,

বয়ঃসন্ধিকালের সমস্যা

সময় ডেস্ক ॥ বয়ঃসন্ধিকাল। ১০ বছর এবং ১৯ বছর বয়সের মাঝামাঝি সময়টাকে বয়ঃসন্ধিকাল বলে। মানুষের জীবন শুরুর অর্থাৎ সাধারণভাবে জন্ম থেকে ১০ বছর পর্যন্ত সময়টাকে শৈশব বলে। আমাদের মতো দেশে বয়ঃসন্ধি শুরু হয় ১১ বছর বয়সে। বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেমেয়েরা দ্রুত বড় হতে থাকে। শরীর এবং শরীরবৃত্তসংক্রান্ত পরিবর্তনের ফলে এ সময় ছেলেমেয়েরা নতুন জগতে প্রবেশ করে। তাদের চিন্তা চেতনায় দেখা দেয় ব্যাপক পরিবর্তন। শারীরিক পরিবর্তনের পাশাপাশি মানসিক বিকাশ এবং দায়িত্ববোধ যোগ হতে থাকে এ সময়ে। অর্থাৎ বয়ঃসন্ধি হলো একাধারে দৈহিক, মানসিক এবং সামাজিক একটা অভিজ্ঞতা। শরীরের হরমোনগুলো হলো রসায়ন। এগুলো মূলত মানুষের শরীরে তৈরি হয় এবং শরীর কখন ও কিভাবে বাড়বে তা নিয়ন্ত্রণ করে এই হরমোন। একটি ছেলে যখন শৈশব পেরিয়ে বয়ঃসন্ধিকালে প্রবেশ করে তখন তার পুরুষ হরমোন টেস্টোস্টেরন তৈরি হতে থাকে। অণ্ডকোষ সৃষ্ট এ টেস্টোস্টেরন পুরুষের যৌনগ্রন্থির গঠন এবং যৌন লক্ষণ প্রকাশে সাহায্য করে। আমাদের দেশের মেয়েদের শারীরিক গঠনের পরিবর্তন ১০ থেকে ১৩ বছর বয়সের মধ্যে শুরু হয়। এ সময়টা হলো মেয়েদের বয়ঃসন্ধিকাল। এ বয়সে মেয়েদের উচ্চতা বাড়ে। বয়ঃসন্ধিকাল ছেলেমেয়েদের জন্য নতুন জগৎ। প্রত্যেক মানুষকেই এ অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয়। এ সময় ছেলেমেয়েদের মন মেজাজ খুব ওঠানামা করে। এই ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে তো পরক্ষণেই আবার খুব খারাপ লাগছে। এক্ষুনি কোনো সিদ্ধান্ত নিলো তো পরক্ষণেই তার পরিবর্তন। মনে হয়তো দারুণ খুশি, কিন্তু একটু পরেই ঘন বিষাদ। এ সময় শরীরের নিঃসৃত যৌন হরমোনগুলো ছেলেমেয়েদের মন মেজাজের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। তাদের নিজেদের রাজা-রানী ভাবতে ভালো লাগে। তাদের আচার-আচরণে অনেক অভিভাবক বিব্রতবোধ করেন। কাউকে না মানার মনোভাব তাদের মধ্যে প্রচণ্ডভাবে জেগে ওঠে। এ সময় বাবা-মা কিংবা অন্য অভিভাবকদের সাথে তাদের বনিবনা হয় না। একটা দুর্বিনীত ভাব সব সময় উত্তেজিত করে রাখে। নেতিবাচক চিন্তা-চেতনা তাদের প্রভাবিত করে। পারিবারিক পরিবেশ, স্কুল-কলেজের পরিবেশ, বন্ধুবান্ধবের সাহচর্য এবং অন্যান্য সাংস্কৃতিক উপাদান যেমন টেলিভিশন, সিনেমা, নাটক তাদের মনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। তাদের মনে এক প্রকার লোভলালসা বাসা বাঁধে। তারা অনেক কিছু পেতে চায়। ভোগ করতে চায়। কোনো কিছু পাওয়ার জন্য নিজেকে উজাড় করে দিতে চায়। প্রেমের নেশা এ সময়ের অন্যতম নেশা। জীবন বিলিয়ে দিয়েও তারা প্রেমের