,

নবীগঞ্জে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্লিপ এর টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

জড়িত প্রধান শিক্ষক ও কমিটির সভাপতি

শাহ সুলতান আহমেদ ॥ বর্তমান সরকার শিক্ষা বান্ধব সরকার। তাই দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রদক্ষেপ গ্রহন করছে। তারই ধারাবাহিকতায় দেশের প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রতি বছরই স্লিপ বাজেট বরাদ্ধ আসছে। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছর নবীগঞ্জ উপজেলার প্রায় আড়াইশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্লিপ বাজেট ২০১৭-২০১৮ইং এর আওতায় প্রতিটি বিদ্যালয়ে ৪০ চল্লিশ হাজার টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। কিন্তু তা সঠিক মতো কাজে আসছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষা কর্মকর্তাদের যোগসাজসে মিলে ওই টাকা চুরি বা আত্মসাত করা হচ্ছে। এ টাকা দিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের আওতায় বিদ্যালয়ের সমস্যা সংক্রান্ত জিনিসপত্র ক্রয় করার কথা থাকলে ও প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক এককভাবে, কোন কোন স্থানে প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির সমন্বয়ে স্লিপ এর টাকা উত্তোলন করা হচ্ছে। এই অনিয়মের সাথে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সহকারী শিক্ষা অফিসাররা জড়িত রয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন সহকারী শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অভিভাবক অভিযোগ করেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং অনেক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কমিটির সভাপতির সাথে যোগসাজসে নামেমাত্র বিভিন্ন খাতের নাম উল্লেখ করে বিভিন্ন কম্পিউটার দোকানের অপারেটর দিয়ে বিভিন্ন ব্যয় খাত উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের রফা-দফার মাধ্যমে ম্যানেজ করে স্লিপ এ টাকা উত্তোলন করছেন। ফলে বিদ্যালয়ের উন্নয়নের নামের স্লিপ এর টাকা পকেটস্থ করে নিজেই ফাঁয়দা হাসিল করছেন। এতে করে সরকারের দেয়া টাকা কোন সুফল হচ্ছে না, বরং বিফলে যাচ্ছে। উপজেলার দীঘলবাক ইউনিয়নের দাউদপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি এক সদস্য ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঐ স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ আজাদুর রহমান মনগড়া স্লিপ এর টাকার রশিদ তৈরি করে টাকা উত্তোলনের পাঁয়তারা করছেন। তিনি কয়েকটি ব্যয়ের খাত উল্লেখ করে ভাউচার তৈরি করেছেন। এতে তিনি মেধা পুরস্কার দেবেন বলে ২ হাজার টাকা, শ্রেণী কক্ষ সজ্জিতকরনের জন্য ৫ হাজার, আসবাবপত্র মেরামত বিদ্যালয় ও দরজা জানালা রং করা বাবত ১০ হাজার, টিউবওয়েল মেরামত বাবত ১ হাজার, প্রাথমিক চিকিৎসা উপকরণ ১ হাজার ৫ শত,  প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির খেলনা ক্রয় বাবত ৪ হাজার টাকা, হারপিক ও সাবান বাবত ১ হাজার টাকা, জরিপ ম্যাপ বাবত ১ হাজার টাকা, ডিজিটাল ব্যানার বাবত ৩ হাজার টাকা, কালার পেন বাবত ১ হাজার টাকা, কাঠের জ্যামিতি বক্স বাবত ১ হাজার ৫ শত টাকা, সিটিজেন চার্টার বাবত ১ হাজার ৫ শত টাকা, সহায়ক পুস্তক ক্রয় বাবত ১ হাজার টাকা, নোটিশ বোর্ড বাবত ১ হাজার ৫ শত টাকা, খেলার জার্সি বাবত ২ হাজার টাকা উল্লেখ করে মোট ৪০ হাজার টাকার ভাউচার তৈরি করে উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসারের কাছে জমা দিয়েছেন। কিন্তু বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ছাড়া কেহই জানেননি। শুধু ঐ বিদ্যালয় নয়, তার মতো উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ একই কায়দায় স্লিপ এর টাকা আত্মসাত করার জন্য নামেমাত্র রশিদ তৈরি করে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা অফিসারের কাছে জমা দিয়েছেন। সচেতন মহল মনে করেন, সরকারের দেয়া টাকা এভাবে আত্মসাত করলে শিক্ষার উন্নয়নের ক্ষতির সম্ভাবনা অনেক রয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্লিপ এর টাকা যেন বেফায়দা ভাবে চলে না হয় সে দিকে সংশ্লিষ্টদের সুদৃষ্টি ও খোঁজ খবর নিলে তা রোধ করা সম্ভব।


     এই বিভাগের আরো খবর