,

বানিয়াচংয়ে দারিদ্র্যকে হার মানিয়ে পলাশের জিপিএ-৫

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ পড়ালেখার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে দেয়াসহ সন্তানদের সু-শিক্ষা নিশ্চিতে কতই না চেষ্টা চালিয়ে যান অভিভাবকরা। একটা সন্তানের ভাল ফলাফল অর্জনেই যেন বাবা-মা’র সর্বোচ্চ অর্জন। তবে এর উল্টোটাই ঘটেছে বানিয়াচং উপজেলায় এবার এসএসসি পরীক্ষায় জিপি-৫ পাওয়া পলাশ মিয়ার ক্ষেত্রে। তার সারা বছরের অদম্য পরিশ্রম হার মানিয়েছে দরিদ্র পিতার অনিহাকে। পলাশ বানিয়াচং উপজেলার এল আর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৮ সালের এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে। সে উপজেলার বানেশ্বর বিশ্বাসের পাড়া এলাকার হত দরিদ্র আনোয়ার হোসেনের ছেলে। তার বাবা একটি রাইস মিলে কাজ করেন। পরিবারের গড় আয় মাসে ৬ হাজার টাকা। বর্তমানে তার বাবার মাথায় আড়াই লাখ টাকা ঋণের বোঝা। পলাশের পরিবারে তার বাবা মা ছাড়াও রয়েছে দু’টি ছোট বোন। এর একজনকে বিয়ে দেয়া হয়েছে অল্প বয়সেই। কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল অর্জনের অনুভূতি জানতে চাইলে পলাশ জানায়, ২০১৬ সালে জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পায় সে। এর পর দারিদ্র্যের কাছে হার মেনে তার বাবা আনোয়ার হোসেন জানিয়ে দেন আর লেখাপড়া করা যাবে না। যে কোনো একটি চায়ের দোকানে কাজে লেগে যাওয়ার কথাও বলেন। কিন্তু পলাশ বাবার অবাধ্য হয়ে তার ইচ্ছা থেকেই চালিয়ে যায় লেখাপড়া। সে আরো জানায়, বানিয়াচং জনাব আলী ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক নিজাম উদ্দিন বিগত দুই বছর তাকে বিনা বেতনে প্রাইভেট পড়ানোর পাশাপাশি দিয়েছেন সব ধরনের দিক নির্দেশনা। পলাশ তার ফলাফলে অত্যন্ত আনন্দিত এবং নিজাম উদ্দিন স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞ। পলাশ আরো জানায়, সে একজন ইঞ্জিনিয়ার হয়ে দেশের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে চায়। সমাজের বিত্তবানদের প্রতি সে সহযোগিতা কামনা করেছে। এল আর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. জাকির হোসেন বলেন, পলাশ খুব পরিশ্রমী ছাত্র। দারিদ্র্যতাকে হার মানিয়ে পলাশের এ সাফল্যে তিনিও আনন্দিত। তিনি আরো বলেন, পরীক্ষার ফি’র টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় অনিশ্চয়তায় পড়ে পলাশের ভবিষ্যত। খবর পেয়ে বিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক আব্দুল মজিদ তার পক্ষ থেকে পলাশের পরীক্ষার ফি দিয়ে দেন। পলাশের মা মোছা মিনা আক্তার বলেন, সংসারের কাজকর্ম করার পাশাপাশি সময় পেলেই পলাশ পড়তে বসে যেতো। সে তার পরিবারকে নিয়ে সবসময় চিন্তিত থাকতো। এতকিছুর পরেও এ ফলাফলে তিনি অত্যন্ত আনন্দিত। তিনি তার ছেলের স্বপ্নপূরণে সবার সহযোগিতা চেয়েছেন।


     এই বিভাগের আরো খবর