,

প্রতিরোধে প্রস্তুত হচ্ছে দেড় লাখ রোহিঙ্গা যুবক!

সময় ডেস্ক ॥ মা ও স্ত্রীর সম্ভম কেড়ে নেওয়া হচ্ছে, বোনদের তুলে নিয়ে ধর্ষণের পর হত্যা করা হচ্ছে। বাবা ও ভাইকে হত্যা করছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ও বৌদ্ধ সন্ত্রাসীরা। এমন পরিস্থিতিতে অনেক রোহিঙ্গা যুবকই এখন প্রতিরোধের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে পালিয়ে আসা কয়েকজন রোহিঙ্গা। তারা জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের হারানোর আর কিছু নেই। পশুর মতো মরার চেয়ে প্রতিরোধ করে মরাই শ্রেয় মনে করছে আমাদের সন্তানরা। সূত্রগুলো জানায়, মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধ সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধে দেড় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা যুবক প্রস্তুতি নিচ্ছে। মিয়ানমারের বিভিন্ন দুর্গম জঙ্গলে পালিয়ে থাকা রোহিঙ্গা যুবকরা প্রতিরোধের জন্য প্রশিক্ষণও নিচ্ছে। মিয়ানমার সীমান্তবর্তী টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়ির স্থানীয় কয়েকটি সূত্রও রোহিঙ্গা যুবকদের প্রস্তুতির বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তারা বলেছেন, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর রোহিঙ্গা দমন অভিযানের পর থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ঢল নামে। যাদের বেশির ভাগই নারী, শিশু, মধ্য বয়সী ও বৃদ্ধ। যুবকদের সংখ্যা খুবই কম। যে সব যুবক এসেছে তারা অধিকাংশই সবল নয়। এর মানে হলে-রোহিঙ্গা যুবকরা সেখানেই রয়ে গেছেন এবং সেখানে তারা কিছু একটা করছেন। কিন্তু কয়েকজন রোহিঙ্গা শরণার্থীর দাবি, মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধ সন্ত্রাসীরা রোহিঙ্গা যুবকদের হত্যা করেছে। সহিংসতার শুরু হওয়ার পূর্বেই মিয়ানমার বাহিনীর পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথমে টার্গেট করা হয় রোহিঙ্গা যুবকদের। এবং সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যা করা হয়। তবে স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, রোহিঙ্গা যুবকরা বেশ কয়েক বছর ধরেই মিয়ানমার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা মাঝে-মধ্যে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশেও অবস্থান করেছে। হয়তো সামরিক অভিযানের সময় কিছু নিরীহ যুবককে হত্যা করা হয়েছে। তবে বেশি সংখ্যক যুবকই জঙ্গলে অবস্থান করে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। সূত্রগুলো জানায়, রোহিঙ্গা যুবকরা মিয়ানমার বাহিনীকে উচিত জবাব দিতে সব ধরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে তারা সব কিছু ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। সময়-সুযোগ বুঝে তারা প্রতিরোধ সৃষ্টি করবে এবং বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে শরণার্থী হয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিবে। পালিয়ে আসা কয়েকজন রোহিঙ্গাদের কাছে প্রশ্ন রেখেছিলাম, যুবকদের কি হয়েছে? উত্তরে তারা জানান, লড়াই করার জন্য যুবকরা রয়ে গেছে। তারা প্রস্তুতি নিচ্ছে মিয়ানমার বাহিনীকে উচিত জবাব দেওয়ার জন্য। ঘুমধুম সীমান্ত কথা রোহিঙ্গা নেতা ইয়াকুব আলির সঙ্গে। তিনি জানান, সীমান্তবর্তী ১০টি গ্রামের অন্তত দুই শতাধিক যুবক ‘স্বাধীনতার যুদ্ধে’ আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মিতে (এআরএসএ) যোগ দিয়েছে। ইয়াকুব আলি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘তাদের কী-ইবা করার ছিল! মা-বোন ও স্ত্রীদের সম্ভম কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। বাবা-ভাইকে পশুর মতো খুন করা হচ্ছে। এর চেয়ে লড়াই করে মারা যাওয়ার পথ বেছে নিয়েছেন তারা। এআরএসএ বিদ্রোহীদের ভারি অস্ত্র বলতে কিছুই নেই। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন হামলায় ব্যবহার করা হয়েছে ছুরি, ঘরে তৈরি বোমা এবং আগ্নেয়াস্ত্র। ফলে মিয়ানমারের সুসজ্জিত সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে কতটুকু টিকতে পারবে বিদ্রোহীরা, সে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। কিন্তু তাতে দমছেন না রোহিঙ্গারা। মুহাম্মাদ হুসাইন নামের এক রোহিঙ্গা জানান, আমাদের শত শত যোদ্ধা পাহাড়ে অবস্থান নিয়েছে। আমরা আরাকানকে রক্ষায় শপথ নিয়েছি, সেটা চাকু এবং লাঠি দিয়ে হলেও আমরা করব। কুতুপালং ক্যাম্পে এক রোহিঙ্গা যুবকের মন্তব্য ছিল এমন, আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আমাদের তরুণরাও চিন্তা করছেন যুদ্ধে যোগ দেওয়ার। আমরা প্রতিজ্ঞা করেছি, প্রথম সুযোগেই আমরা সীমান্ত অতিক্রম করব।


     এই বিভাগের আরো খবর