,

মাত্র তের বছর বয়সেই শিল্পপতি

সময় ডেস্ক: তের বছর বয়সী কিশোর শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়। জন্মসূত্রে বাঙালি, এখন তার বসবাস ক্যালিফোর্নিয়ায়। কিন্তু ক্যালিফোর্নিয়ার সীমা ছাড়িয়ে মাত্র ১৩ বছর বয়সী এ কিশোরের খ্যাতি এখন ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। ক্লাস এইটেই শুভম আস্ত একটা কোম্পানির মালিক। নাম, ব্রেইগো ল্যাবস। দৃষ্টিহীনদের জন্য অল্প খরচে রোবটচালিত ব্রেইল মুদ্রণযন্ত্রই তৈরি হবে শুভমের কারখানা থেকে। বিনিয়োগের হাত বাড়িয়ে এরই মধ্যে এগিয়ে এসেছে মার্কিন মুলুকের প্রথম সারির প্রযুক্তি বিষয়ক সংস্থা ইনটেল কর্পোরেশন। আর তাই ঘুম নেই শুভমের চোখে। এখন তার শুধুই এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন। একই সঙ্গে চলছে স্কুলের পড়া, পাশাপাশি কোম্পানির দেখভাল। বছর খানেক আগের ঘটনা। নেহাতই কৌতূহলের বশে বাবার কাছে শুভম জানতে চেয়েছিল দৃষ্টিহীনরা পড়ে কীভাবে। শুভমের অভিভাবক বিস্তারিত ব্যাখ্যায় না গিয়ে শুধু বলেছিলেন, ইন্টারনেটে খুঁজে দেখ, তোমার সব উত্তর পেয়ে যাবে। সব উত্তর এখনো পায়নি শুভম তবে সেটাই যে তার কোম্পানি তৈরির প্রথম ধাপ, জানালেন শুভমের গর্বিত বাবা নিলয় বন্দ্যোপাধ্যায়। শুভমের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ইন্টেলের শীর্ষকর্তারাও। বাবার নির্দেশে নিজের মতো করেই অনলাইনে গবেষণা শুরু করে ছেলেটি। সামান্য ঘাঁটাঘাঁটির পরেই জানতে পারে, একটা মেশিনের দাম পড়ছে প্রায় দু’হাজার ডলারের মতো। মাথায় হাত কিশোরের, সর্বনাশ এত দাম দিয়ে সবাই এই যন্ত্র কিনতে পারে নাকি শুভমের কথায়, সেই ভাবনা থেকেই যন্ত্র তৈরির কাজে হাত দেয়া। ক্যালিফোর্নিয়ার বাড়িতে রান্নাঘরের টেবিলে এখনো সেই যন্ত্র নিয়ে টুকটাক কাজ করেই চলেছে সে। সে বলে, কাজ শুরুর আগেই যেন মনে হচ্ছিল, যন্ত্রটার দাম এত বেশি হওয়ার কথা নয়। একটু চেষ্টা করলেই আরো কম দামে বানানো যায়। চেষ্টার ফল মেলে হাতেনাতে। গত বছর স্কুলের বিজ্ঞান-প্রদর্শনীতেই নিজের হাতে বানানো যন্ত্র প্রথম পেশ করে সে। শুভমের লক্ষ্য, ডেস্কটপ ব্রেইল মুদ্রণযন্ত্র তৈরি করা। যার দাম কোনো ভাবেই ৩৫০ ডলারের বেশি হবে না। সাধারণত এ ধরনের যন্ত্রের ওজন ৯ কিলোর মতো হয়। কিশোর শিল্পপতির দাবি, তার যন্ত্র এর কয়েক গুণ হাল্কা হবে। সাধারণ কম্পিউটার থেকে যেমন কালিতে মুদ্রিত হরফ বার হয়। এই কম্পিউটার থেকে তেমনই বেরোবে ব্রেইল। মাস চারেক আগে বাবার থেকে ৩৫ হাজার ডলার পুঁজি নিয়ে কোম্পানি শুরু করে শুভম। আজ সেখানে রমরমা কারবার। ছেলের স্বপ্নপূরণ হতে দেখে অসম্ভব খুশি শুভমের ইঞ্জিনিয়ার বাবাও। এরই মধ্যে যন্ত্রের খাতিরে বহু পুরস্কার ও প্রশংসা পেয়েছে কিশোর। তবে এ মুহূর্তে শুভমের লক্ষ্য দেশ-বিদেশ থেকে বাছাই করা কিছু ইঞ্জিনিয়ারকে নিজের কোম্পানিতে নিয়ে আসা। তার স্বপ্ন সফল্যের আসল কারিগর যে তারাই। বয়স নেহাতই কম, তাই শুভমের হয়ে কোম্পানির সিইও-র দায়িত্ব সামলাচ্ছেন তার মা। প্রথম দিকে ছেলের কর্মকাণ্ডকে বিশেষ পাত্তা না দিলেও, আজ মানছেন ছেলে সত্যিই একটা কাজের কাজ করেছে।


     এই বিভাগের আরো খবর