর