,

শায়েস্তাগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রী রতœগর্ভা সৈয়দা হাসিনা খাতুন এর কৃতিত্ব

তাজ উদ্দিন আহমদ ॥ শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী দাউদনগর গ্রামের সাহেব বাড়ীর মরহুম সৈয়দ আপ্তাব উদ্দিন এবং সৈয়দা হালিমা খানমের কন্যা সৈয়দা হাসিনা খাতুন ১৯৩০ সালের ৯ জুন জন্মগ্রহণ করেন। ২ ভাই ও ৪ বোন এর মধ্যে তিনি ছিলেন ৩য়। ভাইরা হলেন মরহুম সৈয়দ শামসু উদ্দিন ওরফে সমছু মিয়া, সৈয়দ কমর উদ্দিন ওরফে মামুদ মিয়া ও বোনরা হলেন, সৈয়দা আছিয়া খাতুন, সৈয়দা রাবিয়া খাতুন, সৈয়দা হোছনা খাতুন। শিক্ষা জীবনঃ ১৯৩৫ সালে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভর্তি হয়ে  তিনি ১৯৩৯ সালে পাঠশালা পাস করে ১৯৪০ সালে শায়েস্তাগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ট শ্রেণিতে ভর্তি হয়। ১৯৪২ সালে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন এবং ১৯৪৫ সালে এস.এস.সি ব্যাচ এর ছাত্রী ছিলেন। এরপর উনার বিয়ে হয় সিলেট জেলার দক্ষিণ সুরমা উপজেলার জাহানপুর গ্রামের মরহুম খাঁন সাহেব বজলুর রহমানের সাথে। স্বামী ছিলেন আসাম বেঙ্গল ডিভিশনাল সুপারেনটেনডেন্ট অব পুলিশ (উ.ঝ.চ)। হাসিনা একজন পরহেজগার ছিলেন এবং ২০০৯ সালে সিলেট রতœ ফাউন্ডেশন থেকে “রতœগর্ভা মা” অ্যাওয়ার্ড পান এবং ৩ ছেলে, ৪ মেয়েদের সর্বদিক দিয়ে তিনি গড়ে তোলেন। ২০১০ সালে গুনীজন সম্মাননা পদকে ভূষিত হন। প্রথম পুত্র মোহাম্মদ মাহবুবর রহমান বিশিষ্ট সাংবাদিক। দীর্ঘ দিন যাবত সিলেট প্রাচীন পত্রিকা সাপ্তাহিক যুগভেরী ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও সিলেট প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে মাহবুব যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও সাপ্তাহিক নিউইয়র্ক পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক রয়েছেন। দ্বিতীয় পুত্র জাতীয় পার্টি প্রেসিডিয়াম সদস্য ও হবিগঞ্জ জেলা আহ্বায়ক শিল্পপতি আলহাজ¦ মোহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিক ১৯৬০ সালে ১৮ আগষ্ট শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার চরনুর আহম্মদ প্রকাশিত দাউদনগর গ্রামের সাহেব বাড়ীতে জন্মগ্রহণ করেন এবং সেখানেই নানা বাড়ি থেকে শৈশব বেড়ে ওঠেন। তারপর দেশ-বিদেশে লেখাপড়া জন্য পাড়ি জমান। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় হতে গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি লাভ করেন। ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু করেন। ১৯৬৯ এর গণ আন্দোলন ও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে অংশগ্রহণ করেন। সিলেট জেলা সদর আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি পদে দীর্ঘদিন কাজ করেছিলেন এবং আওয়ামীলীগের সহযোগী সংগঠন কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ তথা ১৫ দলীয় জোটের নমিনেশন প্রাপ্ত হয়ে দলীয় সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে সিলেট-৩ আসনে সংসদ নির্বাচন করেন। ২০০২ সালে পল্লীবন্ধু সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি পল্লীবন্ধু হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় পার্টির আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন। এছাড়া সামাজিক কর্মকান্ড ও অনেক সংস্থার সঙ্গে জড়িত আছেন। তৃতীয় পুত্র মোহাম্মদ যোবেদুর রহমান জুবের একজন ব্যবসায়ী এবং প্রিন্স গ্র“প অব কোম্পানির ডাইরেক্টর। চতুর্থ মেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক লিংকন মেডিকেল কলেজের ডাক্তার শফিকুন্নেছা খাতুন এবং তার স্বামী সাদউজ্জামান চৌধুরী একই মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ও চিকিৎসক। পঞ্চম মেয়ে মিসেস শরিফুন্নেছা খাতুন এবং তার স্বামী সিলেট জেলার দক্ষিণ সুরমা উপজেলার জালালপুর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার সৈয়দ আমির আলী। ৬ষ্ট মেয়ে মিসেস আক্তারুন্নেসা ও তার স্বামী অ্যাডভোকেট শামসুল হক যুক্তরাষ্টের নিউইয়র্ক এর কলেজে অধ্যাপনা দায়িত্বে রয়েছেন। সপ্তম মেয়ে মিসেস শরিকুন্নেসা খাতুন তার স্বামী মরহুম আবু হেনা মোস্তফা কামাল চৌধুরী জিতু। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করে ডঙজখউ ডওউঊ কোম্পানীতে কর্মরত রয়েছেন। সৈয়দা হাসিনা খাতুন অত্যন্ত ভাগ্যবর্তী মহিলা। তাঁর ছেলে-মেয়ে ও নাত-নাতনীরা দেশে-বিদেশে সুনামের সাথে প্রতিষ্ঠিত। এ বৃদ্ধ বয়সেও ছেলে-মেয়ে ও নাত-নাতনীদের মায়ার টানে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশে আসা-যাওয়া করতেন। সৈয়দা হাসিনা খাতুন ২০১৭ সালের ৪ আগষ্ট শুক্রবার বিকাল ৩ টা ৪৫ মিনিটে ঢাকা বারিধারাপার্ক নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন। ৬ আগষ্ট সিলেট হযরত শাহজালাল (রাঃ) মাজার প্রাঙ্গনে দাফন করা হয়।


     এই বিভাগের আরো খবর