,

মাননীয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি

জনাব,
আমাদের সশ্রদ্ধ সালাম নিবেন। নির্ভয়ে কয়েকটি কথা আপনার সদয় অবগতির জন্য পেশ করতে চাই। আমাদের বক্তব্য অন্যভাবে নিবেন না। সেজন্য আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আপনার দৃষ্টিগোছর করার দ্বিতীয় কোন মাধ্যম না পেয়ে এই চিঠিখানা লিখতে বাধ্য হয়েছি। আসন্ন সাধারণ নির্বাচন খুবই কাছে চলে এসেছে আর সেজন্য নানাভাবে বিভিন্ন দাবী দাওয়া, আন্দোলন কর্মসূচিও চলছে। কোটা সংস্কারের আন্দোলন, দলমত নির্বিশেষে ছোট ছোট ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলনে সন্ত্রাসীরা ছাত্র পরিচয়ে ছোট ছোট ছাত্র-ছাত্রীদের নির্বিচারে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। এমতাবস্থায় আমাদের এই জাতীর ভাগ্যে কি আছে মহান আল্লাহই তা ভাল জানেন। আমরা প্রবাসীরা মনে করি আপনার জন্য এই পরিস্থিতি মোটেই কল্যাণকর নয়। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাকে নিরাপদ রাখার জন্য বর্তমান এই অপরাজনৈতিক ডামাডোল থেকে বেড়িয়ে এসে এখনই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর সেজন্য আমরা প্রবাসীরা কিছু পরামর্শ দিতে চাই। আর তা হলো অভিলম্বে নির্বাচনী সিডিউল ঘোষনা করুন, নির্বাচন সঠিকভাবে করার জন্য সহায়ক সরকার গঠনের লক্ষে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে সৎ, নির্লোভী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে নিয়ে একটি ছোট-খাটো সরকার গঠন করতে পারেন। আর সেই সরকারের প্রধান হবেন আপনী। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বা দলের বাইরের কিছু দেশ প্রেমিক উদারপন্থী লোকদের দিয়ে একটি অস্থায়ী সরকার গঠন করে নির্বাচন পরিচালনা করতে পারেন। আপনি চাইলে আমরা কিছু ব্যক্তির নামও উল্লেখ করতে পারি। যেমন-বিএনপি থেকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ডঃ মোশারফ হোসেন, এলডিপির চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্ণেল অলি আহমেদ এবং আপনার দল থেকে মতিয়া চৌধুরী, শেখ মনির ছেলে শেখ তাপস সহ আরও কিছু আদর্শবান সৎ ব্যক্তি, কমিউনিষ্ট পার্টি থেকে মোজাহিদুল ইসলাম, জাসদ থেকে হাসানুল হক ইনু, নজিবুল ইসলাম মাইজভান্ডারী, ডঃ জাফর উল্ল্যাহ চৌধুরী, সুলতানা কামাল, ডঃ কামাল হোসেন, কাদের ছিদ্দিকী প্রমূখদেরকে নির্বাচনকালীন মন্ত্রী সভায় যোগ দিতে আহ্বান করতে পারেন। আমরা প্রবাসীরা আপনাকেই দেশের কল্যানের জন্য প্রধানমন্ত্রী করার লক্ষে সব ধরনের সহযোগীতা করতে চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার দলের শীর্ষ পর্যায়ে মুসতাকের মতো কিছু বিভীষণ রয়েছে এদেরকে দূরে রাখুন। কোন অবস্থাতেই নির্বাচনকালীন সরকারে স্থান দেবেন না। দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ প্রেমিকদের মূল্যায়ন করুন। নমিনেশনের জন্য এ পর্যন্ত যেসব প্রার্থীদের নাম চুরান্ত করেছেন তাদের নাম ঘোষনা করে প্রত্যেকের নির্বাচনী এলাকায় ভোটের জন্য নামিয়ে দিন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, নির্বাচনের আগে ঢাকার বাইরে বেশী সফর করা অনিরাপদই মনে হচ্ছে। কারণ এ পর্যন্ত ন্যায্য হউক আর অন্যায্য হউক সবকটা আন্দোলনের পিছনে আপনার সরকারের বিরুদ্ধে কিছু চিহ্নিত অশুভ শক্তি অৎপেতে বসে আছে। এরা যে কোন সময় বড় ধরনের দূর্ঘনা ঘটাতে পারে। মানুষ রূপী সয়তানগুলো একের পর এক ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। আর তাই আপনাকে খুব বেশী সর্তক থাকা একান্ত প্রয়োজন মনে করি। আপনি জ্ঞানী এবং রাজনৈতিক