,

নবীগঞ্জের সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব কুটিশ্বর দাশের ২৩তম মৃত্যু বার্ষিকী

প্রেস বিজ্ঞপ্তি ॥ আজ ৪ এপ্রিল নবীগঞ্জ উপজেলা ৭ নং করগাঁও ইউপির প্রাক্তন চেয়ারম্যান,  নবীগঞ্জ জে,কে হাই স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষক, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, নবীগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা সহ-সভাপতি, প্রখ্যাত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক ও সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব কুটিশ্বর দাশের ২৩ তম মৃত্যু বার্ষিকী। কীর্তিমান এ ব্যক্তিত্ব ১৯২৪ সালে অবিভক্ত ভারতের আসাম প্রদেশের সিলেট জেলার নবীগঞ্জ থানার মুক্তাহার গ্রামের এক ঐতিহ্যবাহী পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা বিশিষ্ট সমাজসেবক বাবু ভগবান দাশ ও মাতা সুরধনী দাশ। সেই সময়ে “বাবুরবাড়ী” নামে খ্যাত তাঁদের পরিবারটি ছিল শিক্ষা, সংস্কৃতি, যশ ও খ্যাতিতে এই অঞ্চলের বিখ্যাত পরিবারগুলির মধ্যে অন্যতম। তিনি নবীগঞ্জ দরবার পাঠশালা থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে ভর্তি হন নবীগঞ্জ জে.কে উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখানে ১৯৪৩ সালে কৃতিত্বের সাথে এট্রাস ও হবিগঞ্জ বৃন্দাবন কলেজ থেকে ১৯৪৫ আইএ পাশ করেন। জীবনাচারে তিনি ছিলেন অনন্য ভদ্র, সজ্জন, সংস্কৃতমনা ও অহিংসবাদী। সততা, পরোপকারীতা, দেশপ্রেম, সুদক্ষ বিচারবুদ্ধি, মানবতাবোধ ছিল তাঁর চারিত্রিক গুণাবলীর মধ্যে অন্যতম। ব্যক্তিত্বের বিশালতা, জ্ঞানের গভীরতা, মার্জিত ব্যবহার ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা সমৃদ্ধ ব্যক্তি হিসেবে সবাই তাকে মান্য ও শ্রদ্ধা করতো। জীবদ্দশায়ই তিনি ব্যক্তি থেকে পরিনত হয়েছিলেন ব্যক্তিত্বে, হয়ে উঠেছিলেন এক প্রতিষ্ঠান। পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে কোন সরকারি-বেসরকারি চাকুরীর জন্য টু না মেরে পৈত্রিক বিষয় সম্পত্তি রক্ষনাবেক্ষনের পাশাপাশি সমাজকে সুশিক্ষার আলোয় আলোকিত করার প্রয়াসে পারিবারিক আর্থিক প্রাচুর্যতা ও ব্যবসা-বানিজ্য থাকা সত্ত্বেও ১৯৫১ সালে শিক্ষকতার মতো মহান পেশাকে জীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেন। যোগদান করেন নবীগঞ্জ জে.কে হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক পদে। শিক্ষকতায় প্রবেশ করেই তিনি মেধা, প্রজ্ঞা দ্বারা শিক্ষাঙ্গনের সকলের প্রিয় হয়ে উঠেন। অর্জন করেন অভিভাবক মহলের শ্রদ্ধা। অনেক গরিব ও মেধাবী ছাত্রদের নিজস্ব অর্থায়নে লেখাপড়া করিয়েছেন। যাঁরা পরবর্তিতে সামাজিকভাবে প্রতিষ্টিত হয়েছেন। একটা সময়ে তিনি সমাজিক ও রাজনৈকি কর্মকান্ডে ব্যস্ত হয়ে ১৯৫৪ সালে শিক্ষকতা থেকে অকালীন অবসর গ্রহণ করেন। ব্যক্তি ও রাজনৈতিক জীবনে তিনি কথার মূল্য বা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে চলতেন। আর এ সব ছোট-বড় কাজের মধ্য দিয়েও সমাজ সচেতনতা ও স্বদেশ প্রীতির পরিচয় দিয়েছেন। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে হক-ভাসানী-সোহরাওয়ার্দী-মুজিব এর নেতৃত্বে তিনি যুক্তফ্রন্টের পক্ষে তৃণমূলে ব্যাপক কাজ করেন। ১৯৬০ সালে আইয়ূব খাঁন মৌলিক গনতন্ত্র প্রতিষ্টার লক্ষ্যে বিডি নির্বাচন চালু করলে ১৯৬৭ সালে তিনি তৎকালীন নবীগঞ্জ থানার ৬নং করগাঁও (বর্তমানে ৭নং করগাঁও) ইউনিয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পাকিস্তান আমলে নবীগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের প্রথম কমিটির গঠিত হলে তিনি সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। একটি ইউনিয়নের প্রধান ব্যক্তি হিসেবে দীর্ঘ দিন অত্যন্ত সুনাম ও শ্রদ্ধার সাথে চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করেন  জননেতা কুটিশ্বর দাশ। ১৯৬৯ সালে পূর্ব-বাংলা স্বাধীকারের চেতনায় জ্বলে ওঠে। ১৯৭০ এর নির্বাচন ও ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর আবস্থানটা ছিল অগ্রগণ্য। যুদ্ধ শুরু হলে তিনি পরিবার পরিজনদের বালাটের কাঠাল বাড়ীতে রেখে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করেন। শরনার্থীদের খাদ্য, ঔষধসহ প্রয়োজনীয় মৌলিক চাহিদা পূরনে শুরু করেন রিলিপ কার্যক্রম। বালাটের ৩নং ক্যাম্পের সেক্রেটারীর দায়িত্ব পালনকালে শরনার্থীদের সমস্যাবলী সমাধানের পাশাপাশি যুবকদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করতে উদ্ভোদ্ধ করে তাদের রিক্রোট করেন মুক্তিযুদ্ধে। তাছাড়া তিনি মুক্তিযোদ্ধাদেরও নানাভাবে সহযোগীতা করেন। দেশ স্বাধীন হলে দেশে ফিরেই স্বগ্রামসহ ইউনিয়নের রাজকার ও দুর্বৃত্তদের কর্তৃক লুঠপাঠকৃত মালামাল ফেরত আনা ও উত্তেজিত পরিস্থিতি শান্ত করতে ভূমিকা রাখেন। যুদ্ধবিধস্ত  গ্রাম-বাংলা পুনঃর্গঠনে ক্ষতিগ্রস্থদের ঘরবাড়ী নির্মানে সরকারি বরাদ্দ প্রদানের পাশাপাশি নিজস্বভাবেও সহযোগিতা করেন। মুক্তিযুদ্ধের পর যুদ্ধবিধ্বস্থ গ্রাম বাংলা পুনর্গঠন করতে তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। নির্যাতিত, নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়ান। তাঁর সময়ে ইউনিয়নের উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন সাধিত হয়। তিনি সব সময় পিছিয়ে পড়া অনগ্রসর সমাজকে স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে কাজ করেছেন। একজন স্বনামধন্য চেয়ারম্যান হিসেবে ইউনিয়নের সার্বিক উন্নয়নের পাশাপাশি প্রত্যেক মানুষের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, সফলতা-ব্যর্থতা সর্বোপরি গণ-মানুষের বিশ্বস্থ বন্ধু হিসেবে সামাজিক, পারিবারিক ও ব্যক্তিগত বিষয়াদিতে সম্পৃক্ত হয়ে সবার সাথে মিশে একাকার হয়ে গিয়েছিলেন। ১৯৯৫ সালের ৪ই এপ্রিল (বাংলা বর্ষ ১৪০১ সালের ২০ চৈত্র) রোজ মঙ্গলবার ভোরবেলা ৭০ বছর বয়সে ইহলোকের মায়া ত্যাগ করে পরলোকের পথে গমণ করেন মহৎ ও প্রজ্ঞাবান এ ব্যক্তিত্ব। মুক্তাহার গ্রামের পারিবারিক শশ্মানে তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন। তাঁর স্মৃতির স্মরণে ২০১১ সালের ১১ নভেম্বর গঠিত হয় কুটিশ্বর দাশ স্মৃতি সাহিত্য পরিষদ।


     এই বিভাগের আরো খবর