,

১৮ বছর ধরে গাড়ি ছিনতাই

সময় ডেস্ক ॥ মোহাম্মদ আলী। পরনে পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টরের পোশাক। সঙ্গী চান মিয়ার পরনে পুলিশের কনস্টেবলের ইউনিফরম। কোমরে রাখা আছে হ্যান্ডকাফ। মাথার চুলগুলো ছোট করে ছাঁটা। বহুতল বিলাসবহুল ভবনের ফটকে দাঁড়িয়ে গাড়ি ডাকেন। গাড়ি ভাড়া করে যান গন্তব্যস্থলে। পথিমধ্যে ঘটে মূল ঘটনা। পূর্ব নির্ধারিত ডিম বিক্রেতা বা জুসের দোকানের  সামনে থামেন। নিজেরা খান। চালককেও খেতে দেন। পুলিশ, আইনের লোক। পুলিশের প্রতি বিশ্বাস রেখেই ডিম খান বা জুস পান করেন চালক। আবার চলতে থাকে গাড়ি। কিছুক্ষণের মধ্যেই থেমে যায় গাড়ি। চালক অসুস্থ। অতঃপর অসুস্থ চালককে নির্জন রাস্তায় ফেলে গাড়ি নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায় তারা। দীর্ঘ ১৮ বছর যাবৎ এভাবেই পুলিশের পোশাক পরে গাড়ি চুরি-ছিনতাই করে যাচ্ছিলো আলীর চক্রটি। এই চক্রের ছয় জনকে আটকের পর চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। শুধু পুলিশ সেজে না, নানা কৌশলে মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিকশা থেকে বিভিন্ন ধরনের গাড়ি চুরি-ছিনতাই করে চক্রটি। ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ সহ আশেপাশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে থাকে তারা। গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে চক্রের সদস্যরা জানিয়েছে, পুলিশের ইউনিফরম পরে গাড়ি চুরি করতে বেশ সুবিধা। পুলিশের পোশাক পরিহিত দেখে বিশ্বাস করে সহজেই তাদের দেয়া খাবার খায় চালক। এছাড়া যেকোনো নির্জন স্থানে থামাতে বললে থামাতে আপত্তি করে না। এমনকি কিছু কেনার অজুহাতে চালককে গাড়ি থেকে নামিয়ে পাশের দোকানে পাঠিয়ে নির্বিঘ্নে গাড়ি চুরি করা যায়। এরকম নানা কৌশল খাটিয়ে চুরি-ছিনতাই করা গাড়িগুলো বিক্রি করার জন্য রয়েছে আরেক পার্টি। যারা সহজেই গাড়ি বিক্রির ব্যবস্থা করে দেয়। এমনকি গাড়ির চেসিস নম্বর পরিবর্তনসহ ভুয়া কাগজপত্র তৈরির কাজটিও করে তারা। পাঞ্চ মেশিনের গাড়ির চেসিস ও ইঞ্জিন নম্বর পরিবর্তন করে বিআরটিএ’র মাধ্যমে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে গাড়ি বিক্রি করে এই চক্র। ডিমে ওষুধ মেশানোর কৌশল সম্পর্কে গ্রেপ্তারকৃতরা জানিয়েছে, ঘুম বা অচেতন করার ওষুধ মসলার মতো করে ভেঙে গুঁড়া করে চক্রের সদস্যরা।  গুঁড়া করা ওষুধ ঢুকানো হয় ডিমের ভেতরে। এ জন্য কাঁচা ডিমের কিছু অংশ ভেঙে জুস পানের পাইপ ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। পরবর্তীতে ডিমটি ভাত রান্নার সময় উপরে রেখে সিদ্ধ করা হয়। সিদ্ধ ডিমের ভাঙা অংশে আটা দিয়ে খোসা লাগানো হয়। তখন বুঝার উপায় থাকে না এই ডিমটি ভেঙে ওষুধ ঢুকানো হয়েছে। তারপর ওষুধ মেশানো ডিমটি দেয়া হয় নির্ধারিত ডিম বিক্রেতার কাছে। চক্রের সদস্যরা চালককে নিয়ে ডিম খেতে গেলে ওষুধ মেশানো ডিমটি বের করে দেয় বিক্রেতা। এভাবেই চালককে অজ্ঞান করে গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যায় তারা। এছাড়াও চক্রের সদস্যরা গাড়ি চুরির জন্য ব্যবহার করে ‘মাস্টার কিউ’। বিশেষ এই চাবি দিয়ে সহজেই মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিকশা ও গাড়ির লক খুলতে পারে তারা। বিভিন্ন কৌশলে গাড়ি ভাড়া করে চালককে বাইরে পাঠিয়ে যেমন গাড়ি নিয়ে উধাও হয় এই চক্র, তেমনি অনেক সময় চালককে মারধর করেও গাড়ি ছিনিয়ে নেয়। এছাড়াও এই চক্রের কিছু সদস্য রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পার্কিং করে রাখা মোটরসাইকেল লক খুলে-ভেঙে চুরি করে নিয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রেই গাড়ির নম্বর-চেসিস নম্বর পরিবর্তন করে তা বিক্রি করে দেয় তারা। কিছু সিএনজি অটোরিকশার ক্ষেত্রে মালিকের সঙ্গে দালাল মাধ্যমে যোগাযোগ করে টাকা নিয়ে তা ফেরত দেয় চক্রের সদস্যরা। ক্যান্টনমেন্ট থানার মাটিকাটা এলাকায় পার্কিং থেকে মোটরসাইকেল চুরির সময় দুইজনকে আটক করা হয়। পরবর্তীতে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার নিশাত রহমান মিথুনের তত্ত্বাবধানে বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় চার জনকে। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে নয়টি মোটরসাইকেল, একটি সিএনজি অটোরিকশা, পুলিশের তিন সেট পোশাক, হ্যান্ডকাফ, চেতনানাশক ট্যাবলেট ও দুটি সিরিঞ্জ উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছে, চোর চক্রের হোতা শেরপুরের ঝিনাইগাতীর রাস্তাবাকাকুড়ার  মো. মঞ্জুরুলের ছেলে মোহাম্মদ আলী, তার সঙ্গী নেত্রকোনা সদরের বালিচুরির চান মিয়া, কিশোরগঞ্জের খিলপাড়ার আব্দুল আলিম, নরসিংদীর শিবপুর থানার লাকপুরের হাসান মৃধা, শরিয়তপুরের সখিপুরের চরপায়াতলী গ্রামের মো. রফিক ও জামালপুরের  বকশিগঞ্জের মিয়াপাড়ার মানিক।


     এই বিভাগের আরো খবর