,

হবিগঞ্জে লিপরাষ্ট রোগে আক্রান্ত বিভিন্ন চা বাগান ॥ উৎপাদনে ধস

হবিগঞ্জ সংবাদদাতা ॥ হবিগঞ্জ জেলার ২৩টি চা বাগানের অধিকাংশ বাগানে লিপরাষ্ট ও থিপস রোগে আক্রান্ত হয়ে চা বাগানের বিস্তৃৃর্ন এলাকা কালো হয়ে গেছে। চা পাতা কালো হওয়ার কারণে দুটি পাতা ও একটি কুঁড়ি গজাচ্ছে না। প্রায় ২ মাস ধরে এ অবস্থা চলতে থাকায় চা বাগানগুলোতে উৎপাদনে মারাত্মক ধস নেমেছে। রোগ সাড়াতে দফায় দফায় বিভিন্ন বালাই নাশক ঔষধ প্রয়োগ করে কিছুতেই এ রোগ দমন করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বাগান কর্তৃপক্ষ। এ রোগটি এর আগে চা বাগানবাসী কখনও আর দেখেনি। চা বাগানে এমন মহামারি রোগ দেখা দেওয়ায় শ্রমিক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও মালিকপক্ষ হতাশ হয়ে পড়েছেন। ভরা মৌসুমে যখন হাজার হাজার কেজি চা পাতা প্রতিদিন উত্তোলন করার কথা। এখন উৎপাদন নেমে এসেছে চার ভাগের এক ভাগ। এই অবস্থায় চা বাগানে হাহাকার চলছে। চা বাগানের ইতিহাসে এমন ধরনের উৎপান বিপর্যয় আর ঘটেনি। এ রোগটি সাড়াতে চা বাগানের পক্ষ থেকে বিষেশজ্ঞ পর্যায়ে বিভিন্ন পদপেক্ষ নেওয়া হলেও কিছুতেই সেড়ে উঠছে না। দিনে দিনে এর ভয়াবহতা বেড়েই যাচ্ছে। কি কারণে এমনটি হচ্ছে শ্রীমঙ্গল চা গবেষনা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিকরা শনাক্ত করকে পারছে না। জেলার মাধবপুর উপজেলার সুরমা চা বাগানের ব্যবস্থাপক আবুল কাশেম জানান, ২০১৬ সালে চা বাগানের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি চা উৎপাদন হয়েছিল। ২০১৭ সালেও আশানুরূপ উৎপাদন হওয়ায় চা শিল্পের প্রতি বিনিয়োগকারীদের উৎসাহ বৃদ্ধি পায়। চা বিক্রয় করে বাগানগুলো লাভবান হওয়ায় পতিত জায়গায় নতুন চা বাগান সৃজন করা হয়। এর পাশাপাশি চা কারখানার পরিধিও বাড়ানো হয়। কিন্তু ২০১৮ সালের শুরুতেই প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় এতে আশা কার হচ্ছিল এবারও চা বাগানে বাম্পার ফলন হবে। কিন্তু বর্ষা মৌসুম আসতেই চা বাগানে বিপর্যয় দেখা দেয়। চা পাতা কালো হয়ে নতুন কোন কুঁড়ি গজায় না। প্রথমে বালাই নাশক ঔষধ প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যেই সারা বাগানে এ রোগটি ছড়িয়ে পড়ে। চা উৎপাদনের পুরো মৌসুমে এখন চার ভাগের এক ভাগ চা পাতাও উত্তোলন করা যাচ্ছে না। এতে করে চা শিল্পের বিনিয়োগকারীরা মারাত্মক লোকসানের মুখে পড়বে। ন্যাশনাল টি কোম্পানীর জগদীশপুর চা বাগানের ব্যবস্থাপক বিদ্যুৎ কুমার রায় জানান, লিপরাষ্ট ও থিপস নামে দুটি রোগে এ ধরনের অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। থিপস রোগটি পোকামাকড়ের পাঙ্গাল দ্বারা সমস্ত বাগানে ছড়িয়ে পড়েছে। চা গাছের পাতা কালো হয়ে যাওয়ার কারণে পাতা সূর্যের সাহায্যে খাদ্য সংগ্রহ করতে পারছে না। এ কারণে নতুন পাতা গজাচ্ছে না। উত্তম চা পেতে হলে দুটি পাতা ও একটি কুঁড়ি থাকা আবশ্যক। তেলিয়াপাড়া চা বাগানের ব্যবস্থাপক এমদাদুর রহমান মিঠু জানান, উৎপাদনের ভরা মৌসুমে হঠাৎ করে বাগানে এ জাতীয় রোগ ছড়িয়ে পড়ায় পাতা সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। এতে করে বাগানগুলো লোকসানের মধ্যে পড়বে। নোয়াপাড়া চা বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক সোহাগ মাহমুদ জানান, তার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে অতি বৃষ্টি ও রোদ না থাকায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এটি ভাইরাস জনিত রোগের প্রাদুর্ভাব। শ্রীমঙ্গল চা গবেষনা প্রতিষ্ঠানের বৈজ্ঞানিক তৌফিক আহমেদ জানান, কি কারণে বাগানগুলোতে এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে এ নিয়ে গবেষনা চলছে।


     এই বিভাগের আরো খবর