সফলতা বাস্তবায়ন করতে চায়। কারো কারো মধ্যে যৌন উচ্ছৃঙ্খলা ব্যাপক আকার ধারণ করে। অনেকেই আবার এ বয়সেই যৌন সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়ে জীবনটাকে বিষিয়ে তোলে। এ বিশৃঙ্খলার পরিণাম হচ্ছে বিষাদগ্রস্ততা। ফলে অনেকের মধ্যে নিজেদের মাধ্যমে নিজেদের ক্ষতি করার ঝুঁকি বেয়ে যায়। মাদক আসক্তি ছড়িয়ে পড়ে তাদের জীবনে। তারা নানা ধরনের অসুস্থতায় ভুগতে থাকে। তাদের মধ্যে নিদ্রাহীনতা বাসা বাঁধে। ক্ষুধামন্দা থাকে। মাথা যন্ত্রণায় ছটফট করে। আত্মহত্যার প্রবণতা জাগে। নিজেকে সবার কাছ থেকে গুটিয়ে রাখে। নিকটজনদের সাথে হিংস্র আচরণ করে। স্কুল-কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। পরীক্ষায় ফেল করে। এভাবেই একটি সম্ভাবনাময় জীবনের অপমৃত্যু ঘটে থাকে। আমরা কি পারি না এ সমাজটাকে পরিবর্তন করতে? বয়ঃসন্ধিকাল নিয়ে আমাদের পরিবার, সমাজ, স্কুল-কলেজ, রেডিও, টেলিভিশন, মসজিদ, মাদরাসা, সংবাদপত্র, কোথাও তেমন কোনো প্রোগ্রাম নেই। আমাদের পরিবারগুলো এখনো কুসংস্কার আর অন্ধ শাসনের যাঁতাকলে নিষ্পেষিত। অভিভাবকদের অতি শাসনে সন্তানেরা অনেক ক্ষেত্রে বিপথগামী হয়ে যায়। বর্তমানে যৌথ পরিবার প্রথার বদলে নিউকিয়ার পরিবারকাঠামোও সন্তানদের বিপথগামিতার একটি কারণ। অনেক বাবা-মা সন্তানদের যথাযথ সময় না দিয়ে শুধু শাসন করতে পছন্দ করেন। আবার চাকরিজীবী বাবা-মায়ের সন্তানেরা তাদের বাবা-মাকে কাছেই পায় না। কোনো কোনো অভিভাবক সন্তানকে অতি আধুনিক হিসেবে গড়ে তুলতে গিয়ে নিজস্ব ইতিহাস-ঐতিহ্য ভুলে যায়। ফলে সন্তান যা হওয়ার তাই হচ্ছে। অর্থাৎ সন্তানের মূল অভিভাবক পরিবার। পরিবার থেকে যদি সন্তানকে সুশিক্ষা দেয়া হয়, ধর্মীয় অনুশাসন শিক্ষা দেয়া হয়, নৈতিক শিক্ষার পরিবেশ দেয়া হয়, তাহলে বয়ঃসন্ধিকালে বিপথগামী হওয়ার আশঙ্কা অনেকের অনেক কম থাকে। একটি মুসলিম পরিবারে যদি ইসলামি পরিবেশ বজায় থাকে এবং সন্তানদের কুরআন হাদিস চর্চায় অভ্যস্ত করা হয় তাহলে সে পরিবারের সন্তান অবশ্যই ভালো হবে। আমরা সমাজে নৈতিকতার বিষয়ে অনেককে কথা বলতে দেখি। কিন্তু নৈতিকতার মূল উৎস ধর্মকে অস্বীকার করি কিংবা ধর্মীয় চেতনার বিরোধিতা করি। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে, ধর্মীয় শিক্ষার বিলুপ্তির কথা বলি। নৈতিকতার উৎস বন্ধ করে কি নৈতিকতা সৃষ্টি করা যায়ে আর নৈতিকতার শিক্ষা ছাড়া কি সুশিক্ষা পাওয়া যাবে? সুশিক্ষা ছাড়া কি সুস্থ সমাজ নির্মাণ করা যাবে? সুস্থ সমাজ ছাড়া কি সুস্থ থাকা সম্ভয় বয়ঃসন্ধিকালের সুস্থতার জন্য প্রয়োজন সুস্থ সমাজ। আর সুস্থ সমাজ গঠনে মহানবী সা:-এর আদর্শই শ্রেষ্ঠ আদর্শ।


     এই বিভাগের আরো খবর