,

নবীগঞ্জে মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের চেষ্টা মামলা নিয়ে তোলপাড়

প্রবাসী দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ
মিল নেই মামলার এজাহার ও ভিকটিমের বক্তব্যে

আনোয়ার হোসেন মিঠু / মতিউর রহমান মুন্না ॥ নবীগঞ্জ উপজেলার কুর্শি ইউপির এনাতাবাদ গ্রামের বাসিন্দা বাংলাবাজার সৈয়দ আজিজ হাবিব উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ট শ্রেণীর এক ছাত্রীকে দিয়ে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে মামলার ঘটনা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা চলছে। পারিবারিক বিরোধকে কেন্দ্র করে আপন ভাইকে ঘায়েল করতে প্রবাসী দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে মিথ্যা ধর্ষনের চেষ্টার অভিযোগ এনে মামলা দিয়ে হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার ব্যাপারে জানতে গতকাল সোমবার বিকেলে সরেজমিন ঘটনাস্থলে গেলে মিলে চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানাযায়, বিগত কয়েক বছর ধরে উল্লেখিত গ্রামের রুনু মিয়ার কুয়েত প্রবাসী দু’পুত্র সেলিম আহমেদ ও শাহিন আহমেদ এবং মাদ্রাসা শিক্ষক ইকবাল হোসেন, ২ কন্যা জোনাকী সুলতানা ও লিপি বেগমের মধ্যে জায়গা সম্পত্তি নিয়ে পারিবারিক বিরোধ চলে আসছিল। এরইমধ্যে সেলিম প্রায় ৯ বছর ও শাহিন প্রায় ৬ বছর ধরে কুয়েতে বসবাস করে আসছেন এবং তাদের ছোট ভাই মাদ্রাসা শিক্ষক ইকবাল বাড়ি-ঘর দেখবাল করে। এক পর্যায়ে সেলিম ও শাহিন বিয়ে করে আলাদা হয়ে যায়। বিয়ের পর থেকে তারা ইকবালকে পৈতিৃক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার পায়তারা করেন। এনিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। সম্প্রতি সেলিম আহমেদ কুয়েত থেকে দেশে আসলে বিরোধ চরম আকার ধারন করে। সেলিম একাধিক মামলা দায়ের করেন। প্রবাসী দুই ভাই মাদ্রাসা শিক্ষক ইকবালকে ফাঁসাতে নানা ষড়যন্ত্র শুরু করে। অভিযোগ উঠেছে, তাদের পাশের বাড়ির জনৈকা স্কুল ছাত্রীকে বাদি করে ইকবাল হোসেনের উপর ধর্ষনের চেষ্টার অভিযোগ তুলে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। কিন্তু মামলার এজাহার ও এ প্রতিবেদককে দেয়া মামলার বাদী এবং ভিকটিমের বক্তব্যে কোন মিল পাওয়া যায়নি। বিশেষ করে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে ওই ছাত্রী স্কুল ছুটির পর বাড়ীর উদ্দেশে রওয়ানা দেয়। পথিমধ্যে ৪ টা ১৫ মিনিটে ইকবাল ও রাজু ওই ছাত্রীকে জোড়পূর্বক মুখে চেপে ধরে টানা হেচরা করে বসত ঘরে নিয়া ধর্ষণের চেষ্টা করে। কিন্তু সরেজমিনে গেলে প্রতিবেশিরা জানান, ওই দিন এ ধরনের কোন ঘটনাই ঘটেনি এছাড়া মাদ্রাসা শিক্ষক ইকবাল ও রাজু ওই সময় বাড়িতে ছিল না বলেও তারা জানান তবে ওই সময় ইকবালের বাড়িতে বেশ কিছু লোকজন ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে দেখেছেন বলে তারা জানান। এদিকে ভিকটিম ও ভিকটিমের পিতা আবুল কালাম দৈনিক সময়ের সাথে আলাপকালে বলেন, তার মেয়ে স্কুল থেকে বাড়িতে আসার পর স্কুল ড্রেস পরিবর্তন করে সাড়ে ৪ টার পরে ইকবালের বাড়ির পাশে হাঁস আনতে গেলে এ ঘটনা ঘটে। এদিকে, ইকবালের পাশের ঘরেই থাকেন সেলিম ও তার পরিবার। এ বিষয়ে সেলিম আহমেদের স্ত্রী ফৌজিয়া আক্তার রিতার সাথে আলাপকালে তিনি জানান, ইকবালের পাশের ঘরেই তারা থাকেন। ঘটনার সময় তিনি রুমের ভিতরে ছিলেন তাই কোন কিছু দেখেননি। শুধু শুনেছেন। অথচ ভিকটিমের পিতা আবুল কালাম কথাবার্তার এক পর্যায়ে জানান, তার পাশের ঘরের প্রবাসী সেলিমই তার ভাই ইকবালের বিরুদ্ধে মামলাটি করিয়েছেন। উল্লেখ্য, সেলিম আহমেদের বোন জোনাকী সুলতানা জানান, গত ০৭ আগষ্ট তিনি নিজে বাদি হয়ে অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত (কগ-২) হবিগঞ্জে সেলিম আহমেদ এবং ওই ছাত্রীর পিতা কালাম মিয়ার পুত্র রুবেল মিয়া, শ্যালক বাবুল মিয়া এবং পাশের বাড়ির দুরুদ মিয়াকে তার মামলায় আসামী করায় তার ভাই সেলিম আহমেদ ক্ষিপ্ত হয়ে কালাম মিয়াকে আর্থিক সহযোগিতা করে তার অবুঝ শিশু মেয়েকে দিয়ে এধরনের ঘৃন্য মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন। প্রতিবেশী এক বৃদ্ধ মহিলা জানান, ঘটনাটি সর্ম্পূর্ণ মিথ্যা। পূর্ব বিরোধের আক্রোশে তার আপন ভাই ইকবালকে ফাঁসাতেই এমন নাটক সাঁজিয়েছে সেলিম ও শাহিন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকেই জানিয়েছেন, যে সময় ঘটনার কথা মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে ওই সময়ে ইকবাল ও রাজু বাড়িতেই ছিল না। এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস.আই মোঃ দেলোয়ার হোসেনের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তাদের মধ্যে পারিবারিক বিরোধ রয়েছে। এছাড়া মেয়েটির বয়সও কম। তদন্ত চলছে। গতকাল সোমবার ভিকটিম ফাতেমা আক্তার বিজ্ঞ ম্যাজিট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছে বলেও তিনি জানান।


     এই বিভাগের আরো খবর