,

আজমিরীগঞ্জে যুবলীগের আহবায়ক ও যুগ্ম আহবায়ক গং কর্তৃক ইউএনও’কে লাঞ্ছিত’র ঘটনায় আটক ১

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আজমিরীগঞ্জ উপজেলার উন্নয়ন মেলায় দলীয় ব্যানার অপসারন করায় যুবলীগ নেতার হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুলক কান্তি চক্রবর্তী। এমপির মধ্যস্ততায় সালিশ বৈঠকে ইউএনও’র কাছে ক্ষমা চেয়েও রক্ষা পেলেন না আজমিরীগঞ্জ উপজেলা যুবলীগ নেতারা। বিষয়টি নিস্পত্তির পরেও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী বাদী হয়ে নির্বাহী কর্মকর্তার পক্ষে যুবলীগের ১৫ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সরকারী কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। গতকাল রবিবার বিকেলে সাড়ে ৪টায় এ মামলা দায়ের করা হয়। সূত্রে জানা যায়, আজমিরীগঞ্জে তিন দিন ব্যাপি উন্নয়ন মেলা শুরু হলে মেলার মধ্যে এবং উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় কয়েকটি ব্যানার লাগান উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক মমিনুর রহমান সজিব। ব্যানারে তিনি স্থানীয় এমপি অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খান ও জেলা যুবলীগের সভাপতি এবং সাধারন সম্পাদকের ছবি ব্যবহার করেন এবং এমপি আব্দুল মজিদ খানের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের ছবি ব্যবহার করেন। গত শনিবার সন্ধ্যায় সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল স্থানীয় এমপি অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খান। তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে সকল দলীয় ব্যানার মেলা ও অফিস প্রাঙ্গণ থেকে অপসারন করা হয়। বিকেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুলক কান্তি চক্রবর্তী মেলা পরিদর্শনে গেলে সেখানে উপস্থিত হয়ে উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক বাবুল রায় ও যুগ্ম-আহ্বায়ক মমিনুর রহমান সজিবের নেতৃত্বে যুবলীগের নেতাকর্মীরা তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল শুরু করেন এবং হুমকি দেন। এক পর্যায়ে মেলায় থাকা দর্শনার্থীরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে মেলা থেকে তাঁর কার্যালয়ে নিয়ে যান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুলক কান্তি চক্রবর্তী বলেন, মেলার ভিতরে রাজনৈতিক কোন ব্যানার লাগানোর নিয়ম নেই। তাই তিনি ব্যানারগুলো অপসারন করেছেন। মেলায় ও অফিসের সামনে বড় বড় ব্যানার লাগানো হয় কাউকে না জানিয়ে। যেহেতু সমাপনী অনুষ্ঠানে এমপি মহোদয় আসবেন তাই ব্যানারগুলো সরানো হয়েছিল। তিনি তাকে হুমকি ও দুর্ব্যবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে জানান, মেলা সাময়িক বন্ধ রেখে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসককে বিষয়টি অবহিত করেন। উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহবায়ক মমিনুর রহমান সজিব জানান, তিনি মেলার বাহিরে ব্যানার লাগিয়েছিলেন। এটি দলের ব্যানার নয়। সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড নিয়ে তিনি ব্যানার তৈরি করেছিলেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ব্যানারগুলো ছিড়ে নষ্ট করায় তারা ক্ষুদ্ধ হয়েছেন। এদিকে, রাতে এমপি আব্দুল মজিদ খান ও উপজেলা চেয়ারম্যান আতর আলীর মধ্যস্থতায় এক শালিস বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। শালিস বৈঠকে উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক বাবলু রায় ও যুগ্ম আহ্বায়ক মোঃ মমিনুর রহমান সজিব উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলে বিষয়টি নিস্পত্তি হয়। কিন্তু নিষ্পত্তির পরেও রবিবার বিকেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পক্ষে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী বাদী হয়ে যুবলীগের আহ্বায়ক বাবুল রায়, যুগ্ম আহ্বায়ক মোঃ মমিনুর রহমান সজিব, যুবলীগ কর্মী উখেদ আলীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ১০/১২ জনের বিরুদ্ধে সরকারী কাজে বাধা প্রদানের অভিযোগে আজমিরীগঞ্জ থানায় মামলাটি দায়ের করেন। এ ঘটনায় পুলিশ যুবলীগ কর্মী উখেদ আলীকে আটক করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আজমিরীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ ইকবাল হোসেন জানান, গত শনিবার রাতে এমপি মহোদয়ের মধ্যস্থতায় ইউএনও মহোদয়ের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন যুবলীগ নেতারা। বিষয়টি প্রাথমিকভাবে তাৎক্ষণিক মিমাংসা করে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু আজ পিআইও মোহাম্মদ আলী বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহবায়ক মমিনুর রহমান সজিব বলেন, এমপি ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদকের উপস্থিতিতে আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট পায়ে ধরে মাফ চাইলাম। তার ছবি, ভিডিও ফেইসবুক ও মিডিয়ায় ছড়ানো হয়েছে। এর পরও যদি মামলা হয় তাহলে আমরা কোথায় যাব। নেত্রীই আমাদের একমাত্র ভরসা। তিনি আরও বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে আমরা কথা বলতেই পারি। কারণ আমরা রাজনীতি করি। কিন্তু এভাবে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়ায় দলের পক্ষ থেকে সভা করে পরবর্তি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। জেলা প্রশাসক মনীষ চাকমা জানান, প্রশাসন সরকারে কাজ মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন করে। যারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে বাজে আচরন করেছে তারা পূর্বেও সরকারী কর্মকর্তার সাথে বাজে আচরন করার রেকর্ড রয়েছে। তাই এ ব্যাপারে আইনের আশ্রয় নেয়া হয়েছে।


     এই বিভাগের আরো খবর