,

আবারও মালবাহী ট্রেন থেকে তেল চুরির হিড়িক

জুয়েল চৌধুরী ॥ আবারও শায়েস্তাগঞ্জ যাত্রী ও মালবাহী ট্রেন থেকে তেল চুরির হিড়িক পড়েছে। ট্রেন, ইঞ্জিন, পাওয়ার কার ও লোকোশেড থেকে তেল চুরি করছে পাচারকারীরা। হবিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তেল পাচার হচ্ছে। প্রতিদিন প্রায় ২০-৩০ হাজার লিটার তেল চুরি হচ্ছে বলে একটি বিশ^স্থ সূত্রে জানা গেছে। রেলওয়ের কিছু অসাধু লোকের সহযোগিতায় সুযোগ সন্ধানী চক্র বহাল তবিয়তে তেল চুরি করে যাচ্ছে। জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেলওয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, রেলের তেল চুরি ঠেকানোর ব্যাপারে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যেসব স্থানে চুরি বেশি হয় সেখানে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নিয়মিত তৎপরতা চালানোর জন্য বলা হয়েছে কিন্তু তারা কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। তাছাড়া তেল চুরির সঙ্গে অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশ রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রেলওয়ে বিভাগকে শৃংখলায় আনতে যা যা করণীয়, তা করা হচ্ছে। তিনি আারও জানান, লোকশেড থেকে গ্রহণ করা এবং ট্রেনটি নির্দিষ্ট দূরত্বে যাওয়া পর্যন্ত তেলের হিসাব বুঝিয়ে দেন চালক। এ ক্ষেত্রে তেল বেহাত হওয়ার সুযোগ কম। তবে মালবাহী ট্রেনের কোন হিসাব রাখা হয় না। যার ফলে তেল খুলে নিতে পারে সহজে। একটি ইঞ্জিনে কী পরিমাণ তেল খরচ হয়েছে, তার হিসাব চালককে রাখতে বলা হয়। যদি বেশি তেল খরচ হয়, তাহলে চালককে তার ব্যয় বহন করতে হয়। ইতিমধ্যে তেল চুরি ঠেকাতে নতুন পন্থা ও নানা কৌশল নিয়েছে রেলওয়ে বিভাগ। এর মধ্যে অন্যতম রেলইঞ্জিন ক্যালিবেশন বা ক্যালিবেটেড করা হয়েছে। একটি ইঞ্জিন এক কিলোমিটার বা ১০ কিলোমিটার চলতে কতটুকু তেল লাগবে, তার হিসাব রাখা হবে এবং প্রতিটি তেল ট্যাঙ্কারের সঙ্গে স্কেল লাগানো থাকবে। এগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে রেলের তেল চুরি শূন্যের কোটায় নেমে আসবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন। অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর পরো সহায়তায় প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার তেল চুরি হয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে চুরি রোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী লোকোমোটিভে যে ট্যাঙ্কার থাকে, তাতে তালা-চাবি ব্যবহার করা হচ্ছে। চুরির সঙ্গে জড়িতদের পাশাপশি যারা চোরাই তেল বিক্রি করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। রেলওয়ে বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে প্রতিদিন সাড়ে তিনশ’ ট্রেন চলাচল করে। এসব ট্রেনে দিনে গড়ে প্রায় পৌনে দুই লাখ লিটার ডিজেল খরচ হয়। এ হিসাবে বছরে ব্যয় হয় ছয় কোটি ৩৮ লাখ ৭৫ হাজার লিটার। কোনো কোনো বছর এর চেয়ে কম-বেশিও হয়। এই ব্যবহৃত তেল থেকে বছরে চুরি হয়ে থাকে প্রায় দেড় কোটি লিটার যার বাজারমূল্য ৯৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা। গড়ে প্রতিদিন চুরির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪০ হাজার লিটার। এর মধ্যে শুধু ইঞ্জিন ও পাওয়ারকার থেকে দিনে ২০ হাজার লিটার, ১১টি লোকোশেড থেকে প্রায় ১৫ হাজার লিটার এবং চলন্ত ট্রেন থেকে পাঁচ হাজার লিটার তেল চুরির ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া বছরে প্রায় এক কোটি টাকার ইঞ্জিন অয়েলও চুরি হয়। তেলের বাজারমূল্যের ওপরই চুরির অর্থ নির্ধারণ হয় এবং এর ভিত্তিতে তা ভাগবাটোয়ারা হয়। তবে কখনও কখনও ট্রেনচালক ও গার্ডদের জিম্মি করেও তেল চুরির ঘটনা ঘটে। এর নেপথ্য বড় একটি সিন্ডিকেট কাজ করছে। রেলওয়ের কতিপয় অসাধু কর্মচারী ও আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের পরো সহযোগিতাও রয়েছে বলে অভিযোগ আছে। রেলওয়ে বিভাগ সূত্র জানায়, শায়েস্তাগঞ্জ, নছরতপুর, সুতাং, দেউন্দিসড়ক শাহজীবাজার, মনতলা, লস্করপুর রেল ক্রসিং, বসিনা, তিতার কোনাসহ বিভিন্ন স্থানে তেল চোরাকারবাড়ির গড ফাদার আসকির মিয়া, আলফু মিয়া, ফরিদ মিয়া, রজব আলী, আবুল কাশেম, আহাদ মিয়াসহ বেশ কয়েকজন জয়ন্তিকা, পারাবত, উদয়ন, উপবন, সুরমা, কুশিয়ারা, কালনী, জালালাবদ ও বিভিন্ন মালবাহী এসব স্থানে দাড় করিয়ে রেখে প্রতিদিন ২০-৩০ লিটার তেল তুলে নিয়ে যাচ্ছো। এদেরকে সহযোগীতা করছেন কতিপয় রেল কর্মচারী ও পুলিশ।


     এই বিভাগের আরো খবর