,

নবীগঞ্জে লন্ডন প্রবাসীর সুন্দরী স্ত্রী ও মা খুন, রাতব্যাপী আইনশৃংখলা বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতা ॥ আটক ১

মতিউর রহমান মুন্না ॥ নবীগঞ্জ উপজেলার কুর্শি ইউনিয়নের সাদুল্লাপুর গ্রামে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তদের হাতে এক লন্ডন প্রবাসীর সুন্দরী স্ত্রী ও তার মা নির্মমভাবে খুন হয়েছেন। গতকাল রোববার রাত অনুমান ১১ টার দিকে লোমহর্ষক এ হত্যান্ডের ঘটনা সংঘটিত হয়। ঘটনার খবর পেয়ে আইনশৃংখলা বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরির্দশন করে রাত ব্যাপী তদন্ত করে নানা আলামত সংগ্রহ করেন। এ ঘটনাটিকে পরিকল্পিত হত্যাকান্ড বলে মনে করছেন স্থানীয় লোকজন। উভয় মরদেহের গায়ে ধারালো অস্ত্রের একাধিক আঘাত রয়েছে। নিহতরা হলেন, ওই গ্রামের মৃত রাজা মিয়ার স্ত্রী মালা বেগম (৫৫) ও তার পুত্রবধূ রুমি বেগম (২২)। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তালেব মিয়া (১৮) নামের এক যুবককে আটক করেছে পুলিশ।
এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নবীগঞ্জ উপজেলার কুর্শি ইউনিয়নের সাদুলাপুর গ্রামের  রাজা মিয়ার পুত্র আকলাক চৌধুরী ওরপে গুলজার দীর্ঘদিন যাবৎ লন্ডনে বসবাস করছেন। গত প্রায় ২ বছর পূর্বে একই গ্রামের কুয়েত প্রবাসী সুজন চৌধুরীর কন্যা ও পল্লী চিকিৎসক নজরুল ইসলামের ছোট বোন রুমি বেগমকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকে তার বাড়িতে শুধু মা মালা বেগম ও স্ত্রী রুমি বেগম থাকতেন। দিনের বেলায়ও ঘরের সকল গেইটে তালা লাগানো থাকতো। গতকাল রোববার রাত অনুমান ১১ টার দিকে হঠাৎ গ্রামের লোকজনের হাল্লা চিকিৎকার শুরু হলে গ্রামের বিভিন্ন মানুষ ঘর থেকে বেড়িয়ে এসে দেখতে পান লন্ডন প্রবাসী আকলাক চৌধুরী ওরপে গুলজার মিয়ার বাড়িতে রক্তাত লাশ পড়ে আছে। স্থানীয় লোকজন ওই বাড়িতে গিয়ে ঘরের বাহির থেকে গৃহবধূ রুমি ও ঘরের ভিতরে তার শাশুড়ি মালা বেগমের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন। নবীগঞ্জ থানা পুলিশ হাসপাতাল গিয়ে লাশ দু‘টির সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী করে। লাশের একাধিক স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে বলে জানায় পুলিশ। এদিকে খবর পেয়ে হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আ.স.ম.শামছুর রহমান ভূইয়া, নবীগঞ্জ-বাহুবল সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার পারভেজ আলম চৌধুরী, নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ এস.এম আতাউর রহমানসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে রাত প্রায় সাড়ে ৪ টা পর্যন্ত বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেন।
নিহত রুমি বেগমের বড় ভাই পল্লী চিকিৎসক নজরুল ইসলাম জানান, প্রতিদিনই তিনি তার বোনের বাড়ির লোকজনের খোঁজ খবর রাখতেন। গতকাল রাতে বোন রুমি মোবাইল ফোনে কল দিয়ে জানায় চোঁখে আঘাত পেয়েছে ঔষধ দেওয়ার জন্য। পরে বোনের পাশের বাড়ির জনৈক তালেব মিয়ার মাধ্যমে রাত ১০ টার দিকে বোনের জন্য ঔষধ দিয়ে পাঠান নজরুল। এরপর রাত ১১ টার দিকে নির্মম এ ঘটনার খবর পান।

এদিকে লাশ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসা কয়েকজন স্থানীয় লোক জানান, চিৎকার শুনে তারা বাড়িতে গিয়ে লাশ দু‘টি দেখতে পান। এ সময় ঘরের একটি টেবিলে ৪ টি চায়ের কাপও ছিল। ঘটনাস্থল থেকে এক জুড়া জুতা ও ১টি ঘড়ি উদ্ধার করা হয়েছে। এতে স্থানীয় লোকজন ধারনা করছেন- হত্যাকারীরা ঘটনার পুর্বেই বাড়িতে অবস্থান করে চা চক্র করে। তবে ঘরের কোন মালামাল খোয়া যায়নি বলে নিহতের স্বজনরা জানিয়েছেন। এদিকে কোন কারনে পরিকল্পিতভাবে বউ-শাশুড়ীকে হত্যা করা হয়েছে এ নিয়ে মূখরোচক আলোচনা চলছে। ধারনা করা যাচ্ছে, হত্যাকারীরা পুর্ব পরিচিত। গ্রামবাসী নির্মম এই হত্যাকান্ডের সুষ্ট বিচার দাবী করছেন। অপর দিকে হাসপাতালে লাশের সুরতহাল রিপোর্টের সময় নিহতের শরীরে স্বর্ণের চেইন ও আংটি ছিল বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় সন্দেহবাজন হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তালেব মিয়া (১৮) নামের ওই যুবককে আটক করেছে পুলিশ।  এ ব্যাপারে হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আ.স.ম.শামছুর রহমান ভূইয়া জানান, ঘটনার পরপর বিভিন্ন আলামত সংগ্রহসহ প্রাথমিক তদন্ত কাজ চলছে। খুব শীঘ্রই অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে।


     এই বিভাগের আরো খবর