,

হবিগঞ্জে তলিয়ে যাচ্ছে নিম্নাঞ্চলের ধান

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ টানা বৃষ্টির কারণে পাকা ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন হবিগঞ্জের কৃষকেরা। গত দুই দিন ধরে প্রবল বর্ষণে ভিজে নষ্ট হচ্ছে কেটে রাখা বোরো ধান। সংরক্ষণ করতে না পারায় অধিকাংশ খলায় (ধান মাড়ানো ও শুকানোর জন্য বিস্তৃত স্থান) পাকা ধানে চারা গাছ গজিয়েছে। এতে করে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি হাওর অঞ্চলের কৃষকদের। জানা যায়, গত বছর আগাম বন্যায় বোরো ধান পানিতে তলিয়ে যায়। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় হবিগঞ্জের প্রতিটি হাওরে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। বৈশাখের প্রথম দিকে রোদ থাকায় এ বছর মাঠে ধানও পেকে গেছে অন্য বছরের তুলনায় অনেক আগেই। কিন্তু গত দুই দিনের প্রবল বর্ষণে মাঠে পাকা ধান রেখে অজানা আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে কৃষকদের। প্রবল বর্ষণের কারণে কেটে আনা ধান নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন জেলার প্রতিটি উপজেলার কৃষকরা। এর মধ্যে আবার পানিতে তলিয়ে যেতে শুরু করেছে নিম্নাঞ্চলের জমির ধান। এতে করে আরও দুশ্চিনায় পড়েছেন বানিয়াচং, আজমিরীগঞ্জ ও লাখাই উপজেলার কৃষকরা। সোমবার দুপুরে জেলার বানিয়াচং উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি খলায় ধানের ছোট বড় স্তুপ। দুইদিন বৃষ্টির কারণে ধান শুকাতে পারছেন না কৃষকরা। ফলে স্তুপের মধ্যেই অনেক ধান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অনেক ধানে চারা গজাতে শুরু করেছে। এতে করে তাদেরকে বিরাট ক্ষতির সম্মুখিন হতে হচ্ছে। তাছাড়া ধানের খড়ও (বন) শুকানো সম্ভব না হওয়ায় সেগুলোও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে গত বছরের মতো এ বছরও গো-খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দেবে বলে মনে করেন কৃষকরা। রোদের জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করছেন তারা। এদিকে, জেলার বানিয়াচং, আজমিরীগঞ্জ ও লাখাই উপজেলার নিম্নাঞ্চলের জমির ধান পানিতে তলিয়ে যেতে শুরু করেছে। এর মধ্যে বানিয়াচং উপজেলার আফরার হাওর, মকার হাওর, আড়িয়ামুগুর হাওর, আজমিরীগঞ্জ উপজেলার ফিরিজপুর হাওর, জলসুকা হাওর, কোদাইল হাওর, লাখাই উপজেলার দশ কামানিয়া হাওর, শীবপুর হাওর, নওগাঁ হাওরের নিম্নাঞ্চলের জমিগুলো পানিতে তলিয়ে যেতে শুরু করেছে। ফসলহানির শংকায় কৃষকরা রোদের অপেক্ষা না করে প্রবল বর্ষণেই কোমর পানিতে নেবে ধান কাটছেন। তবে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে নিম্নাঞ্চলের জমির ধান তুলতে না পারার শঙ্কায় কৃষকরা। বানিয়াচং উপজেলার সুবিদপুর গ্রামের কৃষক সরদন সরকার বলেন, ‘আমি ৫ একর জমির ধান কেটে মাড়াই করে খলায় রেখেছি। কিন্তু বৃষ্টির কারণে সেগুলো শুকাতে না পারায় খলায়ই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ধানগুলো।’ একই উপজেলার আতুকুড়া গ্রামের কৃষক রমিজ আলী বলেন, ‘চারা গজিয়ে অধিকাংশ ধান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এসব ধান থেকে চাল বের করলে ৮০ শতাংশ ধান ভেঙে দুর্গন্ধ ছড়াবে, যা খাওয়ার অনুপযুক্ত হয়ে পড়বে।’ হবিগঞ্জ সদর উপজেলার উমেদ নগর গ্রামের কৃষক আলী আকবর বলেন, ‘দুই দিনের প্রবল বর্ষণে আমার আফরার হাওরের জমিগুলো পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। আর একদিন এ অবস্থায় বৃষ্টি হলেই সম্পূর্ণ হাওর তলিয়ে যাবে।’ ধান কাটার শ্রমিক সইলেন দাস জানান, বৃষ্টিতে ধান তলিয়ে যাচ্ছে। তাই বৃষ্টির মধ্যেই ধান কাটতে হচ্ছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত উপপরিচালক মো. ইলিয়াছ মিয়া বলেন, ‘প্রকৃতির ওপর কারও হাত নেই। দুই দিন ধরে প্রবল বর্ষণে খলা থেকে ধান সংরক্ষণ বন্ধ রয়েছে। এভাবে কয়েক দিন গেলে কৃষকেরা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি বলেন, ‘যত দ্রুত সম্ভব নিম্নাঞ্চলের জমিরগুলোর ধান কেটে ফেলতে হবে।’


     এই বিভাগের আরো খবর