,

ঢাকায় সিপিএ সম্মেলন, আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

আসমা জান্নাত মনি ॥ বিশ্বের সংসদীয় গণতন্ত্রের সর্বোচ্চ দ্বিতীয় ফোরাম কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের (সিপিএ) ৬৩ তম সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল রবিবার সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। ‘কনটিনিউয়িং টু এনহান্স দ্য হাই স্ট্যান্ডার্ডস অব পারফরমেন্স অব পার্লামেন্টারিয়ানস’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে গত ১ নভেম্বর থেকে সম্মেলনটি চলছে। এতে ৫২টি দেশের ১৮০টি জাতীয় ও প্রাদেশিক সংসদের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, সংসদ সদস্যসহ পাঁচ শতাধিক প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন। আগামী ৮ নভেম্বর সম্মেলনে সমাপ্তি হবে। সম্মেলনকে ঘিরে এরই মধ্যে বর্ণিল রঙে রাঙানো হয়েছে জাতীয় সংসদ ও এর আশেপাশের এলাকা। লাগানো হয়েছে ব্যানার, ফেস্টুন। আগত অতিথিদের নিরাপত্তায় নেয়া হয়েছে তিন স্থরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সংসদ সচিবালয় জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর থেকে মূল কার্যক্রম শুরু হবে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে। ৮ নভেম্বর পর্যন্ত এই সম্মেলন চলবে। এর আগে ১ নভেম্বর থেকে গতকাল পর্যন্ত রাজধানীর হোটেল রেডিসন ব্লুতে সিপিএ’র স্মল ব্রাঞ্চের বিভিন্ন প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শাশ্বত একনেই বাংলাদেশ তুলে ধরা হবে আগত ছয় শতাধিক বিদেশি অতিথিদের সামনে। এতে তুলে ধরা হবে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে। সিপিএ চেয়ারপারসন ও জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী জানান, কাল আনুষ্ঠানিক শুরুর দিনই বিকেল সাড়ে ৩ টা থেকে ৪ টা ১৫ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের হল অব ফেইমে অনুষ্ঠেয় সিপিএ’র নির্বাহী কমিটির বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে ‘রোহিঙ্গা সঙ্কট ও সমাধানের উপায়’ শীর্ষক সাধারণ আলোচনা উত্থাপন করবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এইচএম মাহমুদ আলী। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মায়ানমারে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করা হবে। এছাড়াও সিপিএ’র নির্বাহী কমিটির ৮টি সেমিনারে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যে কেউ বিষয়টি উত্থাপন করতে পারেন বলেও জানান তিনি। আয়োজকরা জানিয়েছেন, সিপিএ’র ঢাকা সম্মেলনে দুটি প্লেনারি সেশন ও আটটি ওয়ার্কশপে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞগণ ও সংসদ সদস্যগণ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা, স্বাগতিক বাংলাদেশ শাখার উত্থাপিত লিঙ্গবৈষম্য, দারিদ্র বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন, সংসদীয় কাজ সম্পর্কে যুবকদের অবহিত করা ছাড়াও কমনওয়েলথের মধ্যে দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য সংসদ সদস্যদের ভূমিকার বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। সিপিএ’র অন্তর্ভুক্ত ৫৪টি দেশের ১৮০টি জাতীয় সংসদ ও প্রাদেশিক পরিষদের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার ও সংসদ সদস্যসহ প্রায় ৬৫০ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করবেন। এ পর্যন্ত ৪৪টি দেশের ১১০টি ব্রাঞ্চের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছেন। বাকীরাও আসার পথে রয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে সিপিএ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করার জন্য জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী ২৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল নির্বাচিত করেছেন। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া। কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর পার্লামেন্টের সমন্বয়ে সিপিএ গঠিত হয়। ব্রিটিশ সা¤্রাজ্যের সময়ে ১৯২২ সালে এসোসিয়েশন গঠিত হওয়ার সময় এর নাম ছিল ইম্পেরিয়াল পার্লামেন্টারি এসোসিয়েশন (ইপিএ)। তখন এর সদস্য ছিল অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউফাউন্ডল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও যুক্তরাজ্য। পরবর্তী কালে ১৯৪৮ সালে ইপিএ’র নতুন নামকরণ করা হয় সিপিএ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটিশ সা¤্রাজ্যের অবসান হয় এবং ঔপনিবেশিক দেশগুলো স্বাধীনতা লাভ করে। বাংলাদেশ ১৯৭২ সালে কমনওয়েলথে যোগ দেয়। কমনওয়েলথের অধিকাংশ সদস্য বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন দেয়। কমনওয়েলথে যোগ দেয়ার পর থেকে বাংলাদেশ কমনওয়েলথ সরকার প্রধানদের শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়েছে। ১৯৭৩ সালে কানাডার অটোয়ায় অনুষ্ঠিত শীর্ষ সম্মেলনে প্রথমবারের মত যোগ দেয় বাংলাদেশ।


     এই বিভাগের আরো খবর