,

এমপি কেয়া চৌধুরীর উপর হামলাকারী তারা মিয়া ও শাহেদকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাহুবল উপজেলার যুবলীগ নেতা তারা মিয়া ও শাহেদ মিয়াকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করেছে হবিগঞ্জ ডিবি পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে ঢাকার কদমতলী এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। হবিগঞ্জ ডিবি পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ শাহ আলম, এস.আই আহসান হাবিব ও ইকবাল আহমদ এর নেতৃত্বে একটি টিম তিন দিন যাবত ঢাকার
বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কদলতলী এলাকার একটি বাসা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয় বলে জানান ওসি মোঃ শাহ আলম। উল্লেখ্য, এমপি কেয়া চৌধুরীর উপর হামলাকারী বাহুবল উপজেলা পরিষদের নব-নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান তারা মিয়া ও হবিগঞ্জ জেলা পরিষদ সদস্য আলাউর রহমান সাহেদের আগাম জামিন ৩য় বারেরমত না-মঞ্জুর করেছেন মহামান্য হাইকোর্ট। ৫ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বিকেলে তথ্য গোপন করে ৩য় বারেরমত হামলাকারী তারা মিয়া ও সাহেদের পক্ষে হাইকোর্টের ১৫নং কোর্টে জামিন প্রার্থনা করেন যুদ্ধাপরাধ টাইব্যুনালের প্রসিকিটর হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সন্তান ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন, এডভোকেট বাছেত মজুমদার ও এডভোকেট ইউসূফ হোসেন হুমায়ূন। তথ্য গোপন রেখে ৩য় বারেরমত জামিনের বিরোধীতা করেছেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও এডিশনাল এ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা। এ সময় বিজ্ঞ বিচারপতি আসাদুজ্জামান ও রাজিক আল জলিল এ জামিন না-মঞ্জুর করেন। তাছাড়া ১৫ ও ১৭ নং কোর্টে তথ্য গোপন করে একই সাথে জামিন চাওয়ার সমালোচনা করেন বিজ্ঞ এ দুই বিচারপতি। এদিকে ৩ ডিসেম্বর রবিবার বিকেলে ২য় বারেরমত হামলাকারী তারা মিয়া ও সাহেদের পক্ষে জামিন প্রার্থনা করেন  যুদ্ধাপরাধ টাইব্যুনালের প্রসিকিটর হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সন্তান ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। এ সময় সরকার পরে ডেপুটি এ্যাটর্নী জেনারেল ফরহাদ হোসেন মহামান্য বিচারপতির দৃষ্টি আর্কষণ করে বলেন, গত ২৭শে নভেম্বর মাহামান্য হাইকোর্টের ৭নং কোর্টে আগাম জামিন না-মঞ্জুর হওয়ার তথ্য গোপন করার বিষটি তুলে ধরলে, বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম আসামী পরে আইনজীবীর প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বিষ্ময়ের দৃষ্টিতে প্রশ্ন করেন, সন্ত্রাসী হামলা করে, মাহামান্য হাইকোর্টের তথ্য গোপন করেন, এমন অপরাধীদের কেন আরো আগেই গ্রেফতার করা হলো না। এর পূর্বে তারা মিয়া ও আলাউর রহমান সাহেদ গত ২২ নভেম্বর হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করেন। ২৮ নভেম্বর মঙ্গলবার শুনানি শেষে হাইকোটের বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন রুমী তাদের এ জামিন আবেদন না-মঞ্জুর করেন। শুনানি শেষে বিজ্ঞ বিচারপতি নারী সংসদ সদস্যের উপর হামলার বিষয়টিকে গুরুত্বর অপরাধগণ্য করে আসামীদের জামিন নামঞ্জুর করেন। এর মধ্যে আবারো তারা গোপনে জামিন আবেদন করেছিলেন। কিন্তু তাদের জামিন না-মঞ্জুর করেছেন মহামান্য হাইকোর্ট। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন এমপি কেয়া চৌধুরী। উল্লেখ্য, ১০ নভেম্বর শুক্রবার বিকেলে উপজেলার মিরপুরে বেদে পল্লীতে সরকারী চেক বিতরণ করতে যান এমপি কেয়া চৌধুরী। এ সময় নবনির্বাচিত উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতা তারা মিয়ার মার্কেটের ম্যানেজার জসিম উদ্দিন অঙ্গভঙ্গিভাবে ছবি তুলছিল। এ নিয়ে এমপি কেয়া চৌধুরীর সমর্থকদের সাথে তার কথা কাটাকাটি হয়। পরবর্তীতে এ নিয়ে প্রশাসনের উপস্থিতিতে এমপি কেয়া চৌধুরীর ওপর তারা মিয়া ও জেলা পরিষদের সদস্য আলাউর রহমান সাহেদসহ তাদের সমর্থকরা হামলা চালায়। এ সময় হামলার শিকার হন এমপি কেয়া চৌধুরী, মহিলা ইউপি সদস্য পারভীন আক্তার, সাবেক ইউপি সদস্য রাহেলা আক্তারসহ আরো কয়েকজন। ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশের পাশাপাশি শ্রীমঙ্গল থেকে র‌্যাব-৯ এর একদল সদস্য ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি শান্ত করেন। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে এমপি কেয়া চৌধুরী সেখানে স্থানীয়দের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন। বক্তব্য চলকালে হঠাৎ তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। তাকে প্রথমে বাহুবল ও পরে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সিলেট নেয়ার পর এমপি কেয়া চৌধুরীকে অজ্ঞান অবস্থায় ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে হাসপাতালের আইসিইউতে রাখা হয়েছিল। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা নেওয়া হয়। অবশেষে বিচারের দাবীতে ১৮ নভেম্বর রাতে একটি মামলা দায়ের করেন উপজেলার লামাতাসী ইউপি’র ১নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী সদস্য পারভীন আক্তার। মামলায় নবনির্বাচিত বাহুবল উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ তারা মিয়া ও হবিগঞ্জ জেলা পরিষদ সদস্য আলাউর রহমান সাহেদসহ ৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ১৪/১৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে। অপরদিকে এমপি কেয়া চৌধুরীর উপর হামলাকারীদের গ্রেফতার দাবিতে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে ৫ ঘন্টা অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) সকাল থেকে সন্ত্রাস-দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির উদ্যোগে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত ধর্মঘট শুরু হয়। চলে বিকাল পর্যন্ত। এ ধর্মঘট থেকে ২৬ নভেম্বর ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধের কর্মসূচি ঘোষণা করা হলে, তা শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়। এ ঘটনায় ২৩ দিন অতিবাহিত হলেও ঘটনার সাথে জড়িত তারা মিয়া ও আলাউর রহমান সাহেদকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এ নিয়ে তৃণমূল মানুষের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বাহুবল মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ মাসুক আলী বলেন, একটি মামলা দায়ের হয়েছে। পুলিশ গুরুত্বসহকারে মামলাটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে। এ মামলার আসামী জসিম বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।


     এই বিভাগের আরো খবর