,

প্রতিবেশির সঙ্গে সু-সম্পর্ক চাই, কিন্তু অন্যায় মেনে নেব না ॥ রোহিঙ্গাদের কথা শুনে কাঁদলেন প্রধানমন্ত্রী

সময় ডেস্ক ॥ মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর বর্বর নির্যাতনে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া বিপন্ন রোহিঙ্গাদের পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীরা তাদের দেশে ফেরার আগ পর্যন্ত সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাবো। গতকাল কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী জীবন বাঁচাতে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারী শিশুদের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের মুখে মিয়ানমার বাহিনীর বর্বর নির্যাতনের কথা শুনে প্রধানমন্ত্রী আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। এ সময় ছোট বোন শেখ রেহানা তার পাশে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী সেখানে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তৃতায় ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের পর তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তুলে ধরে আগত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি সমবেদনা জানান। একই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার দিয়ে তাদের ফিরিয়ে নেয়ার জন্য মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশ নেপিডো’র সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চায় তবে কোন অন্যায়-অবিচার সহ্য করবে না। এই ব্যাপারে আমাদের প্রতিবাদ অব্যাহত থাকবে। শরণার্থীদের জন্য সব ধরনের সহযোগিতা প্রদানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী রাখাইন সম্প্রদায়ের জনগণের প্রতি অত্যাচার বন্ধ এবং বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারের শরণার্থীদের দেশে ফেরত নিয়ে যাবার জন্য মিয়ানমারের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ অব্যাহত রাখার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মিয়ানমারের শরণার্থীদের পাশে রয়েছি এবং তাদের সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাবো, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা তাদের দেশে ফিরছে আমরা পাশে রয়েছি। মিয়ানমারের শরণার্থীদের দুরবস্থা দেখার পর অন্তরের অন্তস্তলে গভীর দুঃখ অনুভব করছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারাও মানুষ এবং মানুষ হিসেবেই তাদের বাঁচার অধিকার রয়েছে। এই বিষয়ে প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ মিয়ানমারকে সবধরনের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিন্তু আগে তাদের এই রাখাইন জনগণের প্রতি অন্যায়-অত্যাচার বন্ধ করতে হবে। সরকার প্রয়োজনীয় খাদ্য এবং জরুরি সেবা শরণার্থীদের জন্য অব্যাহত রাখবে, তাতে কোনো সমস্যা হবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৬ কোটি মানুষের এই দেশে যদি সকলের মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা সরকার বিধান করতে পারে সেক্ষেত্রে মিয়ানমারের শরণার্থীদেরও কোনো সমস্যা হবে না। এই বার্তাও প্রধানমন্ত্রী আগত রোহিঙ্গাদের উদ্দেশ্যে দেন এইখানে কোন স্বার্থান্বেষী মহল যদি ফায়দা লোটার চেষ্টা করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সুতরাং বিচ্ছিন্নভাবে হলেও কেউ যেন এ ধরনের কোনো অপচেষ্টার সঙ্গে লিপ্ত না হন। সে ব্যাপারেও প্রধানমন্ত্রী সবাইকে সতর্ক করে দেন। এলাকাবাসীর প্রতি তিনি আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, হুইপ ইকবালুর রহিম, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মুহম্মদ শফিউল হক এবং শেখ রেহানার পুত্রবধূ এবং সিনিয়র আইএমও কর্মকর্তা পেপী সিদ্দিকসহ স্থানীয় সাংসদ এবং জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমারে সৃষ্ট সংঘাত প্রসঙ্গে বলেন, বারবার আমরা দেখতে পাচ্ছি কিছু মানুষ কোনো কোনো জায়গায় এক একটা ঘটনা ঘটায়। তারাতো ঘটনা ঘটিয়েই চলে যায়। আর ভুক্তভোগী হতে হয় ছোট্ট শিশু, নারী আর সাধারণ মানুষজনদের। তিনি বলেন, মিয়ানমার সরকারকে আমি বলবো, তারা যেন এই নিরীহ মানুষগুলোর ওপর কোনোরকম নির্যাতন না করে। তিনি বলেন, আমরা মিয়ানমার সরকারকে বারবার বলেছি- আমাদের তরফ থেকে একটা কথা বলেছি যে, সেই ’৭৮ সাল থেকে মিয়ানমারে একটার পর একটা ঘটনা ঘটছে আর মানুষ এখানে এসে আশ্রয় নিচ্ছে। এদের ভোটের অধিকার, নাগরিক অধিকার সব কেড়ে নেয়া হয়েছে। কেন এই অত্যাচার। এরা তো মিয়ানমারেরই লোক। মিয়ানমারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী তো নিজেই ঘোষণা দিয়েছিলেন- এই রোহিঙ্গারা তাদেরই নাগরিক। তাহলে এখন তারা এই সমস্যা সৃষ্টি করছে কেন? আন্তর্জাতিক অনেক সংস্থাই মিয়ানমারের শরণার্থীদের সহায়তার জন্য এগিয়ে এসেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা একটি রিলিফ কমিটি গঠন করে তার মাধ্যমে ত্রাণ সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছি। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ, স্থানীয় প্রশাসন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিজিবি এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সহযোগিতার হাতকে প্রসারিত করেছেন। সরকার বায়মেট্রিক রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে রিলিফ তৎপরতা চালিয়ে যাবার উদ্যোগ নিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা শরণার্থীদের নাম, ঠিকানা, পরিচয় লিপিবদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যাতে তাদের কোনো সমস্যা হলে আমরা দেখভাল করতে পারি এবং তাদের দেখভাল করাটা আমাদের দায়িত্ব। যাতে সবকিছু সুন্দরভাবে করতে পারে, সেজন্যই এই উদ্যোগ বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী শরণার্থীদের হাতে নিজে ত্রাণসামগ্রী তুলে দেন। এ সময় শরণার্থীরা তাদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীকে পেয়ে মিয়ানমারে তাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের বর্ণনা তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী দুর্গত নারী ও শিশুকে কাছে টেনে নেন। এ সময় এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।


     এই বিভাগের আরো খবর