,

-নির্বাচনী হালচাল- হবিগঞ্জ-৩ আসনে জাহির গউছ ও আতিকের লড়াই

মুরাদ আহমদ ॥ হবিগঞ্জ-৩ আসন (হবিগঞ্জ সদর-লাখাই) উপজেলা নিয়ে গঠিত। গত রমজানের ঈদ থেকে এ আসনে ভোটের উৎসব শুরু হয়েছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা ভোটারদের ঈদ শুভেচ্ছার পাশাপাশি স্বশরীরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে নিজেদের প্রার্থীতার কথা জানান দিচ্ছেন। এ আসনের বর্তমান এমপি ও হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামীরীগের সভাপতি আলহাজ্ব এডভোকেট আবু জাহিরকে চ্যালেঞ্জ জানাতে প্রস্তুত বিএনপি। পরিবর্তনের আওয়াজ তুলে বিজয়ী হতে চান তারা। তরুণ প্রজন্মের নেতা মেয়র আলহাজ জিকে গউছকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছে বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। আর গউছকে নিয়েই তৃণমূলে সরব বিএনপি। বিগত তিনটি পৌর নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন হবিগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব জিকে গউছ। নির্বাচনী এলাকায় সনাতন ধর্মালম্বীদের মধ্যে তার ঈর্ষণীয় ইমেজ রয়েছে। পৌরসভার উন্নয়ন এবং তার নিরলস গতিতে মুগ্ধ ভোটাররা। অন্যদিকে কোন্দলহীন মহাজোটের বিশাল বলয় নিয়ে এককভাবে রাজনীতির মাঠ নিয়ন্ত্রণ করছেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আলহাজ্ব এডভোকেট আবু জাহির এমপি। তৃণমূল রাজনীতির পরীক্ষিত নেতা হিসেবে পরিচিত তিনি। এখানে মহাজোটের প্রার্থী হতে সরব রয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক এবং বিশিষ্ট শিল্পপতি আলহাজ্ব আতিকুর রহমান আতিক। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সর্বশেষ ক্যারিশমা দেখার প্রতীক্ষায় তিনি। ও দলের নেতা কর্মীরা। রাজনীতির গতিপথ নিয়ে সরব আলহাজ্ব আতিকুর রহমান আতিক বর্তমানে তার নেতৃত্বেই নিস্তেজ জাতীয় পার্টি সতেজ হচ্ছে। হবিগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক হিসেবে ইতিমধ্যে দলকে সাংগঠনিক ভাবে দলকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে জেলা সদস্য সচিব ও বিশিষ্ঠ ব্যবসায়ী শংকর পালকে নিয়ে তৃণমূলে সাজাতে সক্রিয় তৎপরতা শুরু করেছেন। এই তিন হেভিওয়েট প্রার্থী নিয়ে সরব হবিগঞ্জ-৩ নির্বাচনী এলাকার জনপদ। ভোটাররা অবশ্য সকল দলের অংশ গ্রহণে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রত্যাশা করছেন। প্রতিটি সংসদ নির্বাচনেই হবিগঞ্জ-৩ আসনকে নিয়ে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ছাড়াও সমঘ্র জেলার সুশিল সমাজের মধ্যে বিশেষ আগ্রহ থাকে। এ আসনটি এক সময় জাতীয় পার্টির ঘাঁটি হিসেবে ব্যাপক পরিচিত ছিল। এ আসন থেকে পর পর কয়েকবার এমপি নির্বাচিত হন প্রয়াত আবু লেইছ মোঃ মুবিন চৌধুরী। পরে তিনি বিএনপিতে যোগ দেওয়ায় ২০০১ সাল থেকে আসনটি জাতীয় পার্টির হাতছাড়া হয়। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী হিসেবে সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত শাহ এএমএস কিবরিয়া বিজয়ী হন তখন বিএনপি’র প্রার্থী হিসেবে আবু লেইছ মোঃ মুবিন চৌধুরী প্রতিদ্বন্দিতা করেন। ২০০৫ সালের ২৭শে জানুয়ারি সদর উপজেলার বৈদ্যেরবাজারে গ্রেনেড হামলায় নিহত হন তিনি। এরপর উপ-নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী আবু লেইছ মোঃ মুবিন চৌধুরী বিজয়ী হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অংশ নিয়ে বিজয়ী হন অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহির। