,

লাখাইয়ে মানবতাবিরোধী মামলার আসামী লিয়াকত ও রজব এর বিরুদ্ধে আদালতে জবানবন্দি

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে হবিগঞ্জের লাখাই থানার দুই আসামি মো. লিয়াকত আলী ও আলবদর কমান্ডার আমিনুল ইসলাম ওরফে রজব আলীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের অষ্টম সাক্ষী হুমাযুন কবির ট্রাইব্যুনালে তার জবানবন্দি পেশ করেছেন। সাক্ষী জবানবন্দীতে তার বলেন, আসামি মো. লিয়াকত আলী আমার বাবা রঙ্গু মিয়াকে ধরে হাত পা ও চোখ বেঁধে নৌকায় দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। এরপর বাবার লাশ দত্তবাড়ির খালের পানিতে ফেলে দেয়।  জবানবন্দি শেষে আসামিপক্ষের আইনজীবী সাক্ষীকে জেরার কার্যক্রম শেষ করেন। মামলায় পরবর্তী সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করা জন্য বৃহস্পতিবার দিন নির্ধারন করা হয়েছেন। বুধবার ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই আদেশ দেন। সাক্ষী তার জবানবন্দিতে বলেন, আমার নাম হুমায়ুন কবির। বয়স আনুমানিক ৫৮ বছর। ঠিকানা গ্রাম- ফান্দাউক, থানা- নাসিরনগর, জেলা- ব্রাহ্মণবাড়িয়া। চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। ঢাকায় রেস্টুরেন্টে এর ব্যাবসা করি। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের গ্রামের ফান্দাউক বাজারে পোস্ট অফিসের বারান্দায় ফাঁকা জায়গায় থাকা বাবার পান-বিড়ির সিগারেটের ব্যবসার কাজে সহযোগিতা করতাম। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে বাবা রঙ্গু মিয়া, বাচ্চু মিয়াসহ এলাকার অনেকেই স্বাধীনতার পক্ষে ছিলেন। বাবা গোপনে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করতেন। অন্যদিকে আমাদের গ্রামের ফান্দাউক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাবরু মিয়া ও তার ভাইয়েরা ছিল পাকিস্তানপন্থী ও স্বাধীনতাবিরোধী। বাবরু মিয়া স্থানীয় শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিল। বাবরু মিয়ার ভাগ্নে আসামি মো. লিয়াকত আলী বাবরু মিয়ার বাড়িতে থেকে লেখাপড়া করতো। আসামি মো. লিয়াকত আলী রাজাকারদের নেতা ছিল। সাক্ষী আরও বলেন, ১৯৭১ সালের ভাদ্র মাসের প্রথম সপ্তাহে কোনো একদিন বেলা আনুমানিক ১০টার সময় আমি আমার বাবার দোকানে আসলে বাবা আমাকে বাড়ি থেকে বিস্কুটের টিন আনার জন্য পাঠায়। তখন আমার বাবার দোকানে আমার বড় ভাই জুম্মন মিয়াও ছিল। আমি বাজার থেকে বাড়িতে যাওয়ার সময় দেখি আসামি লিয়াকত আলী ও আমিনুল ইসলাম ওরফে রজব আলী তাদের সঙ্গীয় ১০/১২ জন রাজাকার নিয়ে ফান্দাউক বাজারের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। তিনি বলেন, বাড়ি থেকে বিস্কুটের টিন নিয়ে বাজারে বাবার দোকানে ফিরে এসে দেখি আমার ভাই জুম্মন মিয়া কাঁদছে। সে তখন বলে যে, আসামি লিয়াকত আলী ও আমিনুল ইসলাম ওরফে রজব আলীসহ ১০/১২ জন রাজাকার আমার বাবাকে ধরে ফান্দাউক বাজারের কামিউনিটি হলে অবস্থিত রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে গেছে। বাবাকে ধরার আগে বাজারে থাকা বাচ্চু মিয়াকে রাজাকাররা ধরেছিল এবং তাকেসহ বাবাকে রাজাকাররা ওই ক্যাম্পে নিয়ে যায়। আমি ও আমার বড় ভাই বাড়িতে ফিরে এসে সবইকে ঘটনা জানাই। ওইদিন বিকেলে আমার মা, বড় ভাই ও অন্যরা বাবাকে ছাড়িয়ে আনার জন্য রাজাকার ক্যাম্পে যাই। সেখানে রাজাকার লিয়াকত আলী ও আমিনুল ইসলাম ওরফে রজব আলী নাসিরনগর থানা থেকে বাবাকে ছাড়িয়ে আনতে বলে। তারপরও আমরা রাজাকার ক্যাম্পের বাইরে গভীর রাত পর্যন্ত অবস্থান করছিলাম। এক পর্যায়ে আমরা ফান্দাউক বাজারের ওই রাজাকার ক্যাম্পের ভেতর থেকে আমার বাবা ও তার সঙ্গে থাকা আটককৃত বাচ্চু মিয়ার আর্তচিৎকার শুনতে পাই। ভোর বেলা সেখান থেকে আমরা বাড়িতে ফিরে আসি। সাক্ষী বলেন, পরদিন সকাল আনুমানিক ৯টার দিকে আমি, আমার মা, বড় ভাই, আতœীয়রা খেলু ভাই (বর্তমানে মৃত) ৫ হাজার টাকা নিয়ে বাবাকে ছাড়িয়ে আনার জন্য ফান্দাউক বাজারের রাজাকার ক্যাম্পের দিকে যাই। ক্যাম্পের কাছাকাছি পৌঁছালে আমরা দেখতে পাই রাজাকর লিয়াকত আলী, আমিনুল ইসলাম ওরফে রজব আলী ও তাদের সঙ্গীয় রাজাকাররা আমার বাবা ও বাচ্চু মিয়াকে হাত ও চোখ বেধে ভিন্ন ভিন্ন দুটি নৌকায় উঠাচ্ছে। তারা একযোগে বলভদ্র নদীর দিয়ে পশ্চিম দিকে নাসিরনগর থানার উদ্দেশে রওনা দেয়। এরপর আমি ও মা বাড়িতে ফিরে আসি এবং আমার বড় ভাই ও আতœীয় খেলু পায়ে হেঁটে নাসিরনগর থানার উদ্দেশে রওনা দেই।ওইদিনই বিকেল আনুমানিক ৪টার দিকে আমার ভাই ও আত্মীয় খেলু মিয়া বাড়িতে ফিরে এসে কাঁদতে কাঁদতে জানায় যে, ওইদিন তারা নাসিরনগর গিয়ে বেলা ১২টার দিকে নাসিরনগর ডাকাবংলা ও কাছে দত্তবাড়ি খালে যে নৌকায় করে আমার বাবাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তা দেখতে পায়।


     এই বিভাগের আরো খবর