,

চুনারুঘাটে অবকাঠামো সংকটে চন্দ্র মল্লিকা উচ্চ বিদ্যালয়

চুনারুঘাট প্রতিনিধি ॥ ধারণ ক্ষমতার দুইগুণ বেশি শিক্ষার্থী নিয়ে চলছে চুনারুঘাট উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের গনকিরপাড় চন্দ্রমল্লিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পাঠদান। এ বিদ্যালয়টিতে নেই পাঠ্যবইয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার উপকরণ। শিক্ষার্থীদের বসার বেঞ্চের সংকট রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। ফলে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাঠ গ্রহণ এবং শিক্ষকদের পাঠদান দুটোই চলছে সমস্যার মধ্য দিয়ে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা নিরসনে উদাসীন হওয়ায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা। বিদ্যালয় সূত্র জানায়, ২০০২ইং সালে প্রয়াত সমাজকল্যাণ মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা এনামুল হক মোস্তফা শহীদ, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা প্রশাসন ও ১০টি ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যানগনের উপস্থিতিতে ৭৫ শতক জমিতে চন্দ্রমল্লিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুতেই একটি ভাড়া ঘর করে ৮৪ জন শিক্ষার্থী নিয়ে বিদ্যালয়টির পাঠদান শুরু করা হয়। বর্তমানে উক্ত প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্টাতাসহ ১৫’জন শিক্ষক/শিক্ষীকা নিয়মিত ক্লাসে পাঠদান করে আসছেন। প্রাথমিকভাবে বিদ্যালয়টির অনুমোদন দেয়া হয় ২০১৩ইং সালে। পরে ২০১৪ইং সালে ৯ম শ্রেণীর জন্য আবেদনের প্রেক্ষিতে শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক ২০১৫ইং সালে অনুমোদন দেয়া হয়। ২০১৭ইং সালে স্থায়ীভাবে একাডেমীক স্বীকৃতি পায়। বোর্ড অনুমোদিত ম্যানেজিং কমিটি নিয়মিত চালু আছে। বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণীতে ব্যবসা শাখা (কমার্স) ২০১৬ইং সালে চালু করা হয়। অর্থ সংকটের কারণে বিজ্ঞানাগার চালু করা সম্ভব হয়নি। এ জন্যই মেধাবী ছাত্র/ছাত্রীগণ বিজ্ঞান বিভাগের পাঠদান থেকে বঞ্চিত। এখানে ৩’শ থেকে ৪’শ শিক্ষার্থীর ধারণক্ষমতা থাকলেও প্রতিদিন গড় উপস্থিতি প্রায় ৬ শত ৫০ জন। শিক্ষার্থী অনুযায়ী বাড়েনি বিদ্যালয়ের অবকাঠামো। বসার বেঞ্চ অপ্রতুল হওয়ায় অতিরিক্ত গরমের সময়েও প্রতিটি বেঞ্চে ৫-৬ শিক্ষার্থীকে বসতে হচ্ছে। আর এভাবে প্রতিদিন গা ঘেঁষাঘেঁষি করে বসতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠ গ্রহণ হচ্ছে ব্যাহত। আর বিদ্যুৎ থাকলেও অনেক শ্রেণিকক্ষেই নেই বৈদ্যুতিক পাখা। বিদ্যালয়ে প্রতিটি ক্লাশের শিক্ষার্থীরা জানান, বসার জায়গা না পেয়ে অনেক সময় বাড়ি ফিরে যেতে হয়। দশম শ্রেণির ১ জন নিয়মিত শিক্ষার্থী সাজনীন চৌধুরী জানান, মেয়েদের বসতে দিয়ে ছেলেদের দাঁড়িয়ে ক্লাস করতে হয়। ৮ম শ্রেণির ১ জন নিয়মিত  শিক্ষার্থী আরিফা আক্তার বলেন, ছোট ছোট কক্ষে মাত্র সামান্য কয়েকটি বেঞ্চে শতাধিক শিক্ষার্থী ক্লাস করি। প্রতিটি বেঞ্চে ৫-৬ জন করে বসতে হয়। অনেক সময় ধাক্কাধাক্কিতে বেঞ্চ থেকে পড়েও যাই। বিদ্যালয়ের অধ্যায়নরত বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের কাছ থেকে জানা যায় যে, বসার জায়গা না পেয়ে তাদের ছেলে-মেয়েরা প্রায়ই বাড়ি ফিরে যায়। তাই তারা স্কুলে যেতে চায় না। এমন অবস্থা চলতে থাকলে বিদ্যালয়ের অনেক ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষাবিমুখ হয়ে পড়বে। অপরদিকে শিক্ষক/শিক্ষীকারা বলেন, এত সমস্যার পরেও এ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের  উপস্থিতি কমছে না। বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আলহাজ্ব ওসমান গণি (কাজল) বলেন, দেশ স্বাধীনতার পর থেকে ১০-১৫টি এলাকার ও ৩টি বাগানের আদিবাসী এবং চা শ্রমিকের ছেলে মেয়েরা ১০-১২ কিলোমিটার দূরে গিয়ে লেখাপড়া করত, তাই সকলের প্রচেষ্টায় আমি বিদ্যালয়টি করি। কিন্তু শুরু থেকেই বিদ্যালয়ে নানান সমস্যায় জর্জরিত। তিনি আরো বলেন, একটি দুঃখের বিষয় হলো অত্র প্রতিষ্ঠান থেকে এস.এস.সি পাশ করে অনেক শিক্ষকগণ মাস্টার্স কোর্স শেষ করে বর্তমানে সে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাঠদানের কর্তব্যরত আছেন কিন্তু এখনও পর্যন্ত উক্ত বিদ্যালয়টি এমপিওভূক্ত হয়নি। বিদ্যালয়ে পাঠদানরত শিক্ষক/শিক্ষিকাগণ মানবেতর জীবনযাপন করছেন। প্রতিষ্ঠান থেকে যথসামান্য সম্মানি ভাতা তাদেরকে দেয়া হয়। সুতরাং তাদের জীবনও দুর্বিষ। তিনি শিক্ষাবান্ধব সরকারের কাছে বিনয়ের সাথে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার কথা চিন্তা করে এমপিওভূক্ত করা যায় কি না সেদিকে সরকারের দিক নির্দেশনা দেয়ার জন্য অনুরোধ জানান। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এম.এ বাতিন জানান, শ্রেণিকক্ষের সংকট থাকায় প্রত্যেক শ্রেণিতে গড়ে ১২০ থেকে ১৩০’জন শিক্ষার্থীকে পাঠদান করাতে হচ্ছে। বেঞ্চ সংকটের কারণে শিক্ষার্থীদের বসার জায়গা দেওয়া যাচ্ছে না। বাথরুম ও নলকূপ আছে অপর্যাপ্ত পরিমানের। যেসব শিক্ষা উপকরণ প্রয়োজন তা আমাদের বিদ্যালয়ে নেই। তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ের জন্য কম্পিউটার বা ল্যাপটপ নেই। বিদ্যালয়ে নামাজের জন্য নেই মসজিদ। এসব বিষয় নিয়ে বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত বিদ্যালয়টি। তবে প্রতিষ্ঠান সূত্রে আরো জানা যায়, বর্তমান মাননীয় সংসদ মহোদয় দীর্ঘদিন আগে আশ্বাস দিয়েছিলেন প্রতিষ্ঠানের বিল্ডিং এর অবকাঠামোর জন্য, কিন্তু এখনও কোন সাড়া মেলেনি।


     এই বিভাগের আরো খবর