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের নির্বাচনেও তিনি বিজয়ী হন। এবার আওয়ামী লীগের দুর্গে হানা দিতে চায় বিএনপি। সাধারণ মানুষের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেন আলহাজ্ব পৌর মেয়র আলহাজ্ব জিকে গউছ। তাকে নিয়ে তরুন সমাজের নেতৃবৃন্দ স্বপ্ন দেখছেন তারা। দলীয় প্রভাব ছাড়াও মেয়র আলহাজ জিকে গউছের সততায় মুগ্ধ জনগণ। তার জনপ্রিয়তায় শংকিত আওয়ামী লীগ বলয়ও। সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলার সর্বশেষ চার্জশিটে জিকে গউছের নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় প্রায় ২ বছর কারান্তরীণ ছিলেন তিনি। কারাগারে থেকেই বিপুল ভোট পেয়ে পৌর নির্বাচনে বিজয়ী হন। হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহির বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। এরপর থেকেই জেলার উন্নয়নে ব্যাপক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়। উন্নয়নের ছোঁয়ায় ইকোনমিক্স জোন হিসেবে খ্যাতি অর্জন করে। গণমানুষের দাবির প্রেক্ষিতে আধুনিক স্টেডিয়াম, সদর হাসপাতালকে ১শ’ থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ, গ্রামে গ্রামে রাস্তাঘাট, কালভার্ট, বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়াসহ জেলার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বৃন্দাবন সরকারি কলেজে অনার্স, মাস্টার্স কোর্স চালু করা, মেডিকেল কলেজ, জুডিসিয়াল ভবন নির্মাণসহ সব উন্নয়নই এ আমলে হয়েছে। আর এমন খুব কম এলাকা আছে যেখানে রাস্তা নেই। অনেক প্রত্যন্ত গ্রাম, হাওর সবখানেই উন্নয়ন করেছি। জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র আলহাজ জি কে গউছ বলেন, বিএনপি একটি বিশাল দল। এখানে নিজে থেকে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নেই। আমাদের স্ট্যান্ডিং কমিটি রয়েছে। তারা প্রার্থী নির্বাচন করেন। তিনি বলেন, আমি প্রায় ৩৫ বছর ধরে বিএনপি’র রাজনীতি করছি। দল যে সময় যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে তা মেনে নিয়েছি। কারাগার থেকে দলের সিদ্ধান্তে পৌর নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। সবকেন্দ্রে আমার এজেন্ট পর্যন্ত ছিল না। কিন্তু নীরব ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে পৌরবাসী আমাকে নির্বাচিত করেন। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিএনপি নির্বাচনে যাবে কি না সন্দিহান। যতক্ষণ পর্যন্ত সহায়ক সরকার না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত নির্বাচনে না যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। গত পৌর নির্বাচনে পুলিশের শত তৎপরতা সত্তেবও মানুষ বিএনপি’র প্রার্থী হিসেবে আমাকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করেছেন। নির্লজ্জভাবে ব্যালট পেপার ছিনতাই করেও জনতার বিজয় রুখতে পারেনি। মানুষ ভোটের মাধ্যমে নীরব বিপ্লব ঘটিয়েছে। মিথ্যা মামলায় হয়রানি করে হবিগঞ্জ শহরকে উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। সরকারি দল সকল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড অবাধে চালাচ্ছে। অথচ বিএনপি’র গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পালনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে হয়রানি করছে। লেভেল প্লেইং ফিল্ড ছাড়া নির্বাচন অর্থহীন। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক আলহাজ্ব আতিকুর রহমান আতিক বলেন, হবিগঞ্জ-৩ (সদর-লাখাই) এবং হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর-চুনারুঘাট) আসন থেকে আমি মনোনয়ন চাইব। বিশেষ করে হবিগঞ্জ-৩ আসন বরাবরই জাতীয় পার্টির দুর্গ হিসেবে পরিচিত। এখানে টানা ৩ বার জাতীয় পার্টির প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। পল্লীবন্ধু সাবেক প্রেসিডেন্ট আলহাজ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ হবিগঞ্জকে মহকুমা থেকে জেলায় পরিণত করেন। বিগত ৯ বছরে এরশাদ সরকারের আমল থেকেই ওই এলাকায় উন্নয়নের যাত্রা শুরু হয়। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে ইনশাল্লাহ্ নির্বাচনে বিজয়ী হব। তিনি বলেন, আমার বিশ্বাস আগামী নির্বাচনে সব দল অংশ নেবে। মানুষের ভোটাধিকার রক্ষায় সকল দলের অংশগ্রহণে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলেও আমি বিশ্বাস করি। কারণ প্রধানমন্ত্রী নিজেও চাচ্ছেন নির্বাচন সুষ্ঠু করে ইতিহাস সৃষ্টি করতে।


     এই বিভাগের আরো খবর