,

বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত

সময় ডেস্ক ॥ কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কুমিল্লার হত্যা ও নাশকতার দুটি মামলায় হাইকোর্টের দেয়া ৬ মাসের অন্তবরর্তীকালীন জামিন স্থগিত করেছেন সুপ্রিম কোর্টের  চেম্বার আদালত। একই সঙ্গে ৩১শে মে এ দুই মামলার শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়েছেন চেম্বার আদালতের বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, চেম্বার আদালতের এ আদেশের ফলে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত থাকছে। এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে ঢাকার মানহানির দুই মামলায় তার জামিন প্রশ্নে গতকাল শুনানি শেষ হয়েছে। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার আদেশ দেবেন আদালত। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ শুনানি শেষে এ দিন ধার্য করেন। কুমিল্লার দুই মামলায় চেম্বার আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এ সময় খালেদা জিয়ার পক্ষে জয়নুল আবেদীন, মাহবুব উদ্দিন খোকন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। আর ঢাকার মানহানির দুই মামলায় খালেদার পক্ষে খন্দকার মাহবুব হোসেন, এ জে মোহাম্মদ আলী ও মওদুদ আহমদ শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ফরহাদ আহমেদ শুনানিতে অংশ নেন। রাষ্ট্রপক্ষে আরো উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন মানিক, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সাবিনা পারভিন। পরে ফরহাদ আহমেদ জানান, এই দুই মামলায় বৃহস্পতিবার আদেশ দেবেন আদালত। আর ওই দিন অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্যও শুনবেন বলে আদালত জানিয়েছেন। এদিকে চেম্বার আদালতে খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিতের প্রতিক্রিয়ায় তার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়ার কারামুক্তি সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করছে। খালেদা জিয়ার কারাবরণ দীর্ঘায়িত করতে একের পর এক মামলা দিয়ে এবং বিভিন্নভাবে তাকে হয়রানি করা হচ্ছে।’ অন্যদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, ‘এসব বক্তব্য আদালত অবমাননার শামিল। কারণ দেশে আদালত আছে। আদালত জামিন দিচ্ছে, আদালত জামিন স্থগিতও করছে। তাই এসব মুখরোচক বক্তব্য দিয়ে কোনো লাভ হবে না।’ এর আগে সোমবার এক আদেশে খালেদা জিয়াকে কুমিল্লার হত্যা ও নাশকতার মামলায় ৬ মাসের অন্তরতীকালীন জামিন দেন বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি জেবিএম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। আর নড়াইলের মানহানির মামলাটিতে সংশ্লিষ্ট বিচারিক আদালতে কি আদেশ হয়েছে, তা জানতে চেয়ে যথাযথ উত্তর না পেয়ে আবেদনটি উপস্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। ওই দিন কুমিল্লার দুই মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন আদেশের পরপরই জামিনের আদেশ স্থগিত চেয়ে চেম্বার আদালতে আবেদন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বাসে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা ও নাশকতার অভিযোগে বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা দুটি মামলা এবং মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করার অভিযোগে নড়াইলে করা মানহানির একটি মামলায় জামিন পেতে গত ২০শে মে আইনজীবীদের মাধ্যমে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে আবেদন করেন খালেদা জিয়া। ২২শে মে শুনানি শুরু হয়। রোববার এ সংক্রান্তে শুনানি শেষ হয়। আর খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানানো ও তাদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা তুলে দিয়ে জাতির মানহানি ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে জন্মদিন পালনের অভিযোগে দায়ের করা দুই মামলায় জামিনের জন্য গত ২২শে মে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে আবেদন করা হয়। এ দুই মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে থাকা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে গত ১৭ই মে রাষ্ট্রপক্ষকে আদেশ দিয়েছিলেন সংশ্লিষ্ট বিচারিক আদালত। আদেশে আগামী ৫ই জুলাইয়ের মধ্যে এ আদেশ কার্যকর করে আদালতকে অবহিত করতে বলা হয়। গতকাল চেম্বার আদালতের আদেশের পর খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা সম্বন্ধে আমরা মনে হচ্ছে দিন দিন আস্থা হারিয়ে ফেলছি। এই মামলায় (কুমিল্লার হত্যা মামলা) ৭৭ জন আসামির মধ্যে ৪১ জনকে জামিন দেয়া হয়েছে। সেখানে এফআইআর-এ খালেদা জিয়ার নাম ছিল না। চার্জশিটে খালেদা জিয়া এই মামলার ৫১ নম্বর আসামি। চেম্বার আদালতে শুনানি প্রসঙ্গে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, উনি (অ্যাটর্নি জেনারেল) চার্জশিট থেকে পড়েছেন। এটি আইনগতভাবে বৈধ নয়। গ্রহণযোগ্যও নয়। বিশেষ ক্ষমতা আইনে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে সেটি মামলা হিসেবেই চলে না। যে ধারায় চার্জশিট দেয়া হয়েছে সেই অভিযোগ গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেন, আমরা আগেও বলেছি এখনো বলছি যে, বেগম খালেদা জিয়ার কারাবরণ দীর্ঘায়িত করার জন্য তাকে একের পর এক মামলা দিয়ে এবং বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। খন্দকার মাহবুব হোসেন আরো বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করছে। সরকার চায় বেগম জিয়াকে কারাগারে রেখে নির্বিঘ্নে বাংলাদেশে বাকশাল কায়েম করবে, একদলীয় শাসন কায়েম করবে। কিন্তু সরকারের এই স্বপ্ন কোনোদিন পূরণ হবে না। গতকাল আদালতের আদেশের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, হাইকোর্ট খালেদা জিয়াকে দুটি মামলায় জামিন দিয়েছিল। সোমবার যে লিভ পিটিশন দায়ের করেছিলাম- এর ভিত্তিতে ৩১শে মে জামিন শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন চেম্বার আদালত। সে অবধি এই মামলায় হাইকোর্ট জামিনের যে আদেশ দিয়েছিলেন তার কার্যকারিতা স্থগিত থাকবে। তিনি বলেন, সাবমিশনে আমি বলেছি, তার (খালেদা জিয়া) বিরুদ্ধে স্পষ্ট অভিযোগ আছে, তিনি যদি মোবাইলে তার নেতাকর্মীদের এরকম নির্দেশনা না দিতেন তাহলে এরকম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি হতো না এবং আগুনে পুড়ে এই ৭/৮ জন মানুষ মারা যেত না। এই ধরনের অপরাধে যিনি নির্দেশ দেন এবং যার নির্দেশনার প্রেক্ষিতে এ ধরনের ঘটনা ঘটে তাহলে যারা হত্যাকান্ডে অংশগ্রহণ করেছে তাদের যে সাজা আর যিনি প্ররোচনা দিয়েছেন তারও একই সাজা হবে। ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করছে’- খন্দকার মাহবুব হোসেনের এমন মন্তব্যের প্রেক্ষিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, এ ধরনের বক্তব্য আদালত অবমাননাকর। কারণ দেশে আদালত আছে, আদালত জামিন দিচ্ছে, আবার জামিন স্থগিতও করছে। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এইসব মুখরোচক বক্তব্য দিয়ে তাদের কোনো লাভ হবে না। তাদের মামলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে এবং মামলার যে সমস্ত তথ্য-উপাত্ত উল্লিখিত আছে তার ওপর নির্ভর করে তাদের কথা বলতে হবে। খালেদা জিয়ার কারামুক্তি প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আমি তো জ্যোতিষী না। উনি কবে মুক্তি পাবেন বা মুক্তি পাবেন না- এটি সম্পূর্ণ আদালতের বিষয়। গত ৮ই ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়ে খালেদা জিয়াকে ৫ বছর এবং অন্য আসামিদের ১০ বছর করে কারাদন্ড দেন বিচারিক আদালত। রায়ের পর খালেদা জিয়াকে রাখা হয়েছে পুরান ঢাকার পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে। গত ১২ই মার্চ হাইকোর্ট খালেদা জিয়াকে চার মাসের জামিন দেন। গত ১৭ই মে আপিল বিভাগ এক রায়ে খালেদা জিয়ার জামিন বহাল রাখেন। পাশাপাশি সাজার রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার করা আপিল শুনানি আগামী ৩১শে জুলাইয়ের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন সর্বোচ্চ আদালত।


     এই বিভাগের আরো খবর