অভিজ্ঞ, আপনাকে উপদেশ দেওয়ার যোগ্যতা আমাদের নাই। একমাত্র আপনি পারেন দেশ বিরোধীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে। জাতির পিতা বলে গেছেন, বাঙ্গালী জাতির সবকিছু স্পেশাল, কিন্তু নেগেটিভ আমল রয়েছে যা অন্য জাতির মধ্যে তা নেই। ১৯৫২, ১৯৬৯ ও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় সেই নেগেটিভ আমল থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছিলাম বলে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিলাম কিন্তু যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে সে বিজয় ধরে রাখা যায়নি। সুদূর লন্ডনে আমাদের পাশেই শফিক রেহমান নামে একটা আস্ত শয়তান রয়েছে। বাংলাদেশের লক্ষ যুবকদের বিপথে নিয়ে গেছে। এমনকি আপনার সন্তান জয়কে হত্যার জন্য জাল পেতে রেখেছে। তার সাথে আমরা তর্কযুদ্ধে নেমেছিলাম। বঙ্গবন্ধু ও আপনার বিরোধীতা করার একটি কারণ হচ্ছে বঙ্গবন্ধু তাহারই পিতার ছাত্র ছিলেন, কিন্তু কোন মূল্যায়ন না পাওয়ায় শফিক রেহমান বঙ্গবন্ধুর শিক্ষকের সন্তান হিসাবে বিভিন্ন সুেেযাগ সুবিধা নিতে চেয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু মাতালদের দু’চোখে দেখতে পারতেন না। আর সেজন্য সুবিধা করে উঠতে পারেনি বিধায় বিরোধীতা করছে। বঙ্গবন্ধু সেন্ট্রাল লন্ডনে একটি বিরাট বড় রেষ্টুরেন্টে বক্তব্য দেওয়ার সময় তৎকালীন প্রবাসী যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের একজন প্রয়াত নেতাকে মদ খেতে দেখে বঙ্গবন্ধু প্রচন্ড রেগে যান এবং তাকে বের করে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এই ক্ষুদ্র পরিষরে সব কিছু লিখা যায়না। আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী সস্প্রতি যেভাবে অসৎ ও লোভী সংসদ সদস্যদের আর নমিনেশন না দেওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন তা আমরা প্রবাসীরা সমর্তন করি। আরও ভাল হয় বঙ্গবন্ধু যেভাবে ১৯৭৪ সালে দুর্নীতিবাজ আওয়ামীলীগ সংসদ সদস্যদের দল থেকে বের করে দিয়ে ছিলেন ঠিক তেমনিভাবে আপনি আর দেরী না করে দূর্নীতিবাজ এমপি মন্ত্রীদের দল থেকে বের করে দিন। আগষ্ট মাস জাতির শোকের মাস। বাঙ্গালী জাতি আজ শোকে আচ্ছন্ন। আর সেজন্য দুঃখ ভরাক্রান্ত হৃদয়ে বলতে চাই যেভাবে সময় চলে যাচ্ছে আপনার সরকার খুনী কর্ণেল নুরকে কানাডা থেকে ধরে আনা সম্ভব হবেনা। সময় থাকতে কাজ না হলে অসময়ে কিছুই করা যাবেনা। যদি কিছু না করতে পারেন অন্তত শোকের মাসে খুনী নুরকে কানাডার জেলে আমৃত্য কারাবরণের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করেন। যাই হোক আমরা বাঙ্গালী জাতি কখনও শীর্ষে উঠে যাই আবার পরক্ষণে নিচে নেমে আসি। সমুদ্রে সাতার দিতে গিয়ে এমন দূরত্বে চলে যাই যে ঢেউয়ের সাথে লড়াই করে তীরে আসা আর হয়না। আপনি এই জাতিকে রশি দিয়ে টেনে তীরে নিয়ে আসার জন্য সর্বচেষ্টা করে যাচ্ছেন আর দুষ্টলোকেরা দা খুন্তি নিয়ে পানিতে ডুবে এই রশি কেটে দেওয়ার ধান্ধায় আছে। এদের প্রচেষ্টা যেন সফল না হয় এই প্রার্থনা করি। পরিশেষে বাউল সম্রাট আব্দুল করিমের গানের দু’টি লাইন দিয়ে শেষ করবো “ভাবছে করিম দীনহীন আসবে কি আর সেই শুভদিন, জলছাড়া কি বাঁচেরে মীন ডুবলে কি ভাসে মরা”। আল্লাহ আপনার এবং আমাদের সকলের সহায় হউন।
দেওয়ান কাইয়ুম
লেখক, গবেষক এবং প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, স্বাধীনতা ফাউন্ডেশন ও প্রবাস ফাউন্ডেশন, যুক্তরাজ্য।
হারুন রাজা চৌধুরী,
ভাইস চেয়ারম্যান, স্বাধীনতা ফাউন্ডেশন ও প্রবাস ফাউন্ডেশন, যুক্তরাজ্য।


     এই বিভাগের আরো খবর