,

নবীগঞ্জে লন্ডন প্রবাসীর স্ত্রী ও মা খুনের ঘটনায় আটক ৪ ॥ নিহতদের ময়না তদন্ত সম্পন্ন ॥ আজ ১১ টায় জানাযা

মতিউর রহমান মুন্না ॥ নবীগঞ্জ উপজেলার কুর্শি ইউনিয়নের সাদুল্লাপুর গ্রামে অজ্ঞাত দুবৃর্ত্তদের হাতে খুন হওয়া লন্ডন প্রবাসীর স্ত্রী রুমি বেগম ও তার মা মালা বেগমের ময়না তদন্ত গতকাল সোমবার হবিগঞ্জ আধুনিক হাসপাতালে সম্পন্ন হয়েছে। খবর পেয়ে নিহত রুমির স্বামী আখলাক চৌধুরী ওরফে গুলজার গতকাল সোমবার রাতেই লন্ডন থেকে বাড়িতে এসে পৌঁছেছেন। আজ মঙ্গলবার সকাল ১১ টায় স্থানীয় ঈদগাহ ময়দানে নিহতদের জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত পুলিশ ওই গ্রামের ৪ জনকে আটক করলেও এখনও কোন মামলা হয়নি। তবে নিহত রুমির বড় ভাই নজরুল ইসলাম গতকাল সোমবার নবীগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়রী দায়ের করেছেন। গতকালও র‌্যাবসহ পুলিশের বিভিন্ন সংস্থা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনে ব্যাপক তৎপরতা চালিয়েছে। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকান্ডের খবরে নবীগঞ্জের সর্বত্র নেমে এসেছে শোকের ছায়া। পুলিশ ও গ্রামের বিভিন্ন সূত্রে জানাযায়, গত রোববার দিবাগত রাত অনুমান ১১ টার দিকে লোমহর্ষক এ হত্যাকান্ডটি সংঘটিত হবার সাথে সাথেই খবর পেয়ে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। হত্যাকান্ডটিকে পরিকল্পিত হত্যাকান্ড বলে মনে করছেন স্থানীয় লোকজন। উভয় মরদেহের গায়ে ধারালো অস্ত্রের একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আঘাতের নমুনায় আক্রোশের কারণে হত্যাকান্ড সংঘঠিত হয়েছে বলে এলাকাবাসী ধারনা করছেন। পুলিশ ঘটনার প্রায় ৪ ঘন্টা পর প্রথমে সাদুল্লাপুর গ্রামের আবু তালেব (১৮) নামের এক যুবককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। এর ঘন্টাখানেক পর একই গ্রামের ক্বারী আব্দুস সালাম (৬০), তার পুত্র শহিদুর রহমান (৩৫) ও অপর যুবক শুভ রহমান (৩০) নামের আরো ৩ জনকে আটক করে। আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে এবং তাদেরকে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হচ্ছে। এদিকে লোমহর্ষক এ হত্যাকান্ডের খবর পেয়ে গতকাল সোমবার হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনের সংসদ সদস্য এম.এ মুনিম চৌধুরী বাবু, হবিগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ডাঃ মুশফিক হোসেন চৌধুরী, হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবির মুরাদ, পুলিশ সুপার বিধান ত্রিপুরা, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এড.  আলমগীর চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী অফিসার তৌহিদ-বিন-হাসান, আওয়ামীলীগ নেতা শাহনেওয়াজ মিলাদ গাজী, নবীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব ছাবির আহমদ চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল জাহান চৌধুরী, হবিগঞ্জ জেলা পরিষদ সদস্য এড. সুলতান মাহমুদ, পিআইবির কর্মকর্তা কুতুবুর রহমান, লন্ডন প্রবাসী শেখ মহিউদ্দিন আহমেদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। অপরদিকে গতকাল সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টায় ময়না তদন্ত শেষে নিহতদের মৃতদেহ তাদের গ্রামে এসে পৌঁছলে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারনা হয়। আত্মীয়-স্বজনদের আহাজারিতে গ্রামের বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। ঘটনাস্থলের বাড়িটি লোকশুণ্য থাকায় তালাবদ্ধ রয়েছে এবং নিহত রুমির পিতার বাড়ি একই গ্রামে হওয়ায় তার বাড়িতেই চলছে শোকের মাতম। উল্লেখ্য, নবীগঞ্জ উপজেলার কুর্শি ইউনিয়নের সাদুল্লাপুর গ্রামের মৃত রাজা মিয়ার পুত্র আখলাক চৌধুরী ওরফে গুলজার দীর্ঘদিন যাবৎ লন্ডনে বসবাস করছেন। প্রায় ২ বছর পূর্বে তিনি একই গ্রামের কুয়েত প্রবাসী সুজন চৌধুরীর কন্যা রুমি বেগমকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকে তার বাড়িতে শুধু মা মালা বেগম ও স্ত্রী রুমি বেগম থাকতেন। গত রোববার দিবাগত রাত ১১ টার দিকে হঠাৎ চিৎকার শুনে গ্রামের বিভিন্ন মানুষ এসে দেখতে পান লন্ডন প্রবাসী আখলাক চৌধুরী ওরফে গুলজার মিয়ার বাড়িতে ক্ষতবিক্ষত ও রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। স্থানীয় লোকজন ওই বাড়িতে গিয়ে ঘরের বাহির থেকে গৃহবধূ রুমি ও ঘরের ভিতর থেকে তার শাশুড়ি মালা বেগমের ক্ষতবিক্ষত ও রক্তাক্ত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদেরকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।


     এই বিভাগের আরো খবর