,

চুনারুঘাটে সুতাং নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন

চুনারুঘাট প্রতিনিধি ॥ হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সুতাং নদীর ক, খ ও গ অংশ থেকে কোনো প্রকার ইজারা ছাড়াই অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে প্রভাবশালী একটি মহল। দিনরাতে অবাধে চলছে বালু উত্তোলন। দিনে গড়ে ৩ থেকে ৫ লাখ টাকার বালু উত্তোলন করলেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। প্রতিমাসেই আইনশৃঙ্খলা সভায় বালু নিয়ে প্রতিটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অভিযোগ করছেন। কিন্তু প্রশাসন যেন অসহায়। এদিকে অবৈধ বালু উত্তোলন নিয়ে ২৭ ডিসেম্বর এলাকাবাসী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর পৃথক দুটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। একই দিন আইনশৃঙ্খলা সভায়ও বিষয়টি নিয়ে নানা অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, সুতাং নদীর কয়েকটি অংশে ভুয়া লিজ দেখিয়ে এবং জব্দকৃত বালু বিক্রির নামে নতুন বালু উত্তোলন করার কারণে সরকার প্রতিবছর ৩ থেকে ৫ কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, উপজেলার দেওরগাছ গ্রামের জিতু মিয়া নামে জনৈক ব্যক্তি হাইকোর্ট থেকে একটি স্ট্যাটাস্কোর আদেশ এনে প্রায় ৪ মাস আগে সুতাং নদীর অংশে বালু উত্তোলন শুরু করেন। পরে স্থানীয়দের বাধার মুখে তৎকালীন ইউএনও সিরাজাম মুনিরা অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করে দেন এবং সুতাং নদীতে বালু উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়, যা এখন বহাল রয়েছে। কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে জিতু মিয়া ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন শুরু করে পার্শ্ববর্তী আমতলী বাজারে এনে বিক্রি করছেন। প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ ট্রাক্টর বালু আমতলী এলাকায় নিয়ে আসার ফলে রাস্তাঘাটে ধুলায় ধূসরিত হয়ে যাচ্ছে। ফলে পথচারী ও শিক্ষার্থীদের চলাফেরায় নাভিশ্বাস উঠেছে। আমতলী বাজার বালুর ডিপো থেকে ট্রাকযোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে এ বালু পাচার করা হচ্ছে। প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ ট্রাক বালু যাচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও অলিপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চলে। প্রতি ট্রাক ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা হিসেবে প্রতিদিন ৩ থেকে ৫ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ওই চক্রটি। অথচ এ বালুমহাল থেকে সরকার কোনো রাজস্ব পাচ্ছে না। স্থানীয় কয়েক নেতাকে ম্যানেজ করে জিতু মিয়া অবৈধভাবে এ বালু বিক্রি করছে- এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর। তারা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ইউএনও ও স্থানীয় এমপি বরাবর অভিযোগ দায়ের করেছেন। এলাকাবাসী অভিযোগে বলেন, জিতু মিয়া এলাকার একটি বাহিনী তৈরি করে দীর্ঘদিন ধরে সুতাং নদীর বালু অবৈধভাবে উত্তোলন করে বিক্রি করেছেন। নিয়ম অনুযায়ী বালু উত্তোলনে কোনো প্রকার মেশিন ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু তিনি আইনের কোনো তোয়াক্কা না করেই ড্রেজার মেশিন দিয়ে দিনে-রাতে বালু উত্তোলন করছেন। অথচ স্থানীয় প্রশাসন এগুলো দেখেও না দেখার ভান করছে। জিতু মিয়া স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এ বালু উত্তোলন করছেন বলে এলাকায় প্রচার করছেন। উপজেলা প্রশাসনও অবৈধ বালু উত্তোলন বিষয়ে কোনো ভূমিকা নিচ্ছে না। এ নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের একটি সূত্র জানায়, সম্প্রতি সুতাং নদীর বনগাঁও এলাকায় কিছু বালু জব্দ করা হয়। এর পরই এসব বালু কোনো প্রকার প্রচার ছাড়াই সহকারী কমিশনার (ভূমি) নামমাত্র মূল্যে জিতু মিয়াকে লিজ দেন। এ লিজ নিয়ে জিতু মিয়া এক সপ্তাহ ধরে ২০-২২টি ট্রাক্টর লাগিয়ে বালু উত্তোলন করছেন। এসব বালু আমতলী এলাকায় এনে বিক্রি করছেন। অথচ প্রশাসন এসব বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। এ বিষয়ে খনিজসম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর সহকারী পরিচালক জয়নাল আবেদিন আশা জানান, সুতাং নদীর ৩টি মহালের কোনো স্থানে বালু উত্তোলনের লিজ নেই। কেউ যদি বালু উত্তোলন করে তবে সেটা অবৈধ। অথচ জিতু মিয়া খনিজসম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো থেকে অনুমতি এনে এসব বালু উত্তোলন করছেন বলে এলাকায় প্রচার করছেন।


     এই বিভাগের আরো